করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ১০ লাখ কিট আমদানির টার্গেট নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে চীনসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আপাতত সীমিত সংখ্যায় চীন থেকে কিট আমদানি করলেও ভবিষ্যতে প্রয়োজন অনুসারে অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা হবে। মূলত অধিক পরিমাণ নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে দেশব্যাপী করোনা সংক্রমণের সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনার লক্ষ্যে কিট আমদানি অব্যাহত থাকবে। চলতি মাসেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন আরটিএ- পিসিআর ল্যাবে দৈনিক নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা পাঁচ হাজারে উন্নীত করা হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চীনের উহানে করোনা ভাইরাস সংক্রণের পর থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী সংক্রমণ প্রতিরোধে আগাম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় অধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশ হওয়ার পরও বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ এখনো মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়েনি।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করানো রোগী শনাক্ত হয়। শনিবার (২৫ এপ্রিল) পর্যন্ত মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা চার হাজার ৯৯৮ এবং মারা গেছেন ১৪০ জন। এছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে ১১৩ রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
শুরুর দিকে শুধুমাত্র সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) হাতেগোনা খুবই অল্প সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করা হতো। নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই সারাদেশে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ২৩টি আরটিএ-পিসিআর ল্যাব স্থাপন ও নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, চলতি মাসের মধ্যে আরও পাঁচটি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা শুরু হবে।
অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সব মিলিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৩ হাজার ১১৩টি। বর্তমানে কিট মজুত রয়েছে ৩০ হাজারেরও বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ায় কোনো দেশই একসঙ্গে অনেক বেশি সংখ্যক কিট রফতানি করতে রাজি হচ্ছে না। তাই চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে নমুনা পরীক্ষার কিট সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে দেশে করোনা পরিস্থিতি তেমন উদ্বেগজনক না হলেও যেকোনো মুহূর্তে সংক্রমণের হার উদ্বেগজনক হারে বাড়তে পারে। কাঙ্ক্ষিত না হলেও সে ধরনের অবস্থা হলে যাতে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়ে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায় সে লক্ষ্যে অধিকসংখ্যক নমুনা কিট মজুত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের কাছে ১০ লাখ নমুনা কিট আমদানি ও দৈনিক পাঁচ হাজার নমুনা পরীক্ষার টার্গেট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, করোনা রোগী শনাক্ত এবং তাদের চিকিৎসা নিশ্চিতে রাজধানীসহ সারাদেশে হাসপাতাল প্রস্তুত করা হচ্ছে। চিকিৎসক-নার্স টেকনোলজিস্টসহ সকলে মিলে করোনা রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সম্মিলিতভাবে কাজ চলছে।
তিনি বলেন, এ রোগটি আশঙ্কাজনক হারে ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা দুরূহ হয়ে পড়বে। এ কারণে রোগটি যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে সে চেষ্টায় করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জনগণের সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য। মানুষ যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তাহলে রোগটি নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং যারা আক্রান্ত হবেন তারা সুচিকিৎসা পাবেন।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস