মৃত করোনা রোগীর জানাজা, দাফন ও পলাতক রোগীদের ধরে আনাসহ করোনার এই ক্রান্তিকালে বিভিন্ন জনবান্ধব কাজে জড়িয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা। করোনা বিস্তাররোধে প্রতিটি কাজেই মানুষের খুব কাছে যেতে হচ্ছে পুলিশকে। এসব কাজের মাধ্যমে নিজের অজান্তেই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা।
করোনাযুদ্ধে সাধারণ মানুষের সুরক্ষার জন্য জেনেশুনেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে আসা পুলিশ বাহিনীর সদস্য হিসেবে প্রথম জীবন দিলেন কনস্টেবল জসিম উদ্দিন (৩৯)।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমিপ) ওয়ারী বিভাগের ওয়ারী থানার কনস্টেবল জসিম উদ্দিনের বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচংয়ে। তিনি মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) মারা গেছেন। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
ওয়ারী ফাঁড়িতে দায়িত্বরত থাকার সময় করোনায় সংক্রমিত হন কনস্টেবল জসিম উদ্দিন। গত ২৪ এপ্রিল তার শরীরে প্রথম করোনার উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। মঙ্গলবার রাত ১০টায় তিনি মারা যান।
আজকের পরীক্ষার রিপোর্ট আসে তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ইফতেখার আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘গত ২৪ এপ্রিল করোনা উপসর্গ দেখা দেবার পর তার স্যাম্পল নিয়ে আইইডিসিআরে পাঠানো হয় এবং তাকে পাঠানো হয় রাজারবাগে হোটেল আল সালামে পুলিশি তত্ত্বাবধানে হোম কোয়ারেন্টাইনে। গতরাতে তিনি ঢামেক হাসপাতালে মারা যান। আজকে করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট হাতে পেয়েছি।’
করোনাযুদ্ধে প্রথম পুলিশ সদস্য হিসেবে জসিম মারা যাওয়ায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ওয়ারীর ডিসি ইফতেখার। তিনি বলেন, আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। তিনি আরও বলেন, জাতীয় ও বৈশ্বিকভাবে করোনার যে প্রাদুর্ভাব, এটা মোকাবিলায় চিকিৎসক-নার্সদের পাশে থেকে ফ্রন্টলাইন ফাইটার হিসেবে কাজ করছে পুলিশ। পুলিশ সদস্য হিসেবে করোনায় জসিমই প্রথম মারা গেলেন। এটা আমাদের বাহিনীর জন্য দুঃখের ও অপূরণীয় ক্ষতির। দুঃখজনক যেকোনো মৃত্যুই কাম্য নয়।
আবার একই সঙ্গে (জসিমের মৃত্যু) গর্বের বিষয়। করোনার এই সংকটকালে জাতির সেবায় পুলিশ কনস্টেবল জসিম যেভাবে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে গেলেন, তা বাংলাদেশ পুলিশকে, একইসঙ্গে পরিবারকেও গর্বিত করবে। এই মহাদুর্যোগে মুহূর্তে সম্মুখ সারিতে থেকে সাহস, দৃঢ়তা রেখে যে জাতি ও দেশকে ডিএমপির তথা পুলিশের একজন সদস্য হিসেবে যে সহযোগিতা তিনি করে আসছিলেন, এটা আসলে গর্বের মৃত্যু বলে আমি মনে করি। তার মৃত্যু পুলিশের প্রত্যেকটি সদস্যকে গর্বিত করবে, উৎসাহিত করবে, কাজের মনোবলকে আরও বাড়িয়ে দেবে’-বলেন ওয়ারী ডিসি ইফতেখার আহমেদ।
সানবিডি/এসকেএস