বিশ্বব্যপী মহামারী করোনা (কোভিড-১৯) ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকালে নিরলস পরিশ্রম ও সাধারণ মানুষের পাশে থেকে আন্তরিকতার সাথে সেবা দেয়ার স্বীকৃতি পেলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সাজেদা বেগম পলিন। তাকে 'করোনা জেনারেল' উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে।
এ উপাধি দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাঃ হাসান শাহ্রিয়ার কবীর ডাঃ সাজেদা বেগম পলিনসহ চট্টগ্রাম বিভাগের ১৪ জন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে এই উপাধি দেন।
গত ৬ মে বিভাগীয় পরিচালক জাতির এই ক্রান্তিকালে মানবতার সেবায় নিজেদেরকে উৎসর্গ করায় ওইসব স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে 'করোনা জেনারেল' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের ছবিসহ সোস্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেন। বিভাগীয় পরিচালক ডাঃ হাসান শাহ্রিয়ার কবীর ১৪ জন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে 'করোনা জেনারেল' উপাধি দিয়ে বলেন, 'আমাদের চট্টগ্রাম বিভাগের এক ঝাঁক করোনা জেনারেল। স্যালুট তোমাদের, এ ক্রান্তিলগ্নে আর্তমানবতার পাশে নির্ভিক জেনারেল হিসেবে দাঁড়ানোর জন্যে।'
এই স্বীকৃতি প্রাপ্তির বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় ডাঃ পলিন তার বিভাগীয় পরিচালক স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আসলে কাজ করি নিজের তাগিদে। আমরা চিকিৎসকরা মানবসেবার যে ব্রত নিয়ে এ পেশায় যোগদান করেছি, সেটি যদি কর্মক্ষেত্রে এসে বাস্তবে রূপ দিতে পারি, তখন নিজের কাছে ভালো লাগে। দেশের জনগণের প্রতি আমার যে দায়বদ্ধতা, তা পূরণ করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করি। কোভিড-১৯ নামে যে মহামারী আমাদের উপর চেপে বসেছে, এমন দীর্ঘ সময়ের মহামারী আমরা জনগণ অতীতে কখনো মোকাবেলা করিনি। একটু অসাবধানতা এবং অসতর্কতার কারণে যে কোনো সময় যে কেউ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। এমন ঝুঁকি নিয়েও আমরা কাজ করছি, জনগণের পাশে থাকছি। যখন যে মুহূর্তে ডাক আসে, তখনই ছুটে যাই কর্তব্য পালনে। এ জন্যে ডাঃ পলিন তাঁর সহকর্মীদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, ডাঃ সাজেদা বেগম পলিন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার আগ থেকেই এটি নিয়ে কাজ করছেন। প্রথমে বিদেশ থেকে দেশে চলে আসা লোকদের চিহ্নিত করে তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে তথা তাঁর তত্ত্বাবধানে থাকা মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেন। এরপর শুরু হয় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হতে করোনার উপসর্গ থাকা মানুষদের থেকে স্যাম্পল কালেকশান করার কাজ। এ ক্ষেত্রেও ডাঃ সাজেদা বেগম পলিন নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। শুধু তাই নয়, করোনা উপসর্গ নিয়ে অথবা করোনায় আক্রান্ত হয়ে সদর উপজেলার কেউ মারা গেলে বিশেষ ব্যবস্থায় তাদের দাফন কাফনের কাজটি সম্পন্নও তার তত্ত্বাবধানে হয়ে থাকে। একই সাথে করোনায় আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তির বাসা-বাড়ি লকডাউন করা এবং তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার কাজটিও তিনি স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয় করে সম্পন্ন করার দায়িত্ব সুচারুরূপে করে আসছেন। তবে সবচেয়ে ব্যতিক্রম যে কাজটি তিনি করেছেন, সেটি হচ্ছে- তিনি 'কোভিড-১৯ হেল্পলাইন ইউএইচএফপিও, চাঁদপুর সদর' নামে একটি ফেসবুক পেইজ চালু করে প্রতিদিন এর মাধ্যমে জনগণের সামনে করোনাভাইরাস বিষয়ে স্বাস্থ্য বার্তা তুলে ধরছেন। প্রতিদিন অভিজ্ঞ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ এই পেইজে লাইভে এসে আবার অনেকে ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে জনগণের উদ্দেশে করোনাভাইরাসের নানা বিষয়ে কথা বলে থাকেন, বিভিন্ন জনের প্রশ্নের উত্তরও দিয়ে থাকেন। ডাঃ পলিন নিজেও লাইভে আসেন এবং তাঁর অধীনস্থ সহকারী সার্জনগণ পর্যায়ক্রমে আসেন লাইভে। লাইভ প্রোগ্রামগুলোতে দেখা গেছে যে, শুধু করোনাভাইরাস নয়, অন্যান্য রোগ-ব্যাধি এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়েও চিকিৎসকগণ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেন। ডাঃ পলিনের এই উদ্যোগটি বেশ সাড়া পেয়েছে এবং প্রশংসা কুড়িয়েছে। এই লাইভ প্রোগ্রামের সর্বোচ্চ ভিউআর ৭০ হাজার এবং শেয়ার দুই হাজারের মতো হতে দেখা গেছে। করোনার সময়ে তার এসব যুগান্তকারী পদক্ষেপের কারণেই তাকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে 'করোনা জেনারেল' হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
এই স্বীকৃতি প্রাপ্তিতে ডাঃ সাজেদা বেগম পলিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাঃ হাসান শাহ্রিয়ার কবীর, চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহসহ স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি মনে করেন, এই স্বীকৃতি তার মনোবলকে আরো বাড়িয়ে দেবে।
ডাঃ সাজেদা বেগম পলিনের স্বামী আড়াইশ' শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ও করোনাভাইরাস বিষয়ে ফোকালপার্সন ডাঃ এএইচএম সুজাউদ্দৌলা রুবেলও একইভাবে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। জেলার সবচেয়ে বড় এই চিকিৎসাঙ্গনে এই ক্রান্তিলগ্নে ঝুঁকির মাঝেও ডাঃ রুবেল দিনরাত করোনা নিয়ে কাজ করছেন।
সানবিডি/এসকেএস