অব্যাহত দরপতনে বিধ্বস্ত পুঁজিবাজার। দেশের অর্থনীতির বিপরীত স্রোতে দিকহীন বীমা খাত। একের পর এক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কেলেঙ্কারির ঘটনায় আর্থিক খাতে ভঙ্গুর পরিস্থিতি। আমদানি-রফতানিতেও নিম্নমুখী ধারা। প্রত্যাশা অনুযায়ী আদায় হচ্ছিল না রাজস্ব। সব মিলিয়ে অর্থনীতির এক কঠিন সময়ে নভেল করোনাভাইরাসের আঘাত আসে বাংলাদেশে। স্বাভাবিকভাবেই রাজস্ব সুবিধা দিয়ে এ পরিস্থিতি মোকাবেলার মতো অবস্থায় ছিল না সরকার। ফলে অর্থনীতি রক্ষার দায়িত্বটা এসে পড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর। আর অর্পিত এ দায়িত্ব এখন পর্যন্ত বেশ ভালোভাবেই সামাল দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
দেশের এই স্থবির অর্থনীতিতে প্রাণের সঞ্চার ঘটাতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন নির্দেশনা আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। করোনা ইস্যুতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক ৯৮টি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনার সে প্যাকেজকে প্রায় ১ লাখ কোটিতে উন্নীত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত গঠন করা হয়েছে প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল। নিজস্ব তহবিল থেকেই এ অর্থের জোগান দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব মিলিয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে অর্থনীতিতে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি নতুন ঋণ জোগানোর লক্ষ্য নিয়েই কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে টেনে তুলতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ কর্মতত্পরতা সুখকর বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। তিনি বলেন, মানবিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের এ সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে তত্পরতা দেখাচ্ছে, তা সুখের কথা। তবে বড় শিল্প ও সেবা খাতের প্রণোদনার অর্থ পাওয়ার তালিকা থেকে স্বঘোষিত ঋণখেলাপিদের বাদ দিতে হবে। যেসব ঋণখেলাপি ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে কিছুদিন আগে ঋণ পুনঃতফসিল করেছেন, তারা স্বঘোষিত ঋণখেলাপি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, যারা তিনবারের বেশি ঋণখেলাপি হয়েছেন, তারা প্রণোদনা তহবিলের ঋণ পাবেন না। তবে আমি মনে করি, তিনবার নয়, বরং দুবারের বেশি ঋণখেলাপি হয়েছে, এমন প্রতিষ্ঠানকে প্রণোদনা প্রাপ্তির তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য এ অর্থনীতিবিদের পরামর্শ হলো কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতের জন্য গঠিত ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিলের পুরোটাই বাংলাদেশ ব্যাংক পুনঃঅর্থায়ন তহবিল হিসেবে দিতে পারে। একই সঙ্গে এ খাতের উদ্যোক্তারা যাতে সহজে ঋণ পান তা নিশ্চিত করা দরকার। এজন্য লিড এজেন্সি হিসেবে এসএমই ফাউন্ডেশন বা পিকেএসএফকে নিয়োগ দেয়া যায়।
করোনার প্রকোপে মার্চের শুরু থেকেই সরবরাহ চেইন ভাঙতে শুরু করে। এতে চাল, ডাল, তেল, চিনি থেকে শুরু করে প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে শাকসবজি। এমন পরিস্থিতিতেও ব্যাংকিং খাতের কার্যক্রম ঠিকঠাক ছিল এবং এখনো আছে।
মার্চের শুরু থেকেই নগদ টাকা তোলার জন্য গ্রাহকদের ভিড় বাড়তে থাকে ব্যাংকগুলোতে। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নগদ টাকার সরবরাহ ঠিক রেখে ব্যাংকিং লেনদেন স্বাভাবিক রাখা। এখন পর্যন্ত এ চ্যালেঞ্জে দক্ষতার সঙ্গেই মোকাবেলা করতে পেরেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের কোনো অঞ্চলে ব্যাংক থেকে গ্রাহক টাকা পায়নি, এমন অভিযোগ এখনো শোনা যায়নি। বরং বাজার থেকে পুরনো নোট তুলে নিতে এরই মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ছাপিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
২৬ মার্চ সরকারি ছুটি শুরু হওয়ার পর দাবি উঠেছিল কিছুদিনের জন্য ব্যাংক বন্ধ রাখার। কিন্তু সে দাবিতে কর্ণপাত না করে এখন পর্যন্ত একদিনের জন্যও ব্যাংক বন্ধ রাখতে দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে প্রণোদনা ভাতাসহ বড় অংকের বীমা সুবিধা দেয়া হয়েছে। এতে ঝুঁকি মাথায় নিয়েও গ্রাহকদের সেবা দিতে উৎসাহিত হয়েছেন ব্যাংকাররা।
বাজারে নগদ অর্থের প্রবাহ বাড়াতে ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণের হার (সিআরআর) ১ দশমিক ৫০ শতাংশ কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বাজারে বেড়েছে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকার নগদ অর্থ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো যাতে কম সুদে ঋণ পায় এজন্য কমানো হয়েছে নীতি সুদহার (রেপো)। ৬ শতাংশ থেকে রেপোর সুদহার নামিয়ে আনা হয়েছে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে। এতে কম সুদে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারছে ব্যাংকগুলো। একই সঙ্গে ব্যাংকের হাতে থাকা অতিরিক্ত সরকারি সিকিউরিটিজ কিনে নেয়ার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে সহজে বিনিময়যোগ্য সম্পদ (এসএলআর) সংরক্ষণের পর অতিরিক্ত সরকারি সিকিউরিটিজ থাকলে তা প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বাজারমূল্যে বিক্রি করতে বলা হয়। বর্তমানে দেশের ব্যাংকগুলোর হাতে এসএলআরের অতিরিক্ত সরকারি সিকিউরিটিজ আছে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের সীমাও (এডিআর) ২ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর এডিআর ৮৫ থেকে ৮৭ শতাংশ এবং ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর আইডিআর ৯০ থেকে ৯২ শতাংশ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত সিআরআর, রেপো, সরকারি সিকিউরিটিজ ও এডিআরের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো ব্যাপক মাত্রায় উপকৃত হয়েছে। এসব সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো নিজে থেকেই ৭০-৮০ হাজার কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ করার সুযোগ পেয়েছে। বেশি সুদের সরকারি বিল-বন্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রেখে কম সুদে রেপোতে ঋণ পাচ্ছে। এর মাধ্যমেও ব্যাংকগুলো ভালো মুনাফা করতে পারছে। লুণ্ঠনের চিন্তা বাদ দিয়ে যদি ব্যাংকগুলো সঠিক গ্রাহককে ঋণ দিতে পারে, তাহলে কোনো ব্যাংকেরই মুনাফা কমবে না।
দেশের বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল গঠনের। সে ঘোষণার বাস্তবায়ন করতে এরই মধ্যে বিশেষ তহবিল গঠন করে নীতিমালা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় গ্রাহকদের ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোর জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, সিএমএসএমই খাতের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল গঠন করে নীতিমালা প্রকাশ করেছে। এ প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্যও ১০ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাত এবং সিএমএসএমই খাতের ৫০ হাজার কোটি টাকা ঋণের অর্ধেকই কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দিয়েছে।
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঋণগ্রহীতাদের বড় ধরনের ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণ ও সুদ পরিশোধের বিষয়ে এ ছাড় দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ঋণের অর্থ পরিশোধ না করলেও কোনো ঋণগ্রহীতাকে খেলাপি করা হবে না। একই সঙ্গে এপ্রিল ও মে মাসের ব্যাংকঋণের সব সুদ স্থগিত থাকবে। এ দুই মাসের সুদকে ব্লকড হিসাবে স্থানান্তর করতে হবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ সুদ কোনোভাবেই গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করা যাবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম মনে করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিস্থিতির দাবি অনুযায়ী ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছে। সরকার যেসব প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছে, তার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে তারল্যপ্রবাহ নিশ্চিত করছে। আবার একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি যাতে না হয়, সেদিকেও লক্ষ রাখছে। দেশের ব্যাংকিং সেবা নিরবচ্ছিন্ন রাখার পাশাপাশি প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সরকার ঘোষিত সব প্রণোদনা প্যাকেজের নীতিমালাও দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে মাত্রায় তত্পরতা দেখিয়েছে, তাতে সরকারের সহযোগিতায় দেশের অর্থনীতি শিগগিরই ঘুরে দাঁড়াবে।
সরকারের হাতে অর্থ না থাকায় অর্থনীতিকে টেনে তোলার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘাড়েই পড়েছে বলে মনে করেন সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, জনগণকে নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করার পরিস্থিতিতে সরকার নেই। রাজস্ব ঘাটতির কারণে সরকারকেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চলতে হচ্ছিল। এ পরিস্থিতিতে করোনার আঘাত সরকারের জন্য বিপদ বাড়িয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এনবিআরও কোনো ভ্যাট, ট্যাক্স বাড়াতে পারবে না। তাই বাধ্য হয়েই অর্থনীতিকে টেনে তোলার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়েছে।
এ অর্থনীতিবিদের পর্যবেক্ষণ, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক যে কাজ করেছে, তা অনেকটাই গতানুগতিক। পুরনো ছকের বাইরে গিয়ে নতুন কিছু দেখা যাচ্ছে না। জারীকৃত নীতিমালাগুলোও সুস্পষ্ট নয়। প্রজ্ঞাপন জারির পরদিনই একই প্রজ্ঞাপনে সংশোধন আনা হচ্ছে। এতে কাজের সমন্বয়হীনতাই ফুটে উঠেছে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরো গোছানো ও বাস্তবতার আলোকে সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানান সাবেক এ গভর্নর। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরো শক্তিশালী করার তাগিদও দেন তিনি।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বের প্রায় সব দেশেরই আমদানি-রফতানি বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। এ পরিস্থিতিতে রফতানির অর্থ দেশে আনা ও আমদানি দায় পরিশোধের মেয়াদ বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৮০ দিন বাড়ানো হয়েছে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির আওতায় স্বল্পমেয়াদি সাপ্লায়ার্স ও বায়ার্স ক্রেডিটের মেয়াদ। রফতানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে ৯০ দিন।
প্রি-শিপমেন্ট রফতানি সহায়তার জন্য গঠন করা হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল। এ তহবিল থেকে ৩ শতাংশ সুদে ঋণ পাবে ব্যাংকগুলো। আর ব্যাংকগুলো গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, রফতানি উন্নয়ন তহবিলের আকার ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে এ তহবিলের আকার ছিল সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার। এ তহবিলে সুদহার কমিয়ে ২ শতাংশে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। তহবিলে যুক্ত হওয়া দেড় বিলিয়ন ডলার বা ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা জোগান দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানের জন্য গঠিত ইউরো গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ডের আকার ২০০ থেকে বাড়িয়ে ৪০০ মিলিয়নে উন্নীত করা হয়েছে। কমানো হয়েছে এ ফান্ডের সুদহারও।
করোনার তাণ্ডবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি খাতের জন্যও স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথমে মৌসুমভিত্তিক ফুল ও ফল চাষ, মত্স্য, পোলট্রি, ডেইরি, প্রাণিসম্পদ খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়। এ তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন গ্রাহকরা।
একই সঙ্গে ধান, গমসহ সব দানা শস্য, অর্থকরী ফসল, শাকসবজি ও কন্দাল (আলু, কচু) জাতীয় ফসল চাষেও ৪ শতাংশ রেয়াতি সুদে কৃষকদের ঋণ দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। করোনাভাইরাসে সৃষ্ট ক্ষতি থেকে দেশের কৃষকদের প্রণোদনা দেয়ার অংশ হিসেবে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ১ এপ্রিল থেকে কৃষকদের মধ্যে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ শতাংশ সুদ ভর্তুকি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ স্কিমের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এ হিসেবে কৃষি খাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভর্তুকির পরিমাণও ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ছাড়াবে।
ঘোষিত কোনো প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যেই পড়ে না এমন নিম্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের জন্যও স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, কৃষক এবং প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের এ তহবিল থেকে ঋণ দেয়া হবে। ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বিতরণ করা এ ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৯ শতাংশ।
পরিবেশবান্ধব পণ্য বা প্রকল্পের জন্য গঠিত পুনঃঅর্থায়ন তহবিলে অর্থের পরিমাণ দ্বিগুণ করা হয়েছে। ২০০ কোটি টাকার বিশেষ এ তহবিল উন্নীত করা হয়েছে ৪০০ কোটি টাকায়। এ তহবিল থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ পরিবেশবান্ধব পণ্য বা প্রকল্পে অর্থায়ন করা হবে। সূত্র-বণিক বার্তা