সমগ্র বিশ্ব আজকে নোভেল করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারি মোকাবিলায় বিপর্যস্ত, পৃথিবীর উন্নত বিশ্ব প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করেও মৃত্যুর মিছিল থামাতে পারছে না। বরং বিশ্বে মৃত্যুর মিছিলের প্রতিযোগিতা চলছে, তখন বিশ্বের সব মানবিক সরকার জনগণের জীবন বাঁচানোর জন্য আজ আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আমরা যদি দেখি উন্নত বিশ্বের প্রায় সবগুলো দেশই মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তারা এসব করতে বাধ্য হয়েছে দেশ ও জনগণের কথা বিবেচনা করে। বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানদের দেখা যাচ্ছে তাদের দেশের জনগণকে সৃষ্টিকর্তার এবাদত করতে বলছে। তারা সৃষ্টিকর্তার সাহায্য প্রার্থনা করছে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী আকাশের মালিকের কাছে সমাধান চেয়েছেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রীসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সরকার কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিজের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করে দিয়েছেন।
নৌবাহিনীতে যথাযথ নিরাপত্তা দিতে না পারায় মার্কিন নৌবাহিনীবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী থমাস মোডলি পদত্যাগ করেছেন। মার্কিন বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস থিওডোর রুজভেল্টে করোনা ভাইরাসের মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে সমালোচনা করেন ঐ জাহাজের ক্যাপ্টেন ব্রেট ক্রোজিয়ার। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে বরখাস্ত করার ঘটনায় মন্ত্রী মোডলি পদত্যাগ করলেন।
আর জার্মানির একটি প্রাদেশিক অর্থমন্ত্রী করোনার পরবর্তী অর্থনীতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কায় আত্মহত্যা করেছেন। পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী রাতে খাদ্যসামগ্রী নিজ কাঁধে নিয়ে জনগণের মধ্যে বিলিয়েছেন। তুরস্ক তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে ইতালিতে, স্পেনে ও সার্বিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ও পাঁচটি বলকান অঞ্চলে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তৃৃতীয় বিশ্বের জন্য ১৬.৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারি মোকাবিলায় সাহায্যের ঘোষণা করেছে। নোভেল করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারি মোকাবিলায় পুনরায় চিকিত্সা পেশায় ফিরেছেন আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডা. লিও ভারাদকার। উন্নত বিশ্বের সরকারগুলো প্রতিটি নাগরিককে করোনার পরীক্ষা এবং সর্বাধুনিক সুচিকিত্সা দিয়ে যাচ্ছে তাদের নাগরিকদের বাঁচানোর জন্য।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী-এমপিরা জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। তার পরও তারা থেমে নেই।
তুরস্ক তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে ইতালিতে, স্পেনে ও সার্বিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও পাঁচটি বলকান অঞ্চলে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তৃতীয় বিশ্বের জন্য ১৬.৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারি মোকাবিলায় সাহায্যের ঘোষণা করেছে। যেসব অঞ্চলে যুদ্ধ চলছে, গৃহযুদ্ধ চলছে বা সন্ত্রাসী আক্রমণ চলছিল, আজ তারা যুদ্ধবিরতিতে। সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেনে হাউথি আন্দোলনের বিরুদ্ধে লড়াইরত। তারাও যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করেছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে দুই সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে।
সবই তো রাজনীতি, মানবতার রাজনীতি, সন্ত্রাসের রাজনীতি বা স্বৈরাচারের রাজনীতি।
বাংলাদেশ এই পৃথিবীর মানচিত্রের বাইরে নয়। বাংলাদেশেও বাড়ছে করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারির প্রাদুর্ভাব। প্রতিদিন করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছে মানুষ। জ্বর-সর্দি ঠান্ডায় বা করোনা ভাইরাসের উপসর্গে মৃত্যু হচ্ছে এবং এই অগণিত মৃত্যু যা পৃথিবী থেকে একটু ভিন্ন রকম। দীর্ঘ তিন মাস বাংলাদেশ সময় পেয়েছে, কেন এখনো প্রতিটি সন্দেহজনক মানুষকে পরীক্ষার আওতায় আনা হলো না।
এত সময় পাওয়ার পরও আমরা প্রস্তুত হতে পারলাম না কেন? আজ হাসপাতালে কোনো চিকিত্সা নেই। রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। আমাদের চিকিত্সাব্যবস্থা যে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে তার প্রমাণ সিলেটের করোনা আক্রান্ত চিকিত্সক। ঐ চিকিত্সক সিলেটে আইসিইউ না পেয়ে এ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢাকায় এসে চিকিত্সা নিচ্ছেন।
আজ বাংলাদেশে খাবারের জন্য যখন মানুষ লাইন ধরে ত্রাণ নিচ্ছে ঠিক তখনি ত্রাণের চাল/ডাল লুট হচ্ছে। প্রতিদিন এ ধরনের লুটের খবর আসছে। বিশ্বে এমন মহামারি আর আমাদের দেশে চলছে চাল চুরি, ত্রাণের নামে ধর্ষণ, লোক দেখানো ত্রাণ বিতরণের সেলফিবাজি, মানুষকে আরো ভাবিয়ে তুলেছে। এই মহাবিপদ থেকে উত্তরণের জন্য সুস্থ রাজনীতির কোনো বিকল্প নেই। এই মহামারির সময় আমাদের এক হয়ে কাজ করতে হবে। সব দলমতনির্বিশেষে সব ভুলে এক হওয়ার উপযুক্ত সময়। জাতির এ সংকটকালে বিএনপিও ইতিমধ্যে সরকারের সঙ্গে কাজ করার কথা জানিয়েছে। এখন আর কাদা ছুড়াছুড়ি নয়। এখন দরকার সব দল এক হয়ে সংকট মোকাবিলা করার। যা আমাদের অনেক সংকট থেকে মুক্তি দিতে পারে।
আমাদের এখন প্রয়োজন আত্মশুদ্ধি। আমাদের মাঝে ফিরে আসুক সুস্থ রাজনীতি, আমাদের মাঝে ফিরে আসুক শুভবুদ্ধি, হিংসা-বিদ্বেষ, দলাদলি ভুলে হয়ে উঠি মানবিক। সব রাজনৈতিক রং মিশিয়ে আমরা একটা রঙে রঙিন হই—মানবিক রঙে। রাজনীতির সব রং মিশে তৈরি হোক মানবিকতা।
লেখক :কলামিস্ট, সাংবাদিক