অন্যান্যবারের মতো রাজপথে কোন মিছিল নেই, জনসভা নেই, ফেস্টুন নেই, ব্যানার নেই। এমনকি লাল ঝাণ্ডা হতে কোনো শ্রমিককে দেখা গেল না। না থাক,তবুও আজ মহান মে দিবস। রাজপথে সশরীরে উপস্থিত হয়ে মিছিল, মিটিং ও জনসভা না করতে পারলেও মন থেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাই পালন করছেন এই দিনটি।
মহান এই দিবসটি উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। টেলিভিশন এবং রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করছে। মহাবিপর্যয় বয়ে আনা করোনাভাইরাসের কারণে এবার ভিন্নভাবে পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস।
প্রতিবছর এ দিনটি এলেই সারাবিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক, শ্রমিক সংগঠন, সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নেমে আসে রাজপথে লাল ঝান্ডা হতে। ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, পল্টন, নয়া পল্টন, তোপখানা রোড, জাতীয় প্রেস কাবের সামনে, মতিঝিল শাপলা চত্বরে দেখা যায় মিছিলরত মানুষ আর মানুষ। এছাড়া শ্রমিক-অধ্যুষিত এলাকা নারায়ণগঞ্জ, ডেমরা, সায়েদাবাদ, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভারসহ বিভিন্ন শিল্প- কলকারখানা এলাকাগুলোতে শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বের হয়ে দিবসটি পালন করতেন। কিন্তু করোনাভাইরাস এবার মে দিবসের দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে। এবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও শ্রমিক সংগঠন সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে মহান মে দিবস পালনের জন্য বিবৃতি দিয়েছে।
আজ সরকারি ছুটির দিন। প্রতিবার রাষ্টীয়ভাবে দিবসটি পালন উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করলেও এবার করোনার কারণে কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়নি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি প্রতিবারই এই দিনটিতে বড় বড় শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করলেও এবার করোনার কারণে সকল সমাবেশের কর্মসূচি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, মহান মে দিবস সারাবিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের ঐক্য ও সংহতির প্রতীক।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশের মতো শ্রমনিবিড় উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা ও হৃদ্যতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে লড়াই সংগ্রাম করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন (সংশোধন) আইন ২০১৩’ ও বিধি, জাতীয় শিশু শ্রম নিরসন নীতি, জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি নীতিমালা এবং গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি প্রণয়ন করেছি। শিল্প কারখানায় বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পে সার্বিক নিরাপত্তা সন্তোষজনক রাখতে মানসম্মত ও যথাযথ পরিদর্শন ও মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করেছি।
এসব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সুফল শ্রমজীবী মানুষ পেতে শুরু করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে লাগসই প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও ব্যবহার এবং উন্নত ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর।
মহান মে দিবসের এই দিনে চলমান সংকটে কর্মহীন, খেটে খাওয়া, শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের সকল বিত্তবান ও স্বচ্ছল মানুষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার দেয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। একই সঙ্গে করোনা সংকটের এই সময়ে শ্রমিকদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি ও সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মতো নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য শিল্প মালিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নিজ নিজ অবস্থানে থেকেই মহান মে দিবস পালন করার আহ্বান জানিয়েছে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এক ভিডিও বার্তায় মহান মে দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেণিসহ শ্রমজীবী-মেহনতি মানুষকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
১৮৮৬ সালের এই দিনে শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজের অধিকারের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের সব শিল্প এলাকায় ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। আন্দোলন চলাকালে শিকাগোর হে মার্কেটের সামনে বিশাল শ্রমিক জমায়েতে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ১১ শ্রমিক। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র ছাড়িয়ে ওই শ্রমিক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে গোটাবিশ্বে। গড়ে ওঠে শ্রমিক-জনতার বৃহত্তর ঐক্য। তীব্র আন্দোলনের মুখে শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
অধিকার আদায়ে শ্রমিকদের আত্মত্যাগের স্মরণে ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে দিনটিকে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের সব দেশেই দিবসটি পালন করা হয়।