বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যশস্যের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। জনসাধারণ তাদের প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী স্বাভাবিক পরিমাণে বাজার থেকে ক্রয় করতে পারছেন। এছাড়াও বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ ও মজুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তাই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পণ্য ক্রয় করে অযথা বাজার অস্থির করবেন না।’
বুধবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি। এসময় বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিনসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ায় জনগণ আতঙ্কিত হয়ে গেছেন। তারা হঠাৎ করে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পণ্য কিনছেন। তাই গত দুদিনে খুচরা বাজারে দামে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে পাইকারি বাজারে দাম বাড়েনি।’
প্রত্যেকটি পণ্যের যথেষ্ট মজুদ আছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘কোনো পণ্য মজুদ বা সরবারাহ কম নেই। সুতরাং অতিরিক্ত পণ্য কিনে অহেতুক বাজারে অস্থিরতা তৈরি করবেন না।’
এ সময় সাংবাদিকরা নিত্যপণ্যের চাহিদা ও মজুতের পরিমাণ জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দেয়া হয়।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে দেশে ৩ কোটি ৮৭ লাখ মেট্রিক টন চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত অর্থবছরে চালের উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ৭৪ লাখ মেট্রিক টন। এছাড়া বর্তমানে সরকারিভাবে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন চালের মজুত রয়েছে। এতে বলা হয়, চালের বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায় এক বছর পূর্বে যে চালের প্রতিকেজির বাজারদর ছিল ৩৮ থেকে ৪২ টাকা বর্তমানে তা ৩৪ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এক বছর পূর্বে খোলা আটার প্রতিকেজির বাজারদর ছিল ১৭ থেকে ৩০ টাকা বর্তমানে তা ২৬ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গমের আমদানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বিগত অর্থবছরে সর্বমোট ৪৬ লাখ ৪৮ হাজার মেট্রিকটন গমের অমিদানি হয়েছে। আর এ বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গমের আমদানি হয়েছে ৩৫ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন এবং সরকারি পর্যায়ে মজুতের পরিমাণ ৩ লাখ ২৬ হাজার মেট্রিক টন।
১৮ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্যতেলের চাহিদার বিপরীতে চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ১৬ লাখ ৮৪ হাজার মেট্রিক টন। গত অর্থবছরে ভোজ্যতেলের মোট আমদানির পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিকটন। তাছাড়া মুল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, বর্তমানে সয়াবিনের বাজারদর ৮৮ থেকে ৯২ টাকা প্রতি লিটার যা বিগত এক মাসের তুলনায় কিছুটা বেশি। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা শুরু হবার কারণে কিছুদিনের মধ্যে দেশীয় বাজার দর কমে আসবে বলে আশা করা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চিনির বার্ষিক চাহিদা ১৮ লাখ মেট্রিক টনের বিপরীতে ইতোমধ্যে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ১১ লাখ ১ হাজার মেট্রিকটন। এছাড়া দেশে এবছর প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন চিনির উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিগত অর্থবছরে সারা বছর জুড়ে মোট আমদানির পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিকটন। তাই এখন পর্যন্ত চিনির আমদানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। এছাড়া বাজারদর বিগত এক মাসে প্রায় ১.৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও আমদানি ও মজুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় চিনির বাজারদর স্থিতিশীল থাকবে।
এসব পণ্য বাদে মশুর ডাল, পিঁয়াজ, রসুন, লবন ইত্যাদির বাজারদর বিগত একমাসে হ্রাস পেয়েছে অথবা স্থিতিশীল আছে। বিগত এক মাসে মশুর ডালের বাজারদর ৬.৯০ শতাংশ, পিঁয়াজের বাজারদর ৪৬.৯৪ শতাংশ এবং রসুনের বাজারদর ৫২.৭৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া লবনের বাজারদর অপরিবর্তিত রয়েছে।
বর্তমানে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যশস্যের সরবরাহ অবাধ ও স্বাভাবিক রাখতে সরকার যথাযথভাবে কাজ করছে। তাই চাহিদার তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত পণ্য ক্রয় করার প্রয়োজন নেই।
করোনাভাইরাসের কারণে আতঙ্কিত হয়ে পণ্য মজুদ করলে স্বাভাবিক বাজার পরিস্থিতি বিঘ্নিত হতে পারে। তাই আতঙ্কিত না হয়ে ক্রেতা হিসেবে স্বাভাবিক ক্রয় করলে কোনো ধরনের সঙ্কট তৈরি হবে না বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস