করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে কর্মহীন মানুষকে সহায়তা দিতে বিশেষ ওএমএসের (খোলাবাজারে বিক্রি কর্মসূচি) চাল চোর ও কালোবাজারিদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে পুলিশ সুপারদের (এসপি) নির্দেশ দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
সোমবার (১৩ এপ্রিল) এই নির্দেশনা দিয়ে পুলিশ সুপারদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে খাদ্যমন্ত্রী এসপিদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন, সারাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত কেজি প্রতি ১০ টাকা মূল্যে ওএমএসের চাল বিক্রি কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে কালোবাজারি বা চুরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রয়োগ করার জন্য আপনাকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করা হলো।
তিনি আরও লিখেছেন, আপনারা জানেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সাল থেকে দরিদ্রের জন্য ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’ চালু করেছেন। প্রতি পরিবারকে ৩০ কেজি করে ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ টাকা কেজি দরে চাল দিয়ে যাচ্ছেন। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল ডিলার দিয়ে কার্ডের মাধ্যমে প্রদান করা হয়।
খাদ্যমন্ত্রী লেখেন, বর্তমানে বিশ্বের দুই শতাধিক দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও এর সংক্রমণ দেখা দিয়েছে এবং এর প্রতিরোধে সরকার বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ওএমএস খাতে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের মূল্য ৩০ টাকার জায়গায় ১০ টাকা নির্ধারণ করার ঘোষণা দেন। এর প্রেক্ষিতে অর্থ বিভাগ চালের মূল্য কেজি প্রতি ১০ টাকা নির্ধারণ করে। এরপর খাদ্য মন্ত্রণালয় সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে ঘরে অবস্থানকারী সাধারণ শ্রমজীবী, দিনমজুর, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, পরিবহন শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, চায়ের দোকানদার, ভিক্ষুক, ভবঘুরে ও অন্যান্য সকল কর্মহীন মানুষের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির কার্যক্রম গ্রহণ করে।
তিনি আরও লিখেছেন, এ কর্মসূচির আওতায় ঢাকা মহানগরসহ দেশব্যাপী বিভাগীয় ও জেলা শহর এবং জেলাশহর বহির্ভূত পৌরসভায় সপ্তাহে প্রতি রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত বিক্রয় কার্যক্রম চালু করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও পৌরসভার নির্বাচিত প্রতিনিধির উপস্থিতি/তদারকিতে বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। একজন ভোক্তা সপ্তাহে একবার মাত্র ৫ কেজি চাল ক্রয় করতে পারবে। ওএমএস কেন্দ্রসমূহ নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী, শ্রমজীবীদের বসবাস কেন্দ্রের নিকটস্থ বস্তি এলাকায় বা পর্যাপ্ত খালি জায়গা আছে এমন স্থানকে অস্থায়ী বিক্রয় কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে।
সাধন চন্দ্র মজুমদার লিখেছেন, ইদানিং কিছু পত্রপত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, কতিপয় ব্যক্তি ওএমএসের চাল কালোবাজারে বিক্রি করছে। যা এই কর্মসূচিকে প্রশ্নবিদ্ধ ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। ইতোমধ্যে দেশের কয়েকটি জাযগায় ওএমএসের চালসহ কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরাও পড়েছে বলে পত্রিকায় খবর এসেছে।
এসপিদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী আরও বলেছেন, আপনি অবগত আছেন যে, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স এবং সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেয়া ভাষণেও ত্রাণ কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো প্রকার দুর্নীতিকে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে সকল বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকগণকে বর্ণিত বিষযে, যথাযথ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
সোমবার সকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে খাদ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে সরকারি চাল আত্মসাৎ ও চুরির বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথাও বলেন সাধন চন্দ্র মজুমদার।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস জনিত কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে খেটে খাওয়া ও কর্মহীন মানুষের জন্য প্রদত্ত ওএমএস এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল নিয়ে কোনো ধরনের অনিয়ম সহ্য করা হবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন খাদ্যমন্ত্রী।
পাশাপাশি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও হুঁশিয়ারি দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ওএমএসের চাল বিতরণ কার্যক্রমে অনিয়ম ও দুর্নীতি করলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে বরখাস্ত ও ফৌজদারি মামলা করা হবে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় হতে এ সংক্রান্ত জিও (অফিস আদেশ) জারি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের অনিয়ম/দুর্নীতির বিষয়ে সুনিদিষ্ট তথ্য প্রমাণসহ প্রতিবেদন তাৎক্ষণিকভাবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে বলেও সাংবাদিকদের জানান তিনি।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস