কলকাতার জনপ্রিয় লেখিকা অঞ্জনা বসু ভয়ঙ্কর করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে মাস্কের বদলে ‘হিজাব’ তথা ওড়নায় মুখ ঢেকে রাখতে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন। আউটলুক ইন্ডিয়াতে একটি নিবন্ধ লিখে তিনি তার এই অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
সেখানে তিনি লিখেছেন, আমার বাবা আমাকে বাইরে যাওয়ার সময় মাস্ক পরার কথা বলেন। তো আমি প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে ঘরে থাকা স্কার্ফ এবং দুপাট্টা দিয়ে হিজাবের মতো করে মুখ ঢেকে বাইরে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। আমি ভাবছিলাম, দিল্লির শাহীনবাগে আন্দোলনকারী মুসলিম নারীরা কি হিজাবকে এভাবে কাজে লাগানোর কথা ভেবেছে কখনো? সম্ভবত না।
প্রথমে একটি পলিস্টার স্কার্ফকে হিজাব বানিয়ে পরার পর আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। লেকের পাশ দিয়ে দুপাশে গাছের সারিওয়ালা ফুটপাত দিয়ে হাঁটা শুরু করেও আমি ঘরে ফিরে আসি।
এরপর একটি নীল সুতির ওড়না দিয়ে হিজাব বানিয়ে মুখ ও মাথা ঢেকে আমি রাশবিহারি এভিনিউ ধরে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। দিনটি ছিলো রবিবার। আমার মাথা ও মুখে হিজাব কিন্তু শরীরে ছিলো আঁটোসাটো পোশাক। ফলে লোকে আমার দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকাচ্ছিলো। আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছিলো এবং আমার ধর্ম নির্ণয় করার চেষ্টা করছিলো। সেসব আমি উপেক্ষা করেই সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলাম।
কিন্তু সমস্যায় পড়লাম যখন পাহারাদার কুকুরগুলো ঘেউ ঘেউ করে উঠলো। তার ভাবলো আমি হয়তো কোনো বাড়িতে বা ব্যাংকে ডাকাতি করতে যাচ্ছি। কুকুরগুলো কি সবসময়ই হিজাব দেখলে এমন করে? এরপর শিব মন্দিরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ও কয়েকটি কুকুর চেঁচিয়ে উঠলো। তবে ভাগ্যক্রমে কুকুরগুলো আমাকে কামড়াতে আসেনি।
এভাবে আমি যখন মাস্কের বিকল্প হিসেবে হিজাবকে একটি সমাধান হিসেবে দেখানোর মনোভাব নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছালাম আমার ১৫ বছরের ভাতিজা বলে উঠলো, ‘ওই দেখ! সে মুসলিম হয়ে গেছে!’
বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় আমি কুকুরের ভয়ে হিজাব না পরেই গেলাম। কিন্তু বাড়ির কাছাকাছি যাওয়ার পর আমি দেখলাম দুইজন পুরুষ আমার দিকে আসছিলো। একজন আরেকজনকে কি যেন বলছিলো। তিন মিটার দূরে থাকতেই তারা থেমে গেল। এবং আমি শুনতে পেলাম হতাশভঙ্গিতে একজন বলছে, ‘সে তার মুখের ঘোমটা খুলে ফেলেছে’!
সানবিডি/এনজে