তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বিএনপি'র উদ্দেশে বলেছেন, 'দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করার আগে ইউরোপ-আমেরিকা-ভারত-পাকিস্তানের পরিস্থিতির দিকে তাকান, তাহলেই তাদের তুলনায় আমাদের পরিস্থিতিটা বুঝতে পারবেন।' এসময় দেশের গণমাধ্যম বিষয়ে মন্তব্যকারী কূটনীতিকদের উদ্দেশে তথ্যমন্ত্রী বলেন, অন্যের বিষয়ে বলার আগে নিজের দেশের প্রশ্নগুলো নিরসন করাই শ্রেয়।
রোববার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সমসাময়িক বিষয়ে সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসকল কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের সময়োচিত নানা পদক্ষেপের কারণে এখনও অনেক দেশের তুলনায় আমাদের দেশে পরিস্থিতি ভালো। কিন্তু যেকোনো পরিস্থিতিই তৈরি হতে পারে, মারাত্মক আকারও ধারণ করতে পারে। সেজন্যও সরকার নানাধরণের প্রস্তুতি নিয়েছে এবং নিচ্ছে। সেইসাথে জনগণকে প্রতিদিন পরিস্থিতি অবহিত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার আহবানে সরকারের পাশাপাশি দলের নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিরা ইতোমধ্যেই প্রায় ১ কোটি মানুষের কাছে ত্রাণ ও নগদ সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন এবং তা অব্যাহত রয়েছে।'
অথচ গত কয়েকদিন ধরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদসহ বিএনপি নেতারা নানাধরণের কথা বলে আসছেন, উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন, ‘তাদের এই কথা বলার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, সরকার ভালো উদ্যোগগুলো যাতে বাধাগ্রস্ত হয়। সেই লক্ষ্য নিয়েই তারা এসব কথা বলছে। অথচ এই সময় বাদানুবাদের রাজনীতি কোনভাবেই কাম্য নয়।’
পৃথিবীর অন্যান্য দেশে সমস্ত রাজনৈতিক দল এই দুর্যোগের মধ্যে সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য তারা এগিয়ে এসেছে; এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সোনিয়া গান্ধী অর্থাৎ কংগ্রেস সভাপতি ও বিরোধী কংগ্রেস জোটের চেয়ারপার্সন চিঠি দিয়ে তাদের সরকারের নানা উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন এবং সরকারকে এই বৈশ্বিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সহযোগিতা করার জন্য চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, অথচ আমাদের দেশে বিএনপি এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের নেতৃবৃন্দ এই কাজটি করতে ব্যর্থ হয়েছে’, জানান তথ্যমন্ত্রী।
আবার অনেককে দেখি, তারা গণমাধ্যমে খুব সোচ্চার, কিন্তু একমুঠো চাল নিয়েও তারা জনগণের কাছে যাননি, মানুষের পাশে দাঁড়াননি; আর বিএনপিও কিছু ফটোসেশনের মধ্যই ব্যস্ত’ মন্তব্য করেন তিনি।
আর আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিএনপি ঢাকা শহরে কিছু লোক দেখানো ফটোসেশন করা ছাড়া আসলে জনগণের পাশে যেভাবে দাঁড়ানো প্রয়োজন ছিল এবং তাদের সামর্থ্য ছিল, সেই অনুযায়ী তারা দাঁড়ায়নি’ বলেন তিনি।
এদিকে দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কয়েকজন বিদেশি কূটনীতিকদের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতসহ সাতজন রাষ্ট্রদূত টুইট করে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন। এ ব্যাপারে মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইতোমধ্যেই তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন যে, দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে তাদের এই টুইট করে কথা বলা কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘনের শামিল।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মানবাধিকার নানা বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময় যে কূটনীতিকরা কথা বলেন, আমি তাদেরকে অনুরোধ জানিয়ে বলবো, তাদের দেশের স্ব-স্ব দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়েও বিশ্বব্যাপী নানা প্রশ্ন আছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু এবং বিভিন্ন কারাগারে বন্দিদের ওপর নির্যাতনে বিশ্বব্যাপী নানা প্রশ্ন আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের ওপর নির্যাতন এবং তাদের ওপর বেআইনী আচরণ নিয়ে বহুপ্রশ্ন বহুদিন ধরে বিশ্বব্যাপী আছে, যেগুলো নিরসন অনেক বেশি জরুরি বলে অনেকে মনে করেন।’
অন্য দেশের ব্যাপারে প্রশ্ন তোলার আগে নিজের দেশের ব্যাপারে যে প্রশ্নগুলো আছে সেগুলো নিরসন করাই বরং জনগণ তথা বিশ্ববাসী প্রত্যাশা করে বলে নিজস্ব অভিমতও তুলে ধরেন তথ্যমন্ত্রী। সেইসাথে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ‘বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। আমাদের এই স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কোন বিদেশি রাষ্ট্রদূতের কথা বলা কূটনৈতিক শিষ্টাচার বর্হিভূত।’
সানবিডি/এসকেএস