গভীর রাতে বাসায় গিয়ে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে জেল-জরিমানা দেওয়ার ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে সরকার। আজ রোববার দুপুরে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
এদিকে, ডিসি সুলতানা পারভীনসহ চারজনকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে তদন্ত কমিটি। তদন্তে প্রাথমিকভাবে তার কর্মকাণ্ডে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ওই ঘটনার তদন্ত করে ডিসির বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, ‘অধীনস্তরা বসের নির্দেশনায় কাজ করে। এ ক্ষেত্রে তারাও কোনো গাফিলতি করেছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে ডিসির কার্যক্রমে বেশকিছু অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। তাকে প্রত্যাহার করার বিষয়ে বেশকিছু প্রসিডিউর শেষ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘ডিসি প্রত্যাহার তো হবেনই। কর্ম অনুযায়ী তার শাস্তিও হবে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে কোনো রাখঢাক করা হবে না।’
কাউকে ছাড় দেওয়ার প্রশ্ন নেই জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। রাতে মোবাইল কোর্ট করা যায় কিনা, এ নিয়ে অসঙ্গতি আছে। এর অপব্যবহার যেন না হয় সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে দায়িত্বশীলদের।’
এদিকে, রোববার সকাল পৌনে ১১টার দিকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জামিনে মুক্তি দেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের এই জেলা প্রতিনিধিকে।
এদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাজার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুজাউদ্দৌলার আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আপিল ও জামিনের আবেদন করেন রিগ্যান। সকাল পৌনে ১১টার দিকে শুনানি শেষে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুজাউদ্দৌলা ২৫ হাজার টাকা জামানতে তার আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন ও কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবিব নিলুর জিম্মায় তাকে জামিন দেন। এর কিছুক্ষণ পরই কুড়িগ্রাম জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে। তার কাছ থেকে ৪৫০ গ্রাম দেশি মদ ও ১০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে বলে অভিযোগ আনা হয়। এরপর গভীর রাতে জেলা প্রশাসকের অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করতে চেয়েছিলেন। আরিফুল এ বিষয়ে নিউজ করার পর থেকেই তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন ডিসি। এ ছাড়া সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে রিপোর্ট করতে চেয়েছিলেন সাংবাদিক আরিফ। জানতে পেরে জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে তাকে বেশ কয়েকবার ডেকে নিয়ে সতর্ক করা হয়।
তবে এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।