অসাধারণ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। অসংখ্য গাছপালা, জলাশয়, বাহারি ফুল আর অনিন্দ্যসুন্দর প্রজাপতিরা এই বিশাল ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহু গুনে। এ সৌন্দর্য যেন প্রত্যাশাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। যা শুধু সৌন্দর্য প্রিয় মানুষ নয়, আকৃষ্ট করে পাখিদেরও।
তাইতো প্রতি বছর ডানায় ভর করে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে অতিথি পাখিরা এ অভয়ারণ্যটিকে বেছে নেয় নির্বিগ্নে।
এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বছর না ঘুরতেই আবারো ক্যাম্পাসের জলাশয় গুলোতে বহুকাঙ্খিত অতিথি পাখিরা আসতে শুরু করেছে। অতিথি পাখিরা মূলত অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বরের প্রথম দিকেই ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করে। মার্চের শেষ দিকে তারা আবার নিজ নিজ দেশে ফিরে যায়।
এ স্বল্প সময়টুকুতে ক্যাম্পাসের জলাশয় গুলোতে তারা নির্ভাবনায় মেতে উঠে ডুব সাঁতার, চক্রাকারে উড়ে বেড়ানো, খোশ গল্প বা জলকেলীতে। দেখা মেলে জুটিবদ্ধভাবে নিজেদের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিতেও। পাখিদের দিনযাপনের নানা খুনসুটি বেশ উপভোগ্য দর্শকদের কাছে। এ সময়টাতে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, প্রিয়জনসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক ক্যাম্পাসে আসে অতিথি পাখিদের ডুঁবসাতার, জলকেলি দেখার জন্য।
ক্যাম্পাসের লেকগুলোতে দিনভর অতিথি পাখির অবিরত ডুবসাঁতার পাখি প্রেমীদের পুলকিত করে। পাখি প্রেমিদের এ মোহ ধরে রাখতে এবং লেকগুলোকে পাখিদের অভয়াশ্রমে পরিণত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শীতে ক্যাম্পাসে যেসব প্রজাতির পরিযায়ী পাখির সমারোহ দেখা যায় তাদের মধ্যে লেঁজা হাঁস, খুন্তে হাঁস, পিয়ঙ হাঁস, ভূঁতি হাঁস উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া শীতের পরিযায়ী পাখি ছাড়াও এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১৩০ প্রজাতির দেশীয় পাখি সারা বছর দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮০ হেক্টর জায়গায় বর্তমানে ১৮৯ প্রজাতির পাখি রয়েছে, যা বাংলাদেশে প্রাপ্ত পাখির প্রজাতিগুলোর প্রায় ৩০ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টাতেই এ বিশ্ববিদ্যালয়টি পাখিদের স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ, বনজ, ঔষধি উদ্ভিদ ও জলজ উদ্ভিদের সমারোহ ক্যাম্পাসটিকে পাখিদের আহার ও বসবাসের উপযোগী করে তুলেছে।
বিশিষ্ট পাখি বিশেষজ্ঞ ও প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. মোস্তফা ফিরোজ বলেন, জলবায়ু ও অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশে অপেক্ষাকৃত কম শীত পড়ে। উত্তর গোলার্ধের শীত প্রধান সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, জিনজিয়াং প্রভৃতি দেশ থেকে হাজার হাজার পাখি নাতিশীতোষ্ণ দেশসমুহে আসে। বাংলাদেশে আসে এর উল্লেখযোগ্য একটি অংশ। এদেশে আগত পাখিদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়য়ের লেক গুলোর বাস্তুসংস্থানের উপাদানে অতিথি পাখিরা খুব সহজেই তাদের খাবার সংগ্রহ করতে পারে। এ বছর ক্যাম্পাসের লেক গুল প্রথম দিকে আবর্জনায় ভরপুর ছিল কিন্তু পরে সেগুলো পরিস্কার করা হয়। এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এ বছর আরও বেশি পাখির আগমন হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অতিথি পাখিদের আগমন ইতিবাচক। পরিবেশ রক্ষা ও পাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসন পদক্ষেপ নিয়েছে।
shamim.kabir93@gmail.com