বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের সুরক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী কর্মীদের খাদ্য সহযোগিতা দেয়ার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দুই দফায় ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এই টাকা বিভিন্ন দূতাবাস ও হাইকমিশনের মাধ্যমে প্রবাসীদের হাতে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। করোনার কারণে প্রবাসী কর্মীরা চরম খাদ্য সঙ্কটে জীবন-যাপন করে আসছেন। তাদের খাদ্য সহযোগিতা দিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এমন উদ্যোগের কথা জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে সূত্র জানিয়েছে, গোটা বিশ্বে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ বাংলাদেশী কর্মী কাজ করছেন। এই কর্মীদের মধ্যে অনেকে আছেন যাদের বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া, কোম্পানি পরিবর্তন করা অথবা কথিত ফ্রি ভিসার কারণে অনেক কর্মী ‘আনডকুমেন্টেড’ বা অনিয়মিত হয়ে গেছেন। বছর জুড়েই প্রবাসী কর্মীদের নানা সমস্যায় পড়তে হলেও, এবার করোনাভাইরাসের প্রভাবে মহাসঙ্কটে পড়েছেন প্রবাসী কর্মীরা। একদিকে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া অন্যদিকে আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিটি দেশ বর্তমানে লকডাউনে রয়েছে। কারও কোন কাজ নেই। ফলে তাদের চরম খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন দেশে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ লাখ কর্মী এমন এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন। তাছাড়া এক রুমে অনেক বেশি সংখ্যক কর্মী বসবাস করায় তাদের করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ছে। অনেক দেশেই বাংলাদেশী বহু কর্মী আক্রান্ত হচ্ছেন। এ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে কয়েক শ’ বেশি কর্মী করোনায় মারা গেছেন। বাংলাদেশের যে সব দেশে শ্রমবাজার রয়েছে তার সবই এখন করোনা আক্রান্ত হচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশের সব শ্রমবাজারই এখন কার্যত লকডাউন। কর্মীদের কাজ বন্ধ, ঘর থেকে বের হতে পারছেন না তারা। এই পরিস্থিতিতে যে সব কর্মী সরাসরি কোম্পানিতে নিয়োজিত ছিলেন, তারা মূল বেতন পাওয়ার আশা করছেন। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, কাজ বন্ধ থাকলেও বিদেশী কর্মীদের মূল বেতন যেন নিশ্চিত করা হয়। তবে যে সব কর্মী সরাসরি কোন কোম্পানিতে নিয়োজিত ছিলেন না, এজেন্ট বা কফিলের মাধ্যমে ভিসা প্রাপ্ত হয়ে অবস্থান করছেন তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। তারা প্রায় না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের বেলায় সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার ও বাংলাদেশ দূতাবাস বা হাইকমিকশন কোন দায়িত্ব নিচ্ছেন না। এমন এক জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এদিকে বৃহস্পতিবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সভাপতিত্বে ‘করোনা ভাইরাসে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য করণীয় বিষয়ে জরুরী আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা’ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহারিয়ার আলম, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জেনারেল মাহফুজুর রহমান।
আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, করোনাভাইরাসে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশ থেকে কর্মীদের ফেরত আনার অনুরোধ আসছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিধিবিধান অনুযায়ী দ্বিপাক্ষিক অথবা বহুপাক্ষিক আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিশেষ করে কলম্বো প্রসেস ও আবুধাবি ডায়ালগ ফোরামের সদস্য দেশসমূহের সঙ্গে শীঘ্রই একটি বৈঠক করা হবে। বিদেশ ফেরত প্রবাসী কর্মীদের জন্য কোয়ারেন্টাইন ক্যাপাসিটি আরও বাড়াতে হবে। যেসব প্রবাসী কর্মী হেলথ সার্টিফিকেট নিয়ে দেশে আসছে, তাদেরও নিয়মিত মনিটরিংয়ের আওতায় রাখতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, সভায় বিদেশ ফেরত প্রবাসী কর্মীরা যেন দেশে চলমান ত্রাণ সহায়তা পায় সে বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে একটি নির্দেশনা জারি করার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের সামগ্রিক সুরক্ষায় সরকারের সবধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের জরুরী খাদ্য সহায়তার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন দূতাবাসে আরও তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর আগে মন্ত্রণালয় ৫ কোটি টাকা সহযোগিতা দিয়েছে। বিদেশে অবস্থানরত বিত্তবান ও সামর্থ্যবান বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের বিপদগ্রস্ত প্রবাসীদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে করোনাভাইরাসের মোকাবেলায় আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত সভার যে সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণ করা হয়েছিল সেগুলোর বাস্তবায়নের হার অত্যন্ত সন্তোষজনক। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং দফতরসমূহের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে এসব কার্যক্রম সুচারু রূপে সম্পাদন করে আসছে।
সভায় প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জেনারেল মাহফুজুর রহমান বলেন, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ২০ হাজার প্রবাস ফেরত কর্মীর কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। এছাড়া তিনি করোনা পরিস্থিতিতে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিভিল প্রশাসনকে সবসময় সহায়তার আশ্বাস দেন।