বাঙ্গালী জাতীর মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আজ। একাত্তরের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের ওপর অতর্কিত হামলা চালালে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত হয়। এ দিনে বিশ্বের বুকে স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বীর বাঙালি। সূচনা করেছিল সশস্ত্র সংগ্রামের।
গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতার ৪৯তম বার্ষিকীতে জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগী বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবে। তবে করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে এবার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানোর কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। জনসমাগম এড়ানোর জন্য বাতিল করা হয়েছে স্বাধীনতা দিবসের সব কর্মসূচি। সরকারের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলই তাদের কর্মসূচি বাতিল করেছে।
বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে বিজয় অর্জনের ইতিহাস শুধু একাত্তরেই সীমাবদ্ধ নয়, দীর্ঘ সংগ্রাম আর ত্যাগের ফসল। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের এক বছরের মধ্যেই রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আঘাত করে মাতৃভাষা বাংলার ওপর। শুরু হয় শোষণ-বঞ্চনার করুণ ইতিহাস। বিক্ষুব্ধ বাঙালির জাতীয় চেতনার প্রথম স্ফুরণ ঘটে ‘উর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’—১৯৪৮ সালে ঢাকায় জিন্নাহর এমন ঘোষণার প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে, যা বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি রক্তাক্ত পরিণতি পায়। ১৯৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট, ১৯৬৬-এর ৬ দফা, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭০-এর নির্বাচনে বিজয় ছিল জাতির আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। পাকিস্তানি শাসকচক্র ওই বিজয় প্রত্যাখ্যান করলে একাত্তরের ১ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ঘনিয়ে আসে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত হয় স্বাধীনতার অমোঘ বাণী, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মূলত সেদিনই মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়। কিন্তু বাঙালিকে স্তব্ধ করতে ২৫ মার্চ কালরাতে ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যায় মেতে ওঠে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা। মধ্যরাতে গ্রেফতার করা হলো বঙ্গবন্ধুকে। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতারের আগে মধ্যরাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে ধানমন্ডির বাসভবন থেকে আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
শুরু হয় হানাদারদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার চূড়ান্ত প্রতিরোধ লড়াই মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাস ধরে চলা বাঙালির মুক্তির এ যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ আর লুটপাটের কলঙ্কিত অধ্যায়ের বিপরীতে রচিত হয়েছিল ইতিহাসের আরেকটি মহান অধ্যায়। যার মধ্যে ছিল মুক্তিকামী বাঙালির অসম সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের বীরত্বগাথা। ১৭ এপ্রিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে গঠিত হয় স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী সরকার। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে আসে বিজয়। ১৬ ডিসেম্বর তত্কালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। এর মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে অভ্যুদয় ঘটে লাল-সবুজ পতাকার বাংলাদেশের।
সানবিডি/এনজে