চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের প্রভাব পড়েছে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের পাইকারি বাজারে। বাড়তে শুরু করেছে চাল ও পেঁয়াজের দাম। কয়েকদিনের ব্যবধানে এখানে মোটা ও চিকন দুই ধরনের চালের দাম বেড়েছে। আর পাইকারিতে দুদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে ভারত থেকে পণ্য রফতানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এমন খবরের কারণে হিলির বাজারে চাল ও পেঁয়াজের দাম বাড়তির দিকে বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা।
শুক্রবার হিলির পাইকারি বাজার ঘুরে, গুটি স্বর্ণা জাতের মোটা চাল কেজিপ্রতি ৩৪ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। এক সপ্তাহের কম সময়ের আগেও এ জাতের চাল কেজিপ্রতি ৩২ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। স্বর্ণা জাতের চালের কেজি ৩৪ থেকে বেড়ে ৩৬ টাকায় উঠেছে।
চাল বিক্রেতা সুব্রত কুণ্ডু বলেন, পাইকারির তুলনায় খুচরা বাজারে চালের দাম বেশি বেড়েছে। পাইকারিতে যে চালের দাম কেজিপ্রতি ১-২ টাকা বেড়েছে, খুচরা বাজারে সে চাল বিক্রেতারা ৪-৫ টাকা বেশি রাখছেন। এটা নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং জোরদার করা জরুরি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী স্বপন কুমার বলেন, চালের দাম হঠাৎ করেই বাড়তে শুরু করেছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মোটা চালের। মূলত মিলাররা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন, এ কারণে বাজারে চালের দাম বেশি। মিলারদের দাবি, ধানের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে আমদানি বন্ধের আশঙ্কাও চালের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।
এদিকে মার্চের শুরুতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জের ধরে ভারত থেকে আমদানি শুরু হওয়ায় হিলি স্থলবন্দরের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছিল। তবে পরিস্থিতি দ্রুত বদলে গেছে। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে দেশটি পেঁয়াজসহ সব পণ্যের রফতানি বন্ধ করে দিতে পারে, এমন খবরে স্থানীয় বাজারে দুদিনে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৫ টাকা বেড়েছে।
হিলির পাইকারি বাজার ঘুরে, ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ মানভেদে সর্বোচ্চ ৪৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। দুদিন আগেও এ পেঁয়াজ মানভেদে সর্বোচ্চ ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। অর্থাৎ কমতির মুখে থাকা পেঁয়াজের দাম দুদিনেই কেজিতে ১৫ টাকা বেড়েছে।
স্থানীয় আমদানিকারক মোবারক হোসেন বলেন, ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়ায় ১৫ মার্চ থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পণ্যটির আমদানি শুরু হয়। ওইদিন থেকেই পেঁয়াজের কেজি ২৫-৩০ টাকায় নেমে আসে। তবে গতকাল খবর ছড়িয়ে পড়ে, করোনাভাইরাসের কারণে ভারত পেঁয়াজসহ সব ধরনের পণ্য রফতানি বন্ধ করে দিতে পারে। এমন খবরের জের ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে পেঁয়াজের চাহিদা বেড়ে যায়। হিলিতে বেড়ে যায় পেঁয়াজের বেচাকেনা। ফলে দুদিনেই পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৫ টাকা বেড়েছে।
স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি ফের বন্ধ হবে কিনা, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজও বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হবে। তবে এর পরের পরিস্থিতি আমরা এখনো জানি না। ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। দেশটির রফতানিকারকরাও আমাদের কিছু জানাননি।
এ বিষয়ে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রাফিউল আলম বলেন, এখন অনেকেই করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে পণ্য বেশি কিনছেন। এ সুযোগে কেউ যাতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে, সেজন্য বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। এপ্রিল থেকে রোজা শুরু হবে। তখন বাড়তি দামে পণ্য বিক্রির প্রবণতা দেখা দিতে পারে। এজন্য বাজার মনিটরিং আরো জোরদার করা হবে। ব্যবসায়ীদের পণ্যের মূল্যতালিকা টাঙানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।