রাজধানীর অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে এক নারী রোগীকে যৌন নিপীড়নের চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। যৌন নিপীড়নের অভিযোগে হাসপাতালের সাইফুল ইসলাম নামে ব্রাদারকে (স্টাফ নার্স) চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাইফুলের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সোমবার ঘটনাটি ঘটলে বুধবার বিষয়টি জানাজানি হয়। মঙ্গলবার সাইফুলকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চাকরিচ্যুত করে।
জানা গেছে, ওই নারী রোগী ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। সোমবার সন্ধ্যায় অপারেশন হওয়ায় তিনি অজ্ঞান ছিলেন। এ সুযোগে হাসপাতালের ব্রাদার সাইফুল ইসলাম তাকে যৌন নিপীড়ন করেন। ওই রোগী সাংবাদিকদের বলেন, তিনি অজ্ঞান ছিলেন। হঠাৎ জ্ঞান ফিরে দেখেন, তার বুকসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় একটি হাত বুলাচ্ছে। একই সঙ্গে তার শরীরের কাপড় (চাদর) সরাচ্ছে। তিনি তাকিয়ে দেখেন ওই হাত একটা ছেলের। তিনি ওই ছেলের মাধ্যমে নার্সদের ডাকার চেষ্টা করেন। প্রায় আধা ঘণ্টা পর নার্স আসেন। নার্স এসে তাকে (নারী) ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং তার স্বামীকে না জানাতে অনুরোধ করেন। একপর্যায়ে ওই নারী স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও তাকে দেখা করতে দেয়া হয়নি। যৌন নিপীড়নের শিকার ওই নারীর স্বামী বলেন, প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর তিনি স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারেন। অভিযুক্ত ওই ব্রাদার সাইফুলকে পুলিশে সোপর্দ করার জন্য বলেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারণে সাইফুলকে পুলিশে দিতে রাজি হয়নি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বারবার তাকে (নারীর স্বামী) মামলা করার জন্য বলেছেন। কিন্তু তিনি মামলা না করেই সাইফুলকে পুলিশে দেয়ার কথা বলেছেন। ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ কমিউনিকেশন অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ডা. শাগুফা আনোয়ার বলেন, মঙ্গলবার রোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাদার সাইফুলকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে রোগীকে যৌন নিপীড়নের কোনো প্রমাণ আমাদের হাতে নেই। ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডা. শাগুফা বলেন, আমরা থানা পুলিশকে খবর দিয়েছিলাম। কিন্তু ওই নারীর স্বামী তাকে থানায় দিতে রাজি হননি। কারণ থানায় অভিযোগ করলে ভিকটিমের (নারী) নাম-ঠিকানা দিতে হবে। ফলে রোগীর স্বজনরা বলেন, তারা থানায় কোনো অভিযোগ করবেন না। ফলে তাকে থানায় না দিয়ে মঙ্গলবার চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। ডা. শাগুফা আরও বলেন, ইউনাইটেড হাসপাতালে গত ১০ বছরে এই প্রথম এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেল। এটা আমরা শক্ত হাতে অ্যাকশন নিচ্ছি। এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই দোষীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বুধবার ওই রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফিরেছেন।