মারণঘাতি করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও যাতে চালু রাখা যায়, সেজন্য একটি কারিগরি নির্দেশনা প্রস্তুত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন পেশা ও প্রতিষ্ঠানের জন্য স্বল্প, মধ্যম ও উচ্চঝুঁকি বিবেচনায় আলাদা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সুপারিশ উঠে এসেছে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের তৈরি করা এ নির্দেশনায়।
দেশে চলমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সহযোগিতার জন্য গত ২৮ মার্চ আটজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞকে দায়িত্ব প্রদান করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। দেশের বিভিন্ন বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গৃহীত স্বাস্থ্যসেবা প্রস্তুতি ও অন্যান্য কার্যক্রম কার্যকর, পর্যালোচনা এবং যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মতভাবে বৃদ্ধির জন্য পরামর্শ চাওয়া হয় তাদের কাছে। কভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ের প্রস্তুতির সঙ্গে সংগতি রেখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করতেও বলা হয় তাদের। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই বিশেষজ্ঞ দলটি চীন ও অন্যান্য দেশের সংশ্লিষ্ট কারিগরি নির্দেশনাগুলো অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা করে বাংলাদেশের জন্য এ কারিগরি নির্দেশনাটি প্রণয়ন করেছে।
কভিড-১৯ পরিস্থিতির সম্পূর্ণ সমাপ্তি না ঘটা পর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যবসাকেন্দ্র এবং ব্যক্তি পর্যায়ে যেখানে যেমন ঝুঁকি রয়েছে (অর্থাৎ স্বল্প, মধ্যম ঝুঁকি ও উচ্চঝুঁকি) সেখানে তেমনভাবে কারিগরি নির্দেশনা বাস্তবায়ন ও প্রতিপালন করতে বলেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তবে এ নির্দেশনায় যা-ই থাকুক না কেন, সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে ঘোষিত কঠোর, মধ্যম বা স্বল্প মাত্রার পদক্ষেপগুলো যথাযথ মেনে চলতে হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কারিগরি নির্দেশনায়।
বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট ভবন, অফিস স্পেস, হোটেল, শপিংমল, ব্যাংক, রেস্টুরেন্ট, সেলুন, কৃষিজাত দ্রব্যের বাজার ও গ্রাম্য হাট-বাজার, পার্ক, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান, মেডিকেল কোয়ারেন্টিন ও পর্যবেক্ষণ এলাকা, রেল, সড়ক, নৌপথে যাত্রী পরিবহন, সিভিল এভিয়েশন, বাস, ট্যাক্সি, ব্যক্তিগত গাড়ি, বিদেশ থেকে ফেরা বা দূরবর্তী স্থান থেকে আগত লোকজনের জন্য স্থানান্তর যানবাহন, রিকশা ও ত্রিচক্র যান, ওয়ার্ড, গ্রাম, পাড়া বা মহল্লা, কারখানা (গার্মেন্টস, হোশিয়ারি, চামড়া ও টেক্সটাইল ইত্যাদি), নির্মাণ শিল্প, ডাক ও এক্সপ্রেস বিতরণ শিল্প, সরকারি অফিস, শিশু যত্ন কেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বৃদ্ধ নিবাস, কারাগার, মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, প্রবীণ নাগরিক, গর্ভবতী মা, শিশু, শিক্ষার্থী, নিজ প্রয়োজনে চিকিৎসা প্রাপ্তি, পুলিশ সদস্য, কোম্পানি স্টাফ, কাস্টমস (অভিবাসন পরিদর্শন, স্বাস্থ্য এবং কোয়ারেন্টিন কর্মচারী, ড্রাইভার, কুরিয়ার সেবা, ইউটিলিটি সেবা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, বাবুর্চি, নিরাপত্তা কর্মী, স্যানিটেশন ব্যবস্থা কর্মী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, খাদ্য পরিবেশনকারী প্রতিটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এ কারিগরি নির্দেশনায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, কারিগরি নির্দেশনা তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্তরা যেহেতু সবাই জনস্বাস্থ্য বিষয়ের বিশেষজ্ঞ, সেহেতু তাদের সম্মিলিতভাবে দেশের করোনা পরিস্থিতির গতিবিধি পর্যবেক্ষণপূর্বক ভবিষ্যৎ প্রক্ষেপণ, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু রাখার সম্ভাব্য উপায় এবং সতকর্তামূলক কী কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে পরামর্শ দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই চীন ও অন্যান্য দেশের সংশ্লিষ্ট কারিগরি নির্দেশনাগুলো অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা করে বাংলাদেশের জন্য এ কারিগরি নির্দেশনাটি প্রণয়ন করেছেন তারা।
দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে সরকার প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করে। সব ধরনের যানবাহন চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। শপিংমলও বন্ধ রাখতে দেয়া হয় নির্দেশনা। সেই ছুটির মেয়াদ এরই মধ্যে ১৬ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। প্রথমে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পরে তা ২ ঘণ্টা শিথিল করে রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা করা হয়।
এদিকে ঈদ সামনে রেখে সীমিত পরিসরে শপিংমল খোলা রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এতে বাড়বে জনসমাগম। এসব বিষয় সামনে রেখে তৈরি করা হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কারিগরি নির্দেশনাটি।
গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে নভেল করোনাভাইরাসসংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটির এক বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু স্বাভাবিকভাবেই এখন মার্কেট খোলা হচ্ছে, গার্মেন্টস খোলা হয়েছে, দোকানপাটে আনাগোনা বাড়ছে, কাজেই সংক্রমণ যে বৃদ্ধি পাবে এটা আমরা ধরেই নিতে পারি।