নতুন করোনাভাইরাস কোভিড ১৯-এর সঙ্গে লড়ছে পুরো বিশ্ব। আর ভয়াবহ এই রোগে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার লড়াইয়ের কৌশল আবিষ্কারের দাবি করেছেন অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানীরা।
মঙ্গলবার এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গবেষণা পত্রিকা নেচার মেডিসিনে।
বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, নেচার মেডিসিনে প্রকাশিত প্রবন্ধে বলা হয়েছে, সাধারণ ফ্লু আক্রান্ত হলে মানুষে যেভাবে সুস্থ হয়ে উঠে একই প্রক্রিয়ায় করোনাভাইরাস থেকেও সেরে উঠছে।
আর এই ভাইরাসে শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার কোনো কোষগুলো সক্রিয় ভূমিকা নেয়, তা খুঁজে পেলে এর প্রতিষেধক তৈরি সহজ হবে। অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানীদের নতুন এ ফল আশ্বস্ত করেছে গবেষণারত অন্য বিজ্ঞানীদের। মেলবোর্নের পিটার ডোহার্টি ইনস্টিটিউট ফর ইনফেকশন অ্যান্ড ইমিউনিটি পরিচালিত এ
গবেষণাকে অনেকেই ‘ব্রেক–থ্রু’ হিসেবে বর্ণনা করছেন। এই গবেষণা আরও এগিয়ে নিতে প্রতিষ্ঠানটিকে নতুন করে আর্থিক তহবিল দিয়েছেন অস্ট্রেলীয় সরকার ও চীনের ধনকুবের জ্যাক মা।
গবেষক দলটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ক্যাথেরিন কেডজিয়েরস্কা বলেন, আবিষ্কারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ গবেষণার মাধ্যমে আমরা বুঝতে শুরু করেছি শরীর করোনাভাইরাসের সঙ্গে কীভাবে লড়াই করে।
বৈশ্বিকভাবে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৬৫ দেশের ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে সাত হাজারের বেশি মানুষ। আক্রান্ত মানুষের একটি বড় অংশই সেরে উঠছে।
প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানীরা শরীরের চারটি প্রহরী কোষকে শনাক্ত করেছেন, যা নতুন করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে। এই কোষগুলোকে শনাক্তের জন্য বিজ্ঞানীরা মাঝারি মাত্রায় আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণ করেন।
যার আগে অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস নেই। অস্ট্রেলিয়ার এক হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া চীনের উহানের ৪৭ বছর বয়সী ওই আক্রান্ত নারী ১৪ দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে ওঠেন। গবেষকরা জানান, চিকিৎসাকালে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের পুরো দল ওই রোগীর শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা কীভাবে সাড়া দিচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করেন।
ওই নারীর শরীরের উন্নতি হতে শুরু করার তিন দিন আগে থেকে তার রক্তে বিশেষ কিছু কোষের উপস্থিতি দেখা যায়। ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রেও সেরে ওঠার আগে আগে একই ধরনের কোষের আবির্ভাব দেখা যায়।
অধ্যাপক ক্যাথেরিন কেডজিয়েরস্কা বিবিসি অনলাইনকে বলেন, ‘পর্যবেক্ষণের এই ফল আমাদের ভীষণভাবে আবেগাপ্লুত করে। চার সপ্তাহ ধরে আমরা একটানা কাজ করেছি।’
সোয়াইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের ডিন ব্রুস থমসন বলেন, ‘ভাইরাসটি মোকাবেলায় শরীরের প্রহরী কোষের সক্রিয় হওয়ার ক্ষণ নির্ধারণের মধ্য দিয়ে এর গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে অনুমান করা সম্ভব। শরীর কখন সাড়া দিচ্ছে, জানলে ভাইরাসটি থেকে মুক্তি কতদূরে তা জানা যাবে।
এই অগ্রগতির বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী গ্রেগ হান্ট জানান, এই আবিষ্কার ভাইরাসটির প্রতিষেধক খুঁজে পেতে সহায়তা করবে।
সানবিডি/এনজে