চীন থেকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতি নভেল করোনাভাইরাস।এই ভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত রোগী শনাক্তের ঘোষণা আসে গত ৮ মার্চ। সম্ভাব্য খাদ্য সংকটের আশঙ্কা থেকে এ ঘোষণার পর পরই খাদ্যপণ্যের ক্রয় বাড়িয়ে দেয় সাধারণ মানুষ। হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় টান পড়েছে মজুদে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গতকাল পর্যন্ত এক মাসে দেশে চাল ও গমের মজুদ কমে গেছে ১৯ শতাংশ।
এ বিষযে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আমন সংগ্রহ মৌসুম চলমান থাকায় গত ৫ মার্চ পর্যন্ত ক্রমবর্ধমান হারেই বেড়েছে খাদ্যের মজুদ, বিশেষ করে চাল ও গমের। ওইদিন মোট মজুদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮ লাখ ৮৯ হাজার টন। এর মধ্যে চালের মজুদ ছিল ১৫ লাখ ৪০ হাজার ও গমের মজুদ ছিল ৩ লাখ ৪৯ হাজার টন। তবে করোনার রোগী শনাক্তের ঘোষণার পরের দিনই প্রথমবারের মতো কমে যায় মজুদের পরিমাণ। ৯ মার্চ যেখানে চাল ও গমের মজুদ ছিল ১৮ লাখ ৮৪ হাজার টন, সেখানে ১৫ মার্চ মজুদ নেমে আসে ১৭ লাখ ৬২ হাজার টনে। মজুদ কমার এ ধারা এখনো চলমান আছে।
বুধবার চাল ও গমের মজুদ নেমে এসেছে ১৫ লাখ ২৭ হাজার ৭৭৮ টনে। যদিও এ মজুদ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ লাখ ৬৬ হাজার টন বেশি। ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল চাল ও গমের মজুদ ছিল ১৩ লাখ ৬১ হাজার ৬৭৩ টন। এর মধ্যে গম ছিল ১ লাখ ৫২ হাজার ৮৪৬ ও চাল ১২ লাখ ৮ হাজার ৮২৭ টন। গতকাল চালের মজুদ ছিল ১২ লাখ ৪২ হাজার ৩৮৩ ও গমের মজুদ ২ লাখ ৮৫ হাজার ৩৯৫ টন।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান মজুদ পরিস্থিতি সন্তোষজনক। এছাড়া এ মুহূর্তে খাদ্যশস্যের কোনো ঘাটতি নেই, ঘাটতির আশঙ্কাও নেই। কারণ আমদানি পাইপলাইনে গমের সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে। এরই মধ্যে গমের এলসি সেটেলড করা হয়েছে ৩৮ লাখ ৪১ হাজার টন এবং চালের এলসি সেটেলড করা হয়েছে ৬ হাজার টন। গমের এলসি ওপেন করা হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টন। এগুলো শিগগিরই দেশে চলে আসবে।
এ বিষয়ে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, সরকারের খাদ্যগুদামে চাল ও গমের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। গত বছরের তুলনায় প্রায় পৌনে দুই লাখ টন খাদ্য মজুদ বেশি রয়েছে। আমদানি করা হচ্ছে পর্যাপ্ত গম। আমদানীকৃত এসব গম স্বল্প সময়ের মধ্যে চলে আসবে। এছাড়া ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে সরকারের বোরো মৌসুমে ধান, চাল ও গম সংগ্রহ কার্যক্রম। এবারে প্রায় ১৮ লাখ ২৫ হাজার টন সংগ্রহ করা হবে। বোরো মৌসুমে সংগ্রহটা ঠিকমতো করতে পারলে আমাদের মজুদকে আরো বেশি শক্তিশালী করতে পারব। গত বোরো মৌসুমের চেয়ে আগামী মৌসুমে দুই লাখ টন ধান বেশি কেনা হবে। ফলে সামনের দিনে মজুদ পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
জানা গেছে, মজুদ পরিস্থিতি ভালো থাকলেও কমার অন্যতম কারণ আমন মৌসুমের সংগ্রহ সময় শেষ হয়ে যাওয়া। গত ৫ মার্চ সমাপ্ত সময়ে সর্বকালের রেকর্ড চাল ও ধান সংগ্রহ করা হয়। আমন মৌসুমে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৪০৭ টন সিদ্ধ আমন চাল, ৪৩ হাজার ৪০১ টন আমন আতপ চাল ও ৬ লাখ ২৬ হাজার ৬৫৭ টন আমন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে, যা চালের আকারে ৭ লাখ ৯৭ হাজার ২৭৪ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বোরো মৌসুমে ১৪ লাখ ৯ হাজার ৮৮৪ টন চাল এবং ৪৪ হাজার ১৫ টন গম সংগ্রহ করা হয়েছিল।
খাদ্যশস্য মজুদ পরিস্থিতি সন্তোষজনক থাকলেও সামনের দিনে আরো সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক খাদ্য সচিব আবদুল লতিফ মন্ডল। তিনি বলেন, গতবারের তুলনায় মজুদ বেশ ভালো। সরকারের কাছে মজুদ থাকলে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। কিন্তু পরিস্থিতি ভিন্নতার কারণে মজুদ পরিস্থিতি আরো জোরদার করতে হবে। কেননা বৈশ্বিকভাবে চাল ও গম রফতানি কমাবে দেশগুলো। তখন টাকা থাকলেও আমরা চাল ও গম পাব না। ২০০৮ কিংবা ২০১৭ সালের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আবার সামনের দিনে সরবরাহ চেইনে বাধা আসতে পারে। সব মিলিয়ে সরকারের একটি সন্তোষজনক মজুদ ভাণ্ডার তৈরি করতে হবে। সেই সন্তোষজনক হতে হবে আগামী নয় মাসের মজুদ ভাণ্ডার গড়ে তোলা।
সানবিডি/এনজে