চলমান পবিত্র রমজান মাসে রাজধানীর পাইকারি বাজারগুলোতে নিম্নমুখী হয়ে উঠেছে চালের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ধরনভেদে পণ্যটির দাম কমেছে মণপ্রতি সর্বনিম্ন ৩৭ থেকে সর্বোচ্চ ১৪৯ টাকা পর্যন্ত। এক্ষেত্রে দাম সবচেয়ে বেশি কমেছে আটাশ ও মিনিকেট চালের। চালের দাম কমতির দিকে থাকায় এবারো বোরো মৌসুমে ধানের দাম নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে কৃষকদের।
বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, মিনিকেট চালের দাম মণপ্রতি ১৪৯ টাকা কমেছে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর পাইকারি বাজারে এ জাতের প্রতি মণ চালের দাম ছিল ২ হাজার ১৫ টাকা। রবিবার তা নেমে এসেছে ১ হাজার ৮৬৬ টাকায়। আটাশ চালের দামও কমেছে একই পরিমাণে। চালটি এখন মণপ্রতি ১ হাজার ৬৪২ থেকে কমে ১ হাজার ৪৯৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে গুঁটি চালের দাম কমেছে মণে ৩৭ টাকা। চালটি বর্তমানে প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫৩০ টাকা দরে। মঙ্গলবারের বাজারে এর মূল্য ছিল ১ হাজার ৫৬৭ টাকা। এছাড়া নাজিরশাইল চালের দাম মণে ৩৭ টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৩ টাকায়।
এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা জানান, ভোক্তাদের মধ্যে যেসব চালের চাহিদা বেশি, মূলত সেগুলোরই দাম কমেছে। সরকারিভাবে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে চাল বিতরণ কর্মসূচি চালু থাকার পাশাপাশি অনেকেই আগে কিনে মজুদ করায় বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কমেছে। ফলে বাজারে চাহিদা কমে গিয়ে এসব চালের দাম কমে গিয়েছে।
চালের এসব জাতের মধ্যে আটাশ ও মিনিকেট চালের দাম কমেছে সবচেয়ে বেশি। এসব চাল মূলত ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ জাতের ধান থেকে উৎপাদন করা হয়ে থাকে। ভোক্তা পর্যায়ে অধিক জনপ্রিয় হওয়ায় দেশের কৃষকরাও এ দুটি জাতের চালই আবাদ করে থাকেন সবচেয়ে বেশি। বাজারে পর্যাপ্তসংখ্যক ক্রেতা না থাকায় মিলগুলোয় যদি এ দুই জাতের ধানের চাহিদা কমে যায়, সেক্ষেত্রে এবার কৃষকের বোরো মৌসুমে ধানের দাম পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
এ বিষয়ে নওগাঁ ধান্য-চাউল আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা চন্দন বলেন, ক্রেতা সংকটে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম কমেছে কেজিতে ৪-৭ টাকা পর্যন্ত। ভালো মানের পাইজাম, নাজির ও চিনিগুড়া ছাড়া সব ধরনের চালের দাম গত দুই সপ্তাহ ধরেই কমতির দিকে। করোনাকালে নানা সংকটের কারণে চালকল থেকে চাল ছাড়তে পারছি না। এ কারণে মিলাররাও এখন প্রতিদিনই চালের দাম কমাতে বাধ্য হচ্ছেন। তারা চাল বিক্রি করতে না পারায় আমরাও কৃষকের কাছ থেকে খুব বেশি ধান কিনতে পারছি না। বাজার স্বাভাবিক না হলে ধান কেনায় গতিও আসবে না।
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বোরো মৌসুমে সারা দেশে মোট ২ কোটি ৪ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৭ লাখ ৬৬ হাজার হেক্টর। এরই মধ্যে হাওড় জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চলের ধান কাটা শেষ হয়েছে প্রায় ৮৫ শতাংশ। দেশের অন্যান্য জেলার ধানও কাটা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে সারা দেশে প্রায় ২০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। এসব ধান কৃষকরা বিভিন্ন ফড়িয়া ও ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি শুরু করেছেন। কিন্তু সেসব ধানের দাম এখনো প্রতি মণ ৫৫০-৭৫০ টাকার মধ্যে রয়েছে। মূলত মিলগুলো সংগ্রহ না করার কারণেই এখনো ধানের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা।
রাজধানীর চালের বাজারে রবিবার আরো যেসব চালের দাম কমতির দিকে রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে জিরাশাইল চালের দাম প্রতি মণে কমেছে ৩৭ টাকা। এ জাতের চালের দাম মণপ্রতি ২ হাজার ৯০ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৩ টাকায়। বাসমতী চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এখনো এক সপ্তাহ আগের ২ হাজার ২৩৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে চালটি। চিনিগুড়া চালের মণপ্রতি দাম ৩ হাজার ৫৪৫ থেকে ১৯ টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫২৭ টাকায়। তবে কাটারিভোগ চালের দাম ৭৫ টাকা বেড়ে মণপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬০ টাকায়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি জাকির হোসেন রনি বলেন, গত মাসে মানুষের বাড়তি মজুদ প্রবণতার কারণে চালের দাম বাড়তির দিকে ছিল। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে বাজারে চালের দাম কমে এসেছে। মূলত মিলাররা চালের দাম কমানোর কারণে রাজধানীর পাইকারি বাজারে চালের দাম কমেছে। ভোক্তা চাহিদা কমে আসায় আমাদের কাছে চালের আমদানি এখন অনেকটাই কম। সরকারের ধান চাল সংগ্রহ কার্যক্রমে গতি আনার মাধ্যমে বাজার ঠিক করতে হবে। তা নাহলে কৃষকরা এবারের বোরো মৌসুমেও ধানের ন্যায্য দাম পাবেন না।
সানবিডি/এনজে