মরণঘাতী করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি জর্জরিত ছিল চীন। মৃত্যুর সংখ্যায় চীনকেও পেছনে ফেলে দিয়েছে ইতালি। মৃত্যুর আনুপাতিক হার দেখে মনে হচ্ছে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ইতালিকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে স্পেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়, করোনাভাইরাসে স্পেনে গত গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৬৮০ জন। এ নিয়ে করোনায় দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ২ হাজার ৯৯১ জনে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে স্পেনে ৬ হাজার ৯২২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৫৮ জন। এর মধ্যে ৩ হাজার ৭৯৪ জন সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন ।
স্পেনে বর্তমানে ৩৫ হাজার ২৭৩ জন আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে ২ হাজার ৬৩৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক; এদের অধিকংশই আইসিইউতে রয়েছেন।
ইতালির পর ইউরোপের যে দেশটিতে করোনাভাইরাস সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়েছে সেটি স্পেন। স্পেনে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা সামাল দিতে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্পেনজুড়ে বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বয়স্কদের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেছেন তারা।
স্পেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্গারিটা রবলস জনান, অভিযানের সময় সেনাবাহিনী দেখেছে, কিছু বয়স্ক ব্যক্তি বাড়িতে একেবারে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছেন। কখনো কখনো তাদের বিছানায় মরে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
স্পেনের মাদ্রিদ শপিং সেন্টারটি সাময়িকভাবে মর্গে পরিণত করা হয়েছে। বর্তমানে সে দেশের সেনাবাহিনী মরদেহ উদ্ধার হওয়া বাড়িগুলো জীবাণুমুক্ত করার কাজ করছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত মাদ্রিদের একটি হাসপাতালের ভিডিওতে দেখা যায়, হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে শত শত মানুষ বারান্দায়, ব্যালকনিতে কিংবা হাসপাতাল কক্ষের সামনে শুয়ে আছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই হাঁচি-কাশি দিচ্ছেন, অনেকেই অক্সিজেন নিচ্ছেন। এ ছাড়া আরও শত শত মানুষকে হাসপাতালের ওয়েটিংরুমে অপেক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে, যারা চিকিৎসা নেওয়ার জন্য মাদ্রিদের ওই হাসপাতালে এসেছেন।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে মূলত হিমশিম খাচ্ছে স্পেন। জাভিয়ার গার্সিয়া নামের এক হাসপাতাল শ্রমিক নেতা স্থানীয় দৈনিক এল মুন্ডকে বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগগুলোর ধারণক্ষমতার চেয়ে তিনগুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই শয্যা না পেয়ে মেঝেতে অথবা প্লাস্টিকের চেয়ারে ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বসে আছেন।’
এদিকে করোনাভাইরাসে ইতালিতে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৭৪৩ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮২০ জনে। মৃত্যুর সংখ্যায় চীনকে অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে ইতালি।
ইউরোপের আরেক দেশ ফ্রান্সেও হু হু করে বাড়ছে মৃত্যু সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় ফ্রান্সে করোনাভাইরাসে মারা গেছে ২৪০ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১০০ জনে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের কারণে ২২৫ জন মারা গেছে। এ নিয়ে দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৭৮ জনে। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সোয়া দুইশ মানুষের মৃত্যুতে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে।
মধ্যপ্রাচ্যেও লেগেছে করোনাভাইরাসের থাবা। মধ্যপ্রাচ্যের ইরানে এ ভাইরাসটি সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ ভাইরাসে ইরানের ১২২ জন মারা গেছে। এ নিয়ে করোনাভাইরাসে দেশটির মৃত্যু সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৩৪ জনে।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস