চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বিশ্ববাজারে সব মিলিয়ে ৫২ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালের এপ্রিলে রফতানি করেছিল ৩০৩ কোটি ৪২ লাখ ১০ হাজার ডলারের পণ্য। চলতি বছর মার্চে বাংলাদেশ থেকে ২৭৩ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছিল। ২০১৯ সালের মার্চে রফতানি হয় ৩৩৪ কোটি ২ লাখ ৩০ হাজার ডলারের পণ্য।
চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস থেকে রফতানি প্রবৃদ্ধির যে নেতিবাচক ধারা শুরু হয়। কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের আগে ফেব্রুয়ারিতেও যা অব্যাহত ছিল। নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে মার্চে নেতিবাচক ধারার মাত্রা আরো বেড়ে যায়। রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান বলছে, মার্চে বাংলাদেশের সব পণ্যের রফতানি কমেছে ১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। আর এপ্রিলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। রফতানি কমেছে ৮২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যের ভিত্তিতে হালনাগাদ রফতানি পরিসংখ্যান গণমাধ্যমে প্রকাশ করে ইপিবি। তবে বর্তমানে সাধারণ ছুটি চলমান থাকায় সংস্থাটি প্রভিশনাল উল্লেখ করে শুধু ওয়েবসাইটে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
একক মাসের বিস্তারিত পরিসংখ্যান প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করে না ইপিবি। সমন্বিত পরিসংখ্যান প্রতিবেদনটিতে দেখা যায় চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল, ১০ মাসে বিশ্ববাজারে ২ হাজার ৯৪৯ কোটি ৩৮ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ৩ হাজার ৩৯৩ কোটি ৭২ লাখ ৩০ হাজার ডলারের পণ্য। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ৪৪৪ কোটি ৩৩ লাখ ৯০ হাজার ডলারের রফতানি কম হয়েছে। অর্থাৎ ১০ মাসের হিসাবে রফতানি কমেছে ৮২ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে বিশ্ববাজারে ২ হাজার ৮৯৭ কোটি ৩৮ লাখ ৩০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ৩ হাজার ৯০ কোটি ৩০ লাখ ২০ হাজার ডলারের পণ্য। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ১৯২ কোটি ৯১ লাখ ৯০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি কম হয়েছে। অর্থাৎ নয় মাসের হিসাবে রফতানি ঋণাত্মক বা কমেছে ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রফতানির নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির এ ধারা শুরু হয়, ১০ মাস শেষেও যা অব্যাহত আছে। করোনার প্রাদুর্ভাবের প্রভাবে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির মাত্রা আরো বেড়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ইতিবাচক। জুলাইয়ে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। জুলাই-আগস্ট দুই মাসে শুরু হয় নেতিবাচক ধারা। ওই দুই মাসে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশ। তিন মাস শেষে প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে রফতানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। অর্থবছরের পাঁচ মাস শেষেও রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এরপর চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে প্রবৃদ্ধি হয় ঋণাত্মক ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
রফতানি খাতের শীর্ষ তিন পণ্য হলো পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত এবং পাট ও পাটজাত পণ্য। অর্থবছরের ১০ মাসের পরিসংখ্যান বলছে, পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি বাড়লেও কমেছে পোশাক এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি। তবে দেশের মোট রফতানির ৮৪ শতাংশ অবদান রাখা পণ্য পোশাকের রফতানি কমার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক রফতানিতে। করোনার প্রাদুর্ভাবে একের পর এক কার্যাদেশ বাতিল ও ক্রেতা দেশগুলোর লকডাউন পরিস্থিতিতে রফতানি আরো কমেছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এপ্রিলের রফতানিতে প্রাদুর্ভাবের প্রভাব বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ মার্চের ২৬ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশের রফতানি কার্যক্রম কম-বেশি সচল ছিল কিন্তু এপ্রিলের সারা মাসই বন্ধ ছিল কারখানা।
ইপিবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১০ মাস শেষে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি বেড়েছে ১৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। চামড়াজাত পণ্যের রফতানি কমেছে ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ। শুধু এপ্রিলে চামড়াজাত পণ্য রফতানি কমেছে ৮২ দশমিক ৪৭ শতাংশ, চামড়াজাত পাদুকা রফতানি কমেছে ৭৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
রফতানি কমে যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে লেদার অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি মো. সায়ফুল ইসলাম বলেন, চামড়াজাত পণ্যের রফতানি প্রধান বাজারের মধ্যে আছে ইউরোপের জার্মানি, ইতালি ও ফ্রান্স। এছাড়াও আছে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান। এ দেশগুলোর রিটেইলার, চেইন স্টোর্স ও শপ বন্ধ ছিল। চাহিদা একেবারে শূন্য। ওয়ার্ল্ড ফুটওয়্যারসংক্রান্ত সমীক্ষা অনুযায়ী ২০২০ সালে ফুটওয়্যার কনজাম্পশন ২২ দশমিক ৫ শতাংশ কমার পূর্বাভাস রয়েছে।
চাহিদা কমে যাওয়ার পাশাপাশি রফতানি কমে যাওয়া প্রসঙ্গে বিক্রয়কেন্দ্রগুলো সম্পর্কে একই ধরনের মত দিয়েছেন পোশাক রফতানিকারকরা। সংশ্লিষ্ট সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, ৩০০ কোটি ডলারের বেশি ক্রয়াদেশ বাতিল-স্থগিত করেছেন পোশাক পণ্যের ক্রেতারা।
ইপিবির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পোশাক চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে রফতানি হয়েছে ২ হাজার ৪৪৭ কোটি ৮৩ লাখ ৯০ হাজার ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয় ২ হাজার ৮৪৯ কোটি ৭ লাখ ডলারের পোশাক। এ হিসাবে ১০ মাসে পোশাক রফতানি কমেছে ১৪ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।
মাসভিত্তিক রফতানি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত রফতানি প্রবৃদ্ধির নেতিবাচক ধারা অব্যাহত ছিল। এ সময় যথাক্রমে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক ১১ দশমিক ৪৯, ৭ দশমিক ৩, ১৭ দশমিক ১৯ ও ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ। ডিসেম্বরে রফতানি প্রবৃদ্ধি কিছুটা ইতিবাচক ধারায় ফিরে হয়েছে ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। জানুয়ারিতে আবারো নেতিবাচক ধারায় ফিরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ১ দশমিক ৭ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে আবারো নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যার হার ঋণাত্মক ১ দশমিক ৮ শতাংশ। মার্চে মোট রফতানি কমেছে ১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। তবে সর্বশেষ এপ্রিলে কমেছে ৮২ দশমিক ৮৫ শতাংশ।