বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ পরীক্ষার সহজ ও স্বল্পমূল্যের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আজ বুধবার একটি অনলাইনকে বলেন, ‘এটা সত্যি ঘটনা। এটা ভিন্ন পদ্ধতি। এর নাম হলো: র্যাপিড ডট ব্লট।’
ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে ড. নিহাদ আদনান, ড. মোহাম্মদ রাশেদ জমিরউদ্দিন ও ড. ফিরোজ আহমেদ এই পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, ‘ব্লাড গ্রুপ যে পদ্ধতিতে চিহ্নিত করা হয় এটা মোটামুটি সে রকমের একটি পদ্ধতি। ২০০৩ সালে যখন সার্স ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল তখন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল সিঙ্গাপুর গবেষণাগারে কয়েকজন সহকারীকে নিয়ে সার্স ভাইরাস দ্রুত নির্ণয়ের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ‘র্যাপিড ডট ব্লট’ পদ্ধতিটি ড. বিজন কুমার শীলের নামে পেটেন্ট করা। পরে এটি চীন সরকার কিনে নেয় এবং সফলভাবে সার্স মোকাবেলা করে।’
‘তারপর তিনি সিঙ্গাপুরেই গবেষণা করছিলেন ডেঙ্গুর ওপরে। গবেষণা চলাকালে তিনি দুই বছর আগে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগ দেন। আমাদের এখানে যখন যোগ দিলেন তখন তিনি ডেঙ্গু নিয়ে কাজ করছিলেন।’
‘যখন গত বছরের ডিসেম্বরে নতুন করোনাভাইরাস দেখা দিলো তখন তিনি আমাদের বললেন, ‘এটা (নতুন করোনাভাইরাস) হলো সার্সের রূপান্তরিত রূপ। এটা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবে। উনি এটা বুঝতে পেরেছিলেন। তখন আমরা কেউ চিন্তা করি নাই করোনাভাইরাস এমন হতে পারে। তিনি তখন বলেছিলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে আমাদের গবেষণা করা দরকার।’
‘উনি আমাদের গণবিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালের প্রধান বিজ্ঞানী। উনি সাভারে আমাদের ক্যাম্পাসে থাকেন। উনি গত দুই মাসে করোনার গবেষণা পারফেক্ট করেন।’
‘এই পদ্ধতিতে ৫ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে অত্যন্ত স্বল্পমূল্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা যাবে,’ বলেও জানান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
‘এটা করতে রিএজেন্ট লাগে। কেমিক্যাল রিএজেন্টগুলো সহজলভ্য না। এগুলো পাওয়া যায় সুইজারল্যান্ড, আমেরিকা ও ব্রিটেনে।’
‘এখন এটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরাই মার্কেটিং করতে যাচ্ছি। আমরা এর অনুমোদনের জন্যে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে আবেদন করেছি। তারা এর গুরুত্বটাই বুঝতে পারছে না। সাতদিন আগেই আমাদের অনুমোদন দিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। আজকে আমাদের প্রতিনিধি দল সেখানে গেছে। তাদের সঙ্গে মিটিং করছে। আজকে যদি আমরা অনুমোদন পেয়ে যাই তাহলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদনের জন্যে আগামী সপ্তাহে ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়ে দিবো।’
‘প্রচলিত কিট যেটা ব্যবহৃত হচ্ছে সেটা খুবই ব্যয়বহুল। এর জন্যে একটা দামি যন্ত্র প্রয়োজন হয়। সেই যন্ত্র সব মেডিকেল কলেজে নেই। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে তিনটা আছে। সারাদেশে এই যন্ত্র খুব বেশি নেই। আইইডিসিআরের কাছে একটা যন্ত্র আছে। এ কারণে তারা এখন পর্যন্ত মাত্র ২৬৮ জনের করোনা পরীক্ষা করতে পেরেছে। অথচ আমাদের পরীক্ষা করা উচিত ছিল হাজার-হাজার।’
‘ড. বিজন ও তার দলের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে ৩৫০ টাকায় ১৫ মিনিটে করোনা শনাক্ত সম্ভব’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে মাত্র ৫ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে বলে শনাক্ত করা যাবে করোনা সংক্রমণ হয়েছে কি না। এতে খরচ পড়বে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার মতো। সরকার যদি এর ওপর ট্যাক্স-ভ্যাট আরোপ না করে তাহলে আমরা ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বাজারজাত করতে পারব।’
‘তবে সবকিছু নির্ভর করছে সরকারের মর্জির ওপরে। ডেঙ্গু টেস্টের যেমন মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল করোনা টেস্টেরও যদি মূল্য নির্ধারণ করে দেয় তাহলে জনগণ স্বল্প মূল্যে সেবা পাবে। মূল্য নির্ধারণ না করে দিলে যে যার যার মতো টাকা নিবে।’
‘আমরা মাসে এক লাখ কিট সরবরাহ করতে পারব। তবে সবকিছু ঠিক থাকলে প্রাথমিকভাবে এই মাসে ১০ হাজার কিট সরবরাহ করতে পারব।’
‘আরও একটি খুশির সংবাদ হলো: আমেরিকার একটি সংস্থা আমাদের জানিয়েছে তারাও আমাদের উদ্ভাবিত এই ‘র্যাপিড ডট ব্লট’ উৎপাদন করবে। এ কথা তারা ড. বিজনকে তারা জানিয়েছে,’ যোগ করেন ডা. জাফরুল্লাহ।
গবেষণা দলের সদস্য ড. নিহাদ আদনান বলেন, ‘অনুমোদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ড. বিজন কুমার শীল ও ড. মহিবুল্লাহ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে গিয়েছিলেন। অনুমোদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন। সাধারণত এ ধরনের অনুমোদন একটু সময় সাপেক্ষ। তবে জাতীয় স্বার্থের গুরুত্ব বিবেচনায় আমরা আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে অনুমোদন পেয়ে যাবো।’ সূত্র: ডেইলি স্টার
সানবিডি/ঢাকা/এসএস