তারল্য সংকট মেটাতে সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে সিকিউরিটিজ কিনবে বাংলাদেশ ব্যাংক
নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২০-০৩-২৩ ০৬:৪৫:৪০
কোনো ব্যাংক চাইলে বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণ বা এসএলআরের উদ্বৃত্ত ট্রেজারি বন্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে পারবে। এর বিপরীতে নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত সুদ পাবে ব্যাংক। কোনো ব্যাংক নগদ টাকার সংকটে থাকলে তাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রোববার এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিতভাবে সরকারি সিকিউরিটিজের বিপরীতে রেপো সুবিধা দিয়ে থাকে। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তারল্য ব্যবস্থাপনায় যাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়, সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয় জোরদারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ‘সহজে বিনিময়যোগ্য সম্পদ (এসএলআর)’ সংরক্ষণের পর অতিরিক্ত সরকারি সিকিউরিটিজ থাকলে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বাজারমূল্যে বিক্রি করতে পারবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগ সরকারি সিকিউরিটিজের সেকেন্ডারি মার্কেট উন্নয়নের পাশাপাশি মুদ্রানীতির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয় এবং প্রয়োজনে তা সেকেন্ডারি মার্কেটে বিক্রি করে। বাজারমূল্যে ওই লেনদেন করা হয়।
জানা গেছে, সার্কুলার জারির আগে রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পূর্বনির্ধারিত এ বৈঠকে করোনাভাইরাসের কারণে তৈরি হওয়া পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তের আলোকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত শনিবার করোনাভাইরাসের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি এবং করণীয় বিষয়ক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে মুদ্রানীতির মাধ্যমে অর্থনীতিতে টাকার সরবরাহ বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এ মুহূর্তে তার নীতিনির্ধারণী সুদহার কমিয়ে এবং ট্রেজারি বিল বা বন্ড কেনার মাধ্যমে অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহ বাড়াতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠকে কর্মকর্তারা বলেন, ঋণ চাহিদা না থাকায় এ মুহূর্তে ব্যাংক খাতে পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে। ব্যাংকগুলোর হাতে উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ এখন এক লাখ কোটি টাকার বেশি। তবে জানুয়ারি-জুন সময়ে কোনো গ্রাহক ঋণের কিস্তি না দিলেও তাকে খেলাপি না করার নির্দেশনার ফলে ঋণ আদায় বন্ধ থাকতে পারে। এ সময় কোনো ব্যাংক যেন নগদ টাকার সংকটে না পড়ে, সে লক্ষ্যে আগাম সতর্কতা হিসেবে বন্ড ‘বাইব্যাক’ করা যেতে পারে। এর মানে কোনো ব্যাংকের যদি এসএলআরের উদ্বৃত্ত বন্ড থাকে, ওই ব্যাংক তা বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা নিতে পারবে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনো একটি ব্যাংকের কাছে এক হাজার কোটি টাকার বন্ড রয়েছে। এখন সাড়ে ১৩ শতাংশ হারে এসএলআর সংরক্ষণের জন্য ওই ব্যাংকের দরকার ৭৫০ কোটি টাকা। আর বাকি ২৫০ কোটি টাকার বন্ড এসএলআরের উদ্বৃত্ত। উদ্বৃত্ত এ বন্ড হয়তো ব্যাংকটি ৯ শতাংশ সুদে ১০ বছর মেয়াদে কিনে সরকারকে ঋণ দিয়েছে। এরই মধ্যে যার মেয়াদ চার বছর পার হয়েছে। ব্যাংকটিকে এ বন্ড ভাঙাতে ছয় বছর অপেক্ষা করতে হবে। এখন ওই ব্যাংক চাইলে চার বছরের সুদসহ ওই বন্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে পারবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গত ডিসেম্বরভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর কাছে মোট তারল্যের পরিমাণ ছিল তিন লাখ ১০ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণের পরিমাণ ছিল দুই লাখ পাঁচ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। এ হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল এক লাখ পাঁচ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর এই উদ্বৃত্ত অর্থের বড় অংশই ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করা আছে। বর্তমানে ২, ৫, ১০, ১৫ ও ২০ বছর মেয়াদি বন্ড রয়েছে। আর স্বল্পমেয়াদি ৯১, ১৮২ ও ৩৬৪ দিন মেয়াদি বিল রয়েছে।
রোববারের বৈঠকে কেউ কেউ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমদানির সঙ্গে রপ্তানির এলসি কমলেও আগের রপ্তানির অর্থ আসছে। আবার রেমিট্যান্স প্রবাহও অব্যাহত আছে। ব্যাংকগুলোর হাতে প্রচুর ডলার রয়েছে। অনেক ব্যাংক উদ্বৃত্ত ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিক্রি করে দিচ্ছে। ডলারের বিপরীতে ব্যাংকগুলোতে টাকা দেওয়ায় টাকার সরবরাহ বেড়েছে। এ মুহূর্তে নীতি সুদহার কমানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া ঠিক হবে কিনা, তা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও টাকার সরবরাহ বাড়ানোসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি বিভাগের উদ্যোগে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।