করোনাভাইরাস। এক ভয়ঙ্কর নাম। পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ভাইরাসটি ত্রাস সৃষ্টি করেছে। প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, রাজা, বাদশাহদের ঘুম হারাম করেছে। লকডাউন হয়ে যাচ্ছে দুনিয়া। বাংলাদেশ কি এর বাইরে? মোটেই না। বরং বাংলাদেশ বড় ধরণের ঝুঁকিতে। ৬ লাখ মানুষ গত দু’মাসে বিদেশ থেকে এসেছেন।
এর বেশির ভাগই শহরে গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছেন। বিমানবন্দরে সামান্যতম চেকও হয়নি। হবেই বা কিভাবে? কিট সমস্যা শুরু থেকেই। বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের তিনটি যন্ত্র ছিলো, এর দু’টি দু’মাস ধরে ছিলো অকেজো। তাই বাংলাদেশে কত লোক আক্রান্ত হয়েছেন তা জানা কঠিন। এর মধ্যে অঘোষিত এক নিয়ন্ত্রণ। বলা যাবে না, কওয়া যাবে না। রাখতে হবে গোপন।
তাছাড়া আমরা অনেক দিন অন্য এক ঘোরের মধ্যে ছিলাম। একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি দরজায় কড়া নাড়ছে। এখন আমরা দরজা ভেঙে দৌঁড়াচ্ছি। বলছি, ভয় পাবেন না। আমরা মোকাবেলা করবোই। কিন্তু কি দিয়ে? খালি হাতে তো এই ভাইরাসকে ঠেকানো যাবে না। হাসপাতালগুলোতে কোন প্রস্তুতি নেই। ৯০ হাজার চিকিৎসক পরিচিত নন এই ভাইরাস সম্পর্কে। কোনো সচেতনতা নেই বললেই চলে। ভাইরাস থেকে দূরে থাকার জন্য অনেক সমালোচনার মুখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হলো। এই সুযোগে অভিভাবকরা ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ছুটলেন সমুদ্র সৈকতে। আঁতসবাজির নয়নাভিরাম চমক দেখতে। আবার এমনও আছেন ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে ফিরে বিয়ের কাজও সেরে ফেলেছেন। পরিণতিতে স্বামী-স্ত্রী শুধু আক্রান্ত হননি, এ বিয়ের অনুষ্ঠানে যারা হাজির ছিলেন তাদের অনেকেই এখন ঝুঁকিতে।
ভোটের কথাই বা কি বলবো? বাপের বেটা নির্বাচন কমিশন। সাহস দেখিয়েছে বটে! ভাইরাস তাদেরকে রুখতে পারেনি। হাস্যকর বটে যে, উপনির্বাচন- সেটা নিয়েই এতো মাতামাতি। যে নির্বাচন ক্ষমতা বদলাবে না। অসংখ্য মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেবে। বলাবলি আছে, হুকুম আসে নাই তাই তারা এতটাই বেপরোয়া। এই প্রতিবেদন যখন লিখছি, তখন সংবাদ মাধ্যমে দেখলাম ঢাকা-১০ এর একটি কেন্দ্রে দেড় ঘণ্টায় ভোট পড়েছে মাত্র একটি। তাতে কি? ভোট তো হলো। করোনাকে আমরা পাত্তাই দিলাম না। আর ওই যে বিরোধীদল- তিনদিন আগে অনুনয় বিনয় করেছিলো নির্বাচন স্থগিতের। কিন্তু তারা কথায় কথায় নির্বাচন বর্জন করলেও এক্ষেত্রে করেনি। কারণ, শ্রেণিচরিত্র একই। অথচ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে বলা হয়েছিলো, ভাইরাস ছড়াতে পারে ইভিএম-এর বোতাম টিপতে টিপতে।
দুনিয়া কি দেখলো? শ্রীলংকা করোনার কারণে জাতীয় নির্বাচন স্থগিত করে দিলো। আমরা আসলে এই ভাইরাসের ক্ষমতা সম্পর্কে একদম অজ্ঞ। টিভিতে একেকজন নীতি-নির্ধারকের বক্তব্য শুনে তাই মনে হয়। একজন বলছেন, ওসব কিছু না। আমরা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবো।
অদৃশ্য এই ভাইরাসটির ক্ষমতা কতটুকু তা বুঝতে পারছেন দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিমান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। অপর ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মূল্য দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। নরেন্দ্র মোদি, বরিস জনসন, জাস্টিন ট্রুডো, অ্যাঙ্গেলা মার্কেল, ইমানুয়েল ম্যাক্রোন প্রতিদিন প্রতিমূহুর্তে কথা বলছেন, জনগণকে জানাচ্ছেন আপডেট। আর আমরা যুগ্ম সচিব পদ মর্যাদার এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ওপর ছেড়ে দিয়ে বসে আছি। তিনি কি বলছেন নিজেও জানেন না। ফল হয়েছে জনগণ তার কথা শুনছে না। বিশ্বাস করছে না। রাজনীতি নিয়ে আমরা বড় বেশি মাতামাতি করি। বাঁচা-মরার লড়াইকে আমরা গুরুত্ব দিই না। আমলে নিই না। চোখ বুঁজে বসে থাকি। এই ভাইরাসের তো কোন রং নেই। রক্তের গ্রুপও নেই। যে কোন গ্রুপেই ঢুকে পড়ে। সত্য বললে নাকি আতঙ্ক ছড়াবে। তাই যদি হবে, তাহলে সব প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীরা এই পথই ধরতেন। জনগণ যদি আসলটা না জানতেই পারে, তাহলে সচেতন হবে কিভাবে? আসলে পেটের মধ্যে অন্য জিনিস লুকিয়ে ছিলো। এখন যখন বের হতে চলেছে, তখন আমরা চারদিকে অন্ধকার দেখছি। বাজার পরিস্থিতি মোটেই ভালো নয়। হুমকি-ধামকি দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যে সম্ভব নয়, এটা ইতিমধ্যেই খোলাসা হয়ে গেছে।
মানুষকে সত্যটা জানান। প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করুন। তা না হলে ইতালির চেয়েও পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। ইতালি শুরুতে রাখ-ঢাক করছিলো। নেট দুনিয়ায় দেখলাম একজন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ বলছেন, কোটি কোটি ভারতীয় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে আপনার বাড়িতে আঁচ লাগবেই।
মতি চৌধুরী
ঢাকা