করোনাভাইরাস আতঙ্কে গত কয়েকদিন ধরে পুঁজিবাজারে ভয়াবহ পতন হচ্ছে। এই পরিস্থিতি সামলাতে বিনিয়োগকারীসহ সবমহলে একটি অংশ বলছে লেনদেন আপাততো বন্ধ রাখা। অন্য একটি পক্ষ বলছে পুঁজিবাজার বন্ধ করাই সমাধান নয়। আর দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ লেনদেনের সময় কমিয়েছে এক ঘন্টা।
বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টদের একটি পক্ষ বলছেন, পুঁজিবাজার বন্ধ না করলে পতন ঠেকানো সম্ভব নয়। পুঁজিবাজারে সাপোর্ট দিয়েও পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। তাই পুঁজিবাজারকে কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখা দরকার। আরেটি পক্ষ বলছেন, বন্ধ করাই সমাধান নয়। অন্যদিকে সব দিক বিবেচনা করে ১৫ দিন পুঁজিবাজার বন্ধ রাখার অনুরোধ করেছে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিশোধের নেতারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্চেন্ট ব্যাংকের সিইও বলেন, পুঁজিবাজারকে এখন বন্ধ করে দেওয়া দরকার । তা না হলে যেভাবে আতঙ্কিত সেল হচ্ছে তা ক্রমান্বয়ে আরও বেড়ে যাবে। আমাদের দেশে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর কারণে পুঁজিবাজারে আতঙ্কিত সেল বেড়েছে। এটা শুধূ বাংলাদেশেই নয় বৈশ্বিকভাবে অর্থনীতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। কয়েক দিন আগে করোনাভাইরাসের আতঙ্কে বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে ব্যাপক পতনের জেরে আমেরিকা, ভারত ও পাকিস্তানের পুঁজিবাজার সাময়িক লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছিল। আমেরিকায় ১৫ মিনিট, ভারতে ৪৫ মিনিট এবং পাকিস্তানে ৪৫ মিনিট বন্ধ করা হয়েছিল শেয়ার কেনাবেচা।
ইউনাইটেড ফাইন্যান্সিয়াল ট্রেডিংয়ের সিইও ও পরিচালক হাসান জাবেদ চৌধুরী বলেন, পুঁজিবাজারের জন্য এখন যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা আরও ৫ বছর আগে থেকে নেয়া দরকার ছিলো। আমাদের জন্য কোন অল্টারনেটিভ মার্কেট করা হয়নি। বন্ড মার্কেট করা হয়নি। আমরা পুরোপুরিই ইকুইটি মার্কেটের উপর নির্ভর। অন্যদিকে আমাদের আরও কাজ করার সুযোগ ছিলো আরো আগ থেকেই। অন্য দেশে বিভিন্ন অপশন আছে আমাদের দেশে কিন্তু এটা নাই। তবে কাজ হচ্ছে ধীর গতীতে। আরো দ্রুত কাজ গুলো করলে বাজারের এ অবস্থা হতো না।
তিনি বলেন পুঁজিবাজার বন্ধ করা কোন সমাধান নয়। কারণ ২ ঘন্টা পরে হোক বা দুদিন পরে হোক বাজার তো খুলতে হবে। সমস্যা হলো যারা ক্রয় করেছে তারা করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে বিক্রি করছে। এটাই বাজারে প্রভাব ফেলছে। বর্তমানে শেয়ারের দর কমে অনেক নিচে চলে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছে ব্যাংকগুলো বাজারে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা তো আর এক দিনে সব টাকা বিনিয়োগ করবে না। ব্যাংকগুলো ক্রমান্বযে বাজারে বিনিয়োগ করবে। বিনিয়োগকারীদেরকে সে পযন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আতঙ্কিত হয়ে বিক্রি করলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে; আর লাভবান হবে কিছু নিদিষ্ট গোষ্ঠি।
মশিউর রহমান নামে এক সাধারণ বিনিয়োগকারী বলেন, আমরা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আমাদের সব হারিয়ে পথে বসেছি। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের নামে বাজার থেকে একটা শ্রেণী ফয়দা লুটে নিচ্ছে। যারা বলছে করোণা ভাইরাসের কারণে বাজার খারাপ হচ্ছে তাদের কাছে প্রশ্ন গত ১০ বছরে কোন ভাইরাসের কারণে বাজার খারাপ হয়েছে। তারা সাধারণ বিনিয়োগকারীদেরকে হাতিয়ে নেয়ার জন্য এখন করোনা ভাইরাসের কথা বলছে। তাই লুট কারীদের হাত থেকে পুঁজিবাজারকে রক্ষার সার্থে কিছু দিনের জন্য পুঁজিবাজার বন্ধ করা দরকার।
এদিকে, বর্তমান পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার ১৫ দিন বন্ধ রাখার দাবী জানিয়েছে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। সংগঠনটির এক জরুরী সভা শেষে গনমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা এ আবদেন জানিয়েছেন।
পুঁজিবাজারের ভয়াবহ পতনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে নেতৃবৃন্দ বলেন-দিন দিন এভাবে পতন হওয়ায় বাজার ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে চলে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ বিনিয়োগকারীদের শেষ পুঁজিটুকু চলে যেতে বসেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদয় হয়ে পুঁজিবাজার উন্নয়নের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো কে ২০০ কোটি টাকা করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে সার্কুলার জারি করেছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, ব্যাংকগুলো বিনিয়োগে না আসায় বাজারের দরপতন রোধ হচ্ছে না। পুঁজি হারিয়ে বিনিয়োগকারীরা আর্তনাত করছে। এদিকে সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই অবস্থায় ১৫ দিন পুঁজিবাজারের লেনদেন বন্ধ রাখার দাবী জানান তারা।
উল্লেখ,ঠিক একভাবে পুঁজিবাজারে পতন ঠেকাতে ফিলিপাইনে স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল (১৭ মার্চ) থেকে দেশটির পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
গত ৮ মার্চ থেকে দেশের শেয়ারবাজারে বড় পতন হচ্ছে। যাতে সর্বশেষ ৮ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৭৮১ পয়েন্ট বা ১৮ শতাংশ। এরমধ্যে ৯ মার্চ রেকর্ড ২৭৯ পয়েন্ট বা ৬.৫২ শতাংশ পড়েছিল। এমন পতনের দিনেই শেয়ারবাজার বন্ধ করা নিয়ে বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন উঠে। বিনিয়োগকারীরা সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারবাজার বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছে এবং বিনিয়োগকারীদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ২ সপ্তাহ বন্ধ রাখার জন্য ডিএসই কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করেছে। বুধবার ডিএসইর পরিচালোনা পর্ষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে পুঁজিবাজার সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১ টা ৩০ মিনিট পযন্ত লেনদেন হবে।