করোনা ভাইরাসের কারনে সৃষ্ট মহামারী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব পরিমন্ডলের জন্য সবচাইতে কঠিন সংকট ।বিশ্বের বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তিগুলো পরাস্থ হয়েছে এ ভাইরাসে ।পৃথিবীর বিগত ৭৫ বছরের অর্থনৈতিক অর্জন করোনা মহামারীতে আজ হুমকির সম্মুখিন।এ মহামারীর পর বিশ্ব অর্থনীতির চিএ বদলে গেছে ।
করোনার কারনে সৃষ্ট মহামারীতে বিশ্বের মত বাংলাদেশের লাফিয়ে চলা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে থামিয়ে দিবে নিঃসন্দেহে । করোনা ভাইরাস বা কোভিড ১৯ এর কারনে সৃষ্ট মহামারী পরবর্তী বাংলাদেশের লাফিয়ে চলা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে চলমান রাখার জন্য সরকার ৭২ হাজার কোটি টাকার প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষনা করেছে । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে সাথে নিয়ে এ প্যাকেজ ঘোষনা করেন । বাংলাদেশ সংবিধানে মালিকানার ৩ টি খাত রয়েছে ।এই ৩ টি খাতের মধ্যে সমবায় অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন একটি খাত।এ খাতে প্রায় ১ কোটিরও অধিক লোক ওতোপ্রোতভাবে জড়িত ।দেশের ১ লক্ষ ৭৭ হাজার নিবন্ধিত সমবায় সমিতিগুলো বিভিন্ন ধরনের উৎপাদন বিপনন ও সেবা সংক্রান্ত কাজে জড়িত রযেছে।এ সকল সমবায় সমিতিগুলো কৃষি উৎপাদন ও বিপনন,মৎস্য উৎপাদন ও প্রসেসিং,দুগ্ধজাত পন্য উৎপাদন ও সমবায় দুগ্ধ ব্যবস্খাপনা,ক্ষুদ্র কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র ঝন বিতরন ও নানা ধরনের কাজের সাথে জড়িত ।করোনার কারনে সকল সেক্টরের ন্যায় এ খাত ও থেমে গেছে ।
নিবন্ধিত সমবায় সমিতিগুলো সাধারনত নিজেদের পুজি দিয়ে এ সকল কাজ বাস্তবায়ন করে থাকে ।দেশের সকল কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ সকল উৎপাদন ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে ।এই সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে লক্ষ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে কিন্তু আজ তারা দিশেহারা। করোনা মোকাবিলায় সরকারের ঘোষিত প্যাকেজ -২ এর আওতায় দেশের নিবন্ধিত ১ লক্ষ ৭৭ হাজার সমবায় প্রতিষ্ঠানকে অন্তরভুক্ত করনের জন্য জোড় দাবী জানিয়েছে । ঘোষিত প্যাকেজের আওতায় সমবায়ীদের সমবায় ব্যাংক ও মন্ত্রনায়ের আওতাধীন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ইন্টারমিডিয়ারী হিসেবে ভুমিকা পালন করতে পারে ।এছাড়াও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের নিজস্ব প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার ফান্ড রয়েছে যা বিভিন্ন ব্যাংকে এফ ডি আকারে জমা রয়েছে ।এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয় ভুমিকা রাখতে পারে।
এ মন্ত্রনালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ,সচিব ,সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক ,জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন ,সমবায় ব্যাংক , পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ও মিল্ক ভিটা একটি একটি সমন্নিত উদ্যোগ গ্রহন করলে সমবায় সমিতিগুলো করোনার কারনে সৃষ্ঠ মহা অর্থনৈতিক সমস্যা হতে উওরণ লাভ করতে পারবে। এ জন্য একটি সমন্বিতসুপারিশমালা তৈরী করে অর্থ মন্ত্রনালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর প্রেরন করলে সমবায় বান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী তা বিবেচনা করবে বলে সমবায়ীদের বিশ্বাস ।জাতির এ দুর্যোগে নিবন্ধিত সমবায় সমিতিগুলো তাদের কৃষি,মৎস্য,দুগ্ধ,ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প,মৃশিল্প,ক্ষুদ্রঝণ ও বিভিন্ন উৎপাদন ও সেবাধর্মী কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারবে ।আজকের এ প্যাকেজ ঘোষনা অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশীয় পন্য উৎপাদন ও ব্যবহারের গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
সমবায় প্যাকেজ-২: ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান- ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্পসুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদানের লক্ষ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা প্রণয়ন করা হবে। ব্যাংক-ক্লায়েন্ট রিলেশনসের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল হতে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ দেবে।
এ প্যাকেজের সুবিধা সমবায় সমিতিগুলো পেলে এ দেশের ২৯ ধরনের সমবায় প্রতিষ্ঠানসমুহ তাদের কৃষি,দুগ্ধ,মৎস্য,মহিলা,ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ও ক্ষুদ্রঝণ কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের জনগনকে সহায়তা করতে সক্ষম হবে ।
এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। ঋণের ৪ শতাংশ সুদ ঋণ গ্রহিতা শিল্প প্রতিষ্ঠান ও সমবায় প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে।এতে করে ব্যাংক ও স্টেকহোল্ডাররা লাভবান হবে।অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন সকল সেক্টরের লোকজন এ খাত হতে এই সুবিধা গ্রহন করতে পারবে।
সরকারের এ মহৎ উদ্দ্যোগের ফলে কিছুটা হলেও সকল সেক্টর লাভবান হবে ।সেইসাথে লাভবান হবে বঙ্গবন্ধুর সমবায় খাত ।
মো:আবুল খায়ের
ডেপুটি রেজিস্ট্রারার,সমবায় অধিদপ্তর
ট্রেজারার ,৩১ তম বিসিএস অল ক্যাডার এসোসিয়েশন