‘প্রধানমন্ত্রী তো আমাদের কান্না শুনবেন না। আমরা আমাদের ভাইকে ফেরত চাই না। প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, আমাদের পরিবারের সবাইকে মেরে যান। আমরা আর কাঁদতে চাই না। কাঁদতে কাঁদতে আমাদের চোখের পানি শুকিয়ে গেছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে কথাগুলো বলছিলেন গুম হওয়া সূত্রাপুর থানা ছাত্রদল সভাপতি সেলিম রেজা পিন্টুর বোন মুন্নি। শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের গুম হওয়া ১৯ পরিবারের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলনে এভাবে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। সংবাদ সম্মেলনে গুম হওয়া ১৯ পরিবারের সদস্যরা তাদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন।
গত ২০১৩ সালে ৬ ডিসেম্বর গুম হওয়া নিজাম উদ্দিন মুন্নার বাবা সামছুদ্দিন বলেন, ‘আমার একটাই পরিচয় গুম হওয়া সন্তানের পিতা। এই পরিচয় আর কারও হোক তা কামনা করি না। অনেক কেঁদেছি আর কাঁদতে চাই না। সরকারের কাছে একটা চাওয়া- আমাদের সন্তানকে মেরে যেখানে রাখা হয়েছে, সেই মাটিটা আমাকে দেখিয়ে দিন। যেন মাটিটা ছুয়ে সান্ত্বনা পেতে পারি। জিয়ারত করতে পারি।’
গত ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের মা হাজের খাতুন বলেন, ‘দুই বছর পার করেছি, আর পারছি না। সাংবাদিক ভাইয়েরা আপনারা ভাল করে লিখবেন যেন আমাদের সন্তানদের ফেরত পাই। এ কথা বলেই ডুকরে কেঁদে উঠেন। পরে আর তিনি কথা বলতে পারেনি।
গত ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর গুম হওয়া খালিদ হাসান সোহেলের স্ত্রী শাম্মী সুলতানা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘জেল গেট থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে গেছে। এখনো ফেরত পাইনি। আমার দুই বছরের সন্তান পিতা ছাড়া শৈশব পার করেছে। আমার সন্তানের সেই শৈশব ফিরিয়ে দিন।’
একই বছরের ২ ডিসেম্বর গুম হওয়া সোহেলের ছেলে জেএসসি পরীক্ষার্থী রাজু বলেন, ‘বাবা আমার জন্ম দিনের ফুল কিনতে গিয়ে আর ফিরে আসতে পারেননি। বাবা ছাড়া আমাদের ভবিষ্যৎ অচল। বাবাকে ফিরিয়ে দিন।’
সোহেলের সঙ্গে গুম হওয়া পারভেজ হোসেনের শিশু কন্যা হৃদি বাবার হাত ধরে স্কুলে যেতে চায়। বাবা তাকে আইসক্রিম কিনে দিবে সেই অপেক্ষায় বসে থাকে। সে বলে, ‘আমি বাবার হাত ধরে স্কুলে যেতে চাই, বাবা আইসক্রিম কিনে আনবে। মা আইসক্রিম কিনে দেয় না। মার কাছে টাকা নেই। আমার বাবাকে যে এনে দিবে আমার কাছে অনেক চকলেট আছে, আমি তাকে চকলেট দেব। আমি বাবার সাথে শিশু পার্কে যেতে চাই। রাতে আমি বাবার জন্য কান্না করি, মাও কান্না করে বাবা আসে না।’
ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর গুম হওয়া আদনান চৌধুরীর বাবা রুহুল আমীন বলেন, ‘রাত ২টার দিকে পোশাকদারী র্যাব-১ পরিচয়ে আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়। তারা আমার ছেলেকে ফেরত দিয়ে যাবে বলেছিল। আজও ছেলেকে ফিরিয়ে দেয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন- প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলে প্রশাসন আমরা ছেলেকে ফিরিয়ে দেবে।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন মারুফা ইসলাম।
২০১৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে রাজধানীতে গুম হওয়া ১৯ সদস্য হলেন- সাজেদুল ইসলাম সুমন, জাহিদুল করিম তানভীর, আবদুল কাদের ভুঁইয়া মাসুম, মাজহারুল ইসলাম রাসেল, আসাদুজ্জামান রানা, আল আমিন, এম এ আদনান, কাউসার, সেলিম রেজা পিন্টু, খালিদ হাসান সোহেল, সম্রাট মোল্লা, জহিরুল ইসলাম, পারভেজ হোসেন, মো. সোহেল, মো. সোহেল চঞ্চল, নিজাম উদ্দিন মুন্না, তরিকুল ইসলাম ঝন্টু, মাহবুব হাসান সুজন ও কাজী ফরহাদ। তারা সবাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।