হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা ২০১৮ সালে এক অস্বাভাবিক রোগীর সন্ধান পান। ৫৬ বছর বয়সী ওই রোগী ছিলেন একজন পুরুষ। চিকিৎসকরা দেখতে পান, তার যকৃতের (লিভার) ক্রিয়াকলাপ খুবই অস্বাভাবিক। অবশ্য একবার তার যকৃত প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল।
পরীক্ষার পর দেখা গেল, ওই ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হেপাটাইটিস-ই’র সঙ্গে লড়াই করছে। তবে মানুষের শরীরে যে ধরনের হেপাটাইটিস-ই ভাইরাস (এইচইভি) সংক্রমণ ঘটায় তার নমুনা বা হিউম্যান স্ট্রেন খুঁজে পাননি চিকিৎসকরা।
হেপাটাইটিস-ই যকৃতের রোগ। এ রোগের লক্ষণ জ্বরের পাশাপাশি যকৃত বড় হয়ে যাওয়া। এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসের চারটি ধরন শনাক্ত করা গেছে। বিভিন্ন প্রাণির মধ্যে এ ভাইরাস থাকে। তবে এই চার ধরনের ভাইরাসের মধ্যে একটি ভাইরাস মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে বলে জানা গেছে।
ওই ব্যক্তির শরীরে হেপাটাইটিস-ই’র অস্তিত্ব না পাওয়া গেলেও ভাইরাসটির সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার লড়াইয়ের বিষয়টি আমলে নেন চিকিৎসকেরা। তারা ফের নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেন।
দ্বিতীয় দফার পরীক্ষার ফল হাতে পাওয়ার পর রীতিমতো চমকে ওঠেন চিকিৎসকরা। তারা দেখতে পান, ওই ব্যক্তি আসলে ইঁদুর বাহিত হেপাটাইটিস-ই’তে আক্রান্ত। মানুষের শরীরে ইঁদুর বাহিত হেপাটাইটিস-ই সংক্রমণের ঘটনা ইতিহাসে এটিই প্রথম।
ইঁদুর থেকে মানুষের শরীরে হেপাটাইটিস সংক্রমিত হওয়ার বিষয়টি প্রথম যিনি শনাক্ত করেন তিনি সিদ্ধার্থ শ্রীধর। তিনি মাইক্রোবায়োলজিস্ট ও হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক। সিদ্ধার্থ বলেন, হঠাৎ করেই আমরা এমন একটি ভাইরাসের সন্ধান পেয়েছি যা রাস্তার ইঁদুর থেকেও মানুষে মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে।
মানুষের শরীরে ইঁদুরের হেপাটাইটিস আবিষ্কার করে বিস্মিত হয়ে যান চিকিৎসক-বিজ্ঞানীরা। তবে সেই ঘটনাটি ছিল শুরু মাত্র। এরপর হংকংয়ের আরও ১০ বাসিন্দার শরীরের ইঁদুরবাহিত হেপাটাইটিস-ই ধরা পড়ে, যা এইচইভি নামেও পরিচিত।
শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, হংকংয়ে সর্বশেষ গত সপ্তাহে ৬১ বছর বয়সী এক ব্যক্তির শরীরে এইচইভি শনাক্ত করা হয়েছে। তবে চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের ধারণা, অঞ্চলটিতে এমন আরও অনেকে এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন কিন্তু তাদের পরীক্ষা করে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মানুষের শরীরে যে ধরনের হেপাটাইটিস-ই ভাইরাস (এইচইভি) পাওয়া যায় তার সংক্রমণ ঘটে দূষিত পানির মাধ্যমে। তবে ইঁদুর থেকে মানুষের শরীরে কীভাবে এইচইভি ঢুকছে তা এখনও অজানা।
হংকংয়ে সর্বশেষ যে ব্যক্তিটি এইচইভি’তে আক্রান্ত হয়েছেন তাকে নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা শুরু হয়েছে। কিন্তু তার বাড়িতে ইঁদুরের মল তো দূরের কথা কোনো ইঁদুরই খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যেও কোনো ধরনের উপসর্গ নেই। এমনকি তারা সম্প্রতি কোথাও ভ্রমণও করেননি।
হংকং সেন্টার ফর হেলথ প্রটেকশন (সিএইচপি) এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। শহর কর্তৃপক্ষ নতুন এই হুমকি সম্পর্কে বোঝার চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে হংকংয়ের হাসপাতালগুলোতে কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোনো রোগীকে সন্দেহ হলে চিকিৎসকরা যেন এইচইভি পরীক্ষা করান সে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ইঁদুরের সংখ্যা নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই রোগটি যে শুধু হংকংয়েই আটকে থাকবে তা মনে করার কোনো কারণ নেই। এটি নিউইয়র্ক বা প্যারিসে ছড়িয়ে পড়তে পারে যে কোনো সময়। ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কিনা তাও কেউ জানে না। কারণ এই রোগটির কোনো পরীক্ষা করা হচ্ছে না। এই রোগটি সম্পর্কে মানুষ একেবারেই কিছু জানে না। সামান্য জ্বর হলে কে-ই বা কিৎসকের কাছে যাবেন পরীক্ষা করতে।
শ্রীধর বলেন, ‘আমি মনে করি, ২০১৮ সাল না, তার অনেক আগে থেকেই এ রোগের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। হংকংয়ে যে ১১ জনকে শনাক্ত করা গেছে তারা সম্ভবত বিশাল এক হিমবাহের ছোট্ট অগ্রভাগ মাত্র’।
সানবিডি/এসকেএস