মহামারি থেকে প্রাণ বাঁচাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যে লকডাউন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তাতে হুমকির মুখে পড়েছে অর্থনীতির প্রাণ। এর ফলে আরেকটি মহামন্দার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। এই আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
সংস্থাটি সতর্ক করে দিয়ে বলছে, করোনা সঙ্কট ২০২০ সালে বিশ্বের অর্থনীতিকে ৩ শতাংশ ছোট করে আনবে।
আইএমএফ মনে করে, ১৯৩০ এর দশকের মহামন্দার পর এমন সঙ্কট বিশ্ব আর দেখেনি। এই সঙ্কট যত দীর্ঘ হবে, বিভিন্ন দেশের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে তত কঠিন পরীক্ষার মধ্যে পড়তে হবে।
চীন থেকে সংক্রমিত এই ভাইরাস চলতি বছরের গোড়ার দিকে বিশ্বজুড়ে আঘাত হানে। এতে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ২০ লাখের মতো মানুষ এবং মারা গেছে সোয়া লাখ মানুষ। প্রাণনাশের পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতির জন্যও বিরাট বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মহামারি। ইতিমধ্যে এর ফল ভোগ করতে শুরু করেছে মানুষ। ভবিষ্যতে আরও কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে মানুষকেই।
মানুষের প্রাণ বাঁচানোকে অগ্রাধিকার দিয়ে দেশে দেশে শুরু হয়েছে লকডাউন। অনেক দেশ ইতিমধ্যে লকডাউন ও কারফিউর মেয়াদ আর বাড়িয়েছে। এর ফলে বন্ধ হয়েছে সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা। একই সঙ্গে বন্ধ রয়েছে সবল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। ঘরে বসে অলস সময় কাটাচ্ছে দুনিয়ার অর্ধেক মানুষ। ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নেমে এসেছে স্থবিরতা।
আর এই স্থবিরতা বিশ্বকে আরেকটি মহামন্দার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন। এরই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার এ সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছে আইএমএফ।
আইএমএফের সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে বলা হয়েছে, ‘এটা এখন স্পষ্ট যে ১৯৩০ এর দশকের মহামন্দার পর সবচেয়ে ভয়াবহ মন্দার সামনে দাঁড়িয়ে পৃথিবী। এটা এক দশক আগের অর্থনৈতিক সঙ্কটকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে।’
তাদের আরও আশঙ্কা বিশ্বের প্রবৃদ্ধির রাশ নাটকীয়ভাবে টেনে ধরবে এই লকডাউন।
আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ বলেন, এই সঙ্কটে বিশ্ব আগামী দুই বছরে ৯ ট্রিলিয়ন ডলার প্রবৃদ্ধি হারাবে, এই অঙ্ক জার্মানি ও জাপানের মতো দুই শিল্পোন্নত দেশের মোট জিডিপির পরিমাণের চেয়েও বেশি।
মহামারি ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও জাপানের দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা করে আইএমএফ বলছে, তারপরও অর্থনীতির ভঙ্গুর দশা কোনো দেশই এড়াতে পারবে না।
যদি চলতি বছরের দ্বিতীয় ভাগে মহামারি নিয়ন্ত্রণেও আসে, তারপরও বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮ শতাংশের বেশি হবে না। এই আবাস দিয়েছে আইএমএফ।
এদিকে জাতিসংঘের আরেক অঙ্গ সংগঠন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলছে. করোনা মহামারির কারণে আগামী তিন মাসের মধ্যে চাকরি হারাতে যাচ্ছে সাড়ে ১৯ কোটি মানুষ। এদের মধ্যে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতেই চাকরি হারাচ্ছে সাড়ে ১২ কোটি মানুষ।
সংস্থাটি আরও বলছে, বর্তমানে বিশ্বের পূর্ণ বা খণ্ডকালীন মোট কর্মশক্তির প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজনের পেশা কোন না কোনভাবে করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস