প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলমান করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সব সময় বলে আসছেন সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে৷ অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে প্রায় সকল সেক্টরে বিশেষ প্রনোদনা ঘোষনা করেছেন যা দুরদর্শীনেতৃত্বেরবহিঃপ্রকাশ৷ সেই সাথে সকল শ্রেণীর মানুষের খাদ্য নিরাপওানিশ্চিত করণে সর্বাত্বকপ্রচেষ্ঠাচালিয়ে যাচ্ছেন৷ দেশের অর্থনীতি স্থবির হয়ে যাচ্ছে, তা জেনেও সরকার জনগণের জীবনের নিরাপওায় ২৮টি জেলা শহর লকডাউন ঘোষনা করেছে৷ রাজধানীর এলাকা ভিওিক অনেক জায়গায় লকডাউন করা হয়েছে৷ প্রতিদিনই ঢাকাসহ নতুন নতুন জেলা ও এলাকা লকডাউন ঘোষনা করা হচ্ছে৷ আর এ সবই করা হচ্ছে জনগণের নিরাপওায়৷
করোনাভাইরাসে দেশের সরকারি ছুটির সঙ্গে সঙ্গে পুঁজিবাজারও বন্ধ রয়েছে প্রায় ১ মাস। এছাড়া সরকারি ছুটি ও পুঁজিবাজার বন্ধের মেয়াদ যে আরও বাড়বে না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে বিশেষ করে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর মধ্যে উৎকন্ঠা তৈরী হয়েছে। তারপরেও করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতার কারনে সরকারি ছুটির মধ্যে লেনদেন শুরু করা সম্ভব না।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, পুঁজিবাজারের সঙ্গে জড়িত দুই একজন লেনদেন চালু করার পক্ষে। তবে বাস্তবতার নিরিখে তা সম্ভব না। লেনদেন চালু করতে গেলেই জনবল ও বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতির প্রয়োজন পড়বে। যা চলমান পরিস্থিতিরকারণে জীবনের জন্য মারাত্মকঝুঁকিপূর্ণ। এই পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লেনদেন চালু করা সম্ভব হবে না। এছাড়া অনেকে চাইলেও ছুটিতে গ্রামে চলে যাওয়ায় উপস্থিত হতে পারবে না। তাই সরকারি ছুটির মধ্যে লেনদেন চালু করা সম্ভব না বলে তারা মনে করেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মোঃ শাকিল রিজভী বলেন, লেনদেন চালু করা দরকার হলেও সেই সক্ষমতা আছে বলে মনে হয় না। কারণ লেনদেন চালু করতে মেইন কম্পিউটারটা (ম্যাচিং কম্পিউটার) পরিচালনা করতেই ২০-২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দরকার পড়ে। যাদেরকে স্বশরীরে উপস্থিত হতে হয়। এছাড়া লেনদেন কার্যক্রম চালাতে প্রতিটি ব্রোকারেজ হাউজে লোকবলের দরকার। কিন্ত সরকারি ছুটির কারনে অনেকেই নিরাপদ অবস্থানে আছেন৷ তারা চলমান পরিস্থিতিতে হাউজে উপস্থিত হবে কি করে। এই পরিস্থিতিতে লেনদেন চালু করার ক্ষেত্রে অনেকগুলো প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হল সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।দেশের লকডাউন পরিস্থিতি, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা দেওয়া বা অফিসের কর্মচারীকর্মকর্তাদেরনিরাপত্তা দেয়ার বিষয়টাও অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণবলে তিনি মনে করেন৷ ফলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ চালু না রাখাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরনির্দেশনা পালন করা৷ জীবনের নিরাপওার চেয়ে ব্যবসা বাণিজ্য বড় নয়৷ বেঁচে থাকলে অনেক ব্যবসা করা যাবে৷
ডিএসইর আরেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, পুঁজিবাজার বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি মানসিক যন্ত্রনায় আছে ব্রোকাররা। আমরা চাই বাজারটি খুলে যাক। এছাড়া খোলার অপেক্ষায় আছি। কিন্ত করোনাভাইরাসের বাস্তবতায় সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে কয়েক ধাপে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। তবে অন্যান্য দেশে রাষ্ট্রীয় ছুটির পরিবর্তে লক ডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অন্যসব দেশের শেয়ারবাজার চালু রাখা সম্ভব হলেও আমাদের দেশে সম্ভব না। কারন সরকারি ছুটির সঙ্গে সঙ্গে আইনগতভাবে কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। এর আওতায় বিএসইসি, সিডিবিএল ও স্টক এক্সচেঞ্জও রয়েছে। শেয়ার বাজারঅর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রযা বিশ্বস্বীকৃত৷দৈনিক লেনদেনের ভিওিতে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন৷ এখানে হাজার হাজার লোক কর্মরত৷
তিনি আরো বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম শুধুমাত্র মতিঝিল বা ঢাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এই কার্যক্রম চলে পুরো দেশজুড়ে৷ যেখানেই এই কার্যক্রম চলে, সেখানেই লোক সমাগম হয়।বর্তমান ২৮টি জেলাশহর লকডাউন ঘোষনা করেছে৷ রাজধানীর এলাকা ভিওিক অনেক জায়গায় লকডাউন করা হয়েছে এবং প্রতিদিনই নতুন নতুনজেলা ও এলাকা লকডাউনের আওতায় আসছে৷ সেই সাথে নতুন আক্রান্তের হারও বাড়ছে৷ এছাড়াও বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করে কোম্পানিরতথ্য উপাওের ভিওিতে৷সরকারী সাধারণ ছুটি থাকায় তালিকাভুক্তসবকোম্পানিরতথ্য উপাও তাদের অজানা৷
তিনি বলেন, অন্যান্য দেশের পুঁজিবাজারের সঙ্গে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের কিছু পার্থক্য রয়েছে। অন্যান্য দেশে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান একক সত্ত্বা হলেও আমাদের এখানে ভিন্ন। বাংলাদেশে বিএসইসির আইনী বিষয়গুলো এবং সিডিবিএলের উপর লেনদেন নিষ্পত্তির বিষয় নির্ভর করে। ফলে এ দুটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পুঁজিবাজার খোলা রাখা সম্ভব না। এছাড়া ছুটির মধ্যে ব্যাংকের লেনদেন সময় সীমিত করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্টক এক্সচেঞ্জের দৈনিক ৩০০-৪০০ কোটি টাকার লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব না।
ডিএসইর লেনদেন অটোমেটেড হলেও আন্তর্জাতিক মানের হয়নি বলে জানান মিনহাজ মান্নান ইমন। তবে চায়নার কারিগরী সহযোগিতায় সেই লক্ষে অচিরেই পৌঁছে যাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, মোবাইল অ্যাপটি চালু করা হলেও সেভাবে ব্যবহার হয় না। এমুহুর্তে মোবাইলে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা মোট বিনিয়োগকারীর মাএ ০.৫২ শতাংশ৷ অথচ চায়নায় শেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জে ৯৫ শতাংশ লেনদেনই মোবাইলে হয়। তবে আমাদের দেশেও হবে, একটু সময় লাগবে। ব্যাংকের লেনদেনও খুব সীমিত পর্যায়ে রয়েছে৷ স্বল্প সংখ্যক ব্যাংকের স্বল্প সংখ্যক শাখা চালু রয়েছে৷ স্টক এক্সচেঞ্জেরলেনদেন এখনো ব্যাংকে চেক দেওয়া-নেওয়া করে টাকা জমা ও উত্তোলন করতে হয়। ফলে এই মুহূর্তে ঘরে বসে লেনদেন করা সম্ভব না।
তিনি বলেন, দেশের অজস্র ভবনকে লক ডাউনের আওতায় ফেলা হয়েছে। এই তালিকায় অনেক ব্রোকারেজ হাউজও পড়েছে। এছাড়া লক্ষ্যাধিক বিনিয়োগকারী লক ডাউনের আওতায় রয়েছে। এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের আপাময় কোটি জনতার ন্যায় বিনিয়োগকারী, বিএসইসি, স্টক এক্সচেঞ্জ ও ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবনের মূল্য আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আগে জীবন, পরে ব্যবসা। তবে সরকারি ছুটি শেষে শেয়ারবাজার চালু করতে একমুহূর্তও দেরি করতে চাই না। কিন্ত বর্তমান বাস্তবতার নিরিখে লেনদেন চালু করা নিতান্তই অসম্ভব।
সরকার জনণনের নিরাপওায় সাধারণ ছুটি ঘোষনা করেছে৷ যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুরদর্শী চিন্তাভাবনা৷ প্রধানমন্ত্রীর সাধারণ ছুটি ঘোষনার সাথে ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) এর সভাপতি একাত্বতাজানিয়ে প্রতিষ্ঠানটিরপ্রেসিডেন্ট শরীফ আনোয়ার হোসেন বলেন,আমরাও চাই লেনদেন চালু হক। কিন্ত সরকারি ছুটি থাকলে সেটা কিভাবে সম্ভব জানি না। সরকারি ছুটির কারণে অনেকেই গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন৷এছাড়া বিভিন্ন এলাকা লক ডাউনে রয়েছে এবং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন এলাকায় লকডাউনের আওতা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে চাইলেই লক ডাউন ভেঙ্গে সবাই চলে আসতে পারবে না। ফলে ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্ব-শরীরে উপস্থিতি দরকার হলেও সেটা সম্ভব হবে না। এছাড়া ডিএসই অটোমেটেড হলেও বিনিয়োগকারীরা এখনো সেভাবে অভ্যস্ত না। ফলে তাদেরকেও ব্রোকারেজ হাউজে আসতে হবে। কিন্ত এই মহামারির মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেটা করা কি ঠিক হবে?
ডিএসইর আরেক পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, জীবনের চেয়ে আর কিছু বড় হতে পারে না৷সরকারের সাধারণ ছুটির সাথে স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম বন্ধ রাখা সঠিক ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ৷
সানবিডি/এসকেএস