ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেছেন, পুঁজিবাজার বন্ধ রাখার বিষয়টি আমাদের জন্য দুঃখজনক৷ আসলে এটার সাথে আমরা পরিচিত না৷ এতদিন যাবত বাজারটি বন্ধ থাকা আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর এবং একটি খারাপ অভিজ্ঞতা৷ তবে বাস্তবতার দিকটাও আমাদের চিন্তা করতে হবে। উন্নত বিশ্বের সাথে আমাদের কিছুটা টেকনিক্যাল প্রার্থক্য আছে।
তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বের স্টক মার্কেট সম্পূর্ণ অটোমেটেড মার্কেট এবং অনলাইন প্লাটফর্মভিত্তিক মার্কেট। সেখানে মোবাইল অ্যাপসগুলো অনেক কার্যকরী। যেমন সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ পুরো লেনদেন মোবাইলে হয়। সেখানে একটি ইন্টিগ্রেট সিস্টেম আছে এবং এক সত্ত্বা হিসেবে কাজ করে।
এই সিষ্টেমে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, সিডিবিএল, সিসিবিএল সবাই সম্পৃক্ত৷ তবে আমাদের সত্ত্বাগুলো ভিন্ন৷ ফলে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন যদি বন্ধ থাকে, আমাদেরও বন্ধ রাখতে হয়৷ আবার সিডিবিএলও পাশাপাশি বন্ধ৷ ফলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে চালু রাখাটা কিছুটা কষ্টকর বিষয়৷
এদিকে দেশের লকডাউন পরিস্থিতি, আইন শৃংখলা পরিস্থিতি, নিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাবসহ বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা দেওয়া বা অফিসের কর্মচারী কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা দেয়ার বিষয়টাও প্রাধান্য পাবে বলে জানান তিনি৷
সরকার যদি ছুটি আরো বাড়ায়, সেক্ষেত্রে আমরা কি করব এমন প্রশ্ন রেখে মিনহাজ ইমন বলেন, এখন পর্যন্ত ডিএসইর বোর্ডের সিদ্ধান্ত সরকারের ছুটি যদি বাড়ে, দুঃখজনক হলেও এটার বাস্তবতা আমাদের লেনদেনটা বন্ধ থাকবে। তবে কমিশন অফিস খোলা রাখে, সেক্ষেত্রে ভিন্ন সিদ্ধান্ত আসতে পারে৷ ডিএসইর এই পরিচালক বলেন, আমরা ব্রোকাররা অনেক খারাপ অবস্থায় আছি৷ ২০১৯ সাল থেকেই আমাদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ৷ লেনদেন কমায় আয় কমেছে৷ আমরা প্রত্যকেই লোকসানে ব্যবসা করছি৷ আর এই করোনাকালীন সময়তো আমাদের অবস্থা আরো ভয়াবহ খারাপ৷ এপ্রিল মাসে আমাদের আয় হবে শুন্য৷ অথচ কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন দিতে হবে৷ এদিকে শেয়ারের দর পতনের সর্বনিম্ন সীমা (যে দরের নিচে নামতে পারবে না) বেঁধে দেওয়ার কারণে লেনদেন এক ধরনের বন্ধ অবস্থায় আছে বলে জানান ইমন৷
তিনি বলেন, এ অবস্থায় অফিস খুললেও খুব একটা আয় রোজগার হবেনা৷ প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন বলেছেন শিল্প উদপাদন, রপ্তানী বাণিজ্য, সেবা খাত বিশেষত পর্যটন, এভিয়েশন ও হসপিটালিটি খাত, ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোগ, কর্মসংস্থান ইতাদি ক্ষেএে ধস নেমেছে৷ পুঁজিবাজারে বিশ্বব্যাপী বিগত কযেক সপ্তাহে ২৮-৩৪ শতাংশ দরপতন ঘটেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন৷ সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সংকট হতে উওরনের জন্য আর্থিক সহায়তা হিসেবে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি প্রণোদনা পাকেজ ঘোষনা করেছে৷ আশা করা যাচ্ছে এতে দেশের অর্থনীতি পুনরায় ঘুরে দাঁড়াবে৷
বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বৈশ্বিক পুঁজিবাজারের বাইরে নয়৷ পুঁজিবাজারের স্বার্থে এই মুহুর্তে সরকারের কাছ থেকে অন্যান্য খাতের মত প্রণোদনা বা আর্থিক সাহায্য দরকার বলে মনে করেন মিনহাজ মান্নান ইমন। তাই ব্রোকার কমিউনিটি বা ট্রেকহোল্ডার, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, মিউচ্যুয়াল ফান্ডসহ অন্যান্য যারা আছেন, তাদেরকে স্বল্প সুদে ও স্বল্প মেয়াদে একটা আর্থিক সাহায্য বা প্রণোদনা দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অুনরোধ করেছেন৷
তবে যদি ভবিষ্যতে আয় রোজগার করে ভালো অবস্থায় হলে, অবশ্যই সে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা জানান।
তিনি বলেন, একটি আর্থিক সহযোগীতা খুবই জরুরী প্রয়োজন। বিশেষ করে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে একটু স্বল্প সুদে সরকার এ মুহুর্তে কিছু আর্থিক সহযোগীতা দিতে পারে। দিন শেষে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার দিকটাও চিন্তা করতে হবে৷
সরকারের কাছে আকুল আবেদন এবং প্রাণের দাবী জানিয়ে তিনি বলেন, লেনদেনে ০.০৫ অর্থাৎ ৫ পয়সা হারে যে অগ্রিম ইনকাম টেক্স (AIT) দিতে হয়, সেটা এই মুহুর্তে সম্পূর্ণ মওকুফ করে দেওয়ার জন্য। আর সর্বশেষ বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কথা ভাবতে বলব৷ তারাও খুব ক্ষতিগ্রস্থ। বাজার খোলার পরে তাদের ব্যাপারেও প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখতে হবে৷
সানবিডি/এসকেএস