চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আতঙ্কিত পুরো বিশ্ব। আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এই ভাইরাসের সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন ইতালিতে। এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ রোগে দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৭৭ জনের। আর সংক্রমিত হয়েছেন ৬৩ হাজার ৯২৭ জন। অথচ ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনে মারা গেছেন ৩ হাজার ২২৭ জন, আক্রান্ত হয়েছেন ৮১ হাজার ১৭১ জন।
বৈশ্বিক এই মহামারিতে ইতালিতেই কেন এত মানুষ সংক্রমিত হয়ে মারা যাচ্ছেন তার কিছু কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
কিন্তু কেন ইতালির এমন অবস্থা?
বিশেষজ্ঞরা এর পেছনের কারণ নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন। তারা মনে করছেন, ইতালির অভিজ্ঞতা বিশ্ববাসীর জন্য নতুন শিক্ষা নিয়ে এসেছে। ইতালির এমন পরিস্থিতির জন্য বেশকিছু বিষয়কে দায়ী করেছেন তারা।
ধীরে চলা নীতি
অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করেন ইতালি সরকার ধীরে ধীরে সারা দেশ লকডাউন করে, যা করোনাভাইরাসকে ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করেছে। এই ধীরে চলো নীতির কারণে ইতালির নাগরিকরা পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেননি।
অনেক শিল্প-কারখানায় শ্রমিকরা কাজ করেছেন। মহামারির প্রথম দিকে রাজনৈতিক নেতাদের ঢিলেঢালা মন্তব্য অনেক ক্ষেত্রেই বিষয়টিকে কম গুরুত্বপূর্ণ বলে উপস্থাপন করেছে।
ইতালির জনমিতি
ইতালি বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্কদের দেশের মধ্যে দ্বিতীয়। ইতালিতে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ৮৫ শতাংশ ব্যক্তিই ৭০ বছরের অধিক বয়সী বলে জানিয়েছে দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ৪৮ শতাংশই আক্রান্তের আগে কমপক্ষে তিনটি রোগে ভুগছিলেন।
গবেষণায় দেখা যায়, কোভিড-১৯ বয়স্ক এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের বেশিমাত্রায় দূর্বল করে তাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
স্বাস্থ্য-ব্যবস্থাপনা সংকট
ইতালি এমন পরিস্থিতির জন্য তৈরিই ছিল না। হাসপাতালের বিছানা ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটের কারণে স্বাস্থ্যকর্মীরা বাঁচার সম্ভাবনা যাদের বেশি তাদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে চিকিৎসা দেয়।
দুঃখজনকভাবে যারা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয় তাদের অধিকাংশই পরে মারা যায়। হাসপাতালে রোগীর উপচে পড়া ভিড়কে কোনোভাবেই ঠেকানো সম্ভব হয়নি। ফলে অনেক আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে ফেরত গিয়েছেন।
কোভিড-১৯ পরীক্ষার কিট সংকট
বিশ্বের বহু দেশের মতো ইতালিতেও করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিটের সংকট দেখা দেয়। ফলে সংক্রমিত অনেক ব্যক্তিকেই শনাক্ত করা ও আলাদা রাখা সম্ভব হয়নি। ইতালির উত্তরাঞ্চলের কনডঙ্গো হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান স্টেফিনো পাগলিয়া মনে করেন, সময়মত করোনাভাইরাস পরীক্ষা না করার কারণে করোনা শনাক্ত করা যায়নি।
ইতালিতে শুধুমাত্র কোভিড-১৯ এর লক্ষণ ও উপসর্গ যেমন জ্বর কিংবা শুকনো কাশি আছে এমন ব্যক্তিদেরকেই করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হতো।
তবে ইতালি নিয়ে এত গবেষণা-আলোচনার পরেও অনেকে মনে করেন আলোচিত কোনো কারণই এই মহামারির জন্য দায়ী নয়। চূড়ান্তভাবে কোনো কিছুকে দায়ী করার মতো যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত এখনো আমাদের হাতে নেই।
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়াসচা মৌক মনে করেন ইতালিতে করোনাভাইরাস মহামারির আসলে স্পষ্ট কোনো কারণই নেই!
সানবিডি/ঢাকা/এসএস