চলমান করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকে বার্ষিক লভ্যাংশ (ডিভিডেন্ড) ঘোষণার নতুন নীতিমালা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ নীতিমালা অনুসারে, মূলধন সংরক্ষণের ভিত্তিতে তিনটি ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদসহ মোট ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে ব্যাংকগুলো। তবে ২০১৯ সালের সমাপ্ত বছরের ঘোষিত লভ্যাংশ ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে বিতরণ করা যাবে না।
সোমবার (১১ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপরভিশন থেকে এ সংক্রান্ত এক সার্কুলার জারি হয়েছে।
ঘোষিত নীতিমালা অনুসারে, ২০১৯ সালে ব্যাংকগুলোর মুনাফার বিপরীতে লভ্যাংশ ঘোষণার বিষয়টি নির্ভর করবে ওই ব্যাংকের মূলধন ভিত্তির ওপর। সবচেয়ে ভালো মূলধন থাকা একটি ব্যাংক ১৫ শতাংশ নগদসহ সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে। পর্যায়ক্রমে যে ব্যাংকের মূলধন এর চেয়ে কম সে ব্যাংক ততো কম লভ্যাংশ দেবে। তবে সবক্ষেত্রে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লভ্যাংশ বিতরণের ওপর বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে শীর্ষ চাপ হতে উত্তরণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন প্রণোদনা ঘোষণা করেছে; তা বাস্তবায়নে কার্যকর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতে সৃষ্ট চাপ মোকাবিলা করে ব্যাংকগুলো যেন বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিতে যথার্থ অবদান রাখতে পারে সেই লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর মুনাফা বণ্টন না করে মূলধন শক্তিশালী করার মাধ্যমে পর্যাপ্ত তারল্য বাজার বজায় রাখা একান্ত অপরিহার্য।
ব্যাংকগুলোর আর্থিক সক্ষমতা এবং ব্যাংকের শেয়ারের বিনিয়োগকারীদের রিটার্নের বিষয়টি সার্বিকভাবে বিবেচনা করে ২০১৯ সালের সমাপ্ত বছরের জন্য ব্যাংকের শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ দেয়ার এ নতুন নীতিমালা কেন্দ্রীয় ব্যাংক জারি করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান নিয়মে একটি ব্যাংকের মোট ঝুঁকি ভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি নূন্যতম সে পরিমাণ মূলধন হিসাবে রাখতে হয়। এর বাইরে আপৎকালীন সুরক্ষা সঞ্চয় (কনজারভেশন বাফার) হিসেবে ব্যাংকগুলোকে ২০১৬ সাল থেকে অতিরিক্ত মূলধন রাখতে হচ্ছে। গত ডিসেম্বর শেষে আপৎকালীন সঞ্চয়সহ প্রতিটি ব্যাংকের মূলধন সংরক্ষণের কথা সাড়ে ১২ শতাংশ। বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোতে মূলধন নির্ধারিত সীমার বেশি থাকলেও সরকারি ব্যাংকের প্রভাবে সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতের মূলধন সংরক্ষণের হার দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
ব্যাংকের ডিভিডেন্ড ঘোষণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে নির্দেশনা দিয়েছে তা হলো, ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক হতে ২০১৯ সালে মূলধন সংরক্ষণে কোনো সুবিধা না নিয়ে যেসব ব্যাংক আড়াই শতাংশ আপৎকালীন সুরক্ষা সঞ্চয়সহ (কনজারভেশন বাফার) কমপক্ষে সাড়ে ১২ শতাংশ বা তারও বেশি মূলধন সংরক্ষণ করেছে ওই সব ব্যাংক তাদের সামর্থ অনুসারে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদসহ ৩০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারবে।
মূলধন সংরক্ষণে কোনো সুবিধা না নিয়ে যেসব ব্যাংক আড়াই শতাংশ আপৎকালীন সুরক্ষা সঞ্চয়সহ (কনজারভেশন বাফার) কমপক্ষে ১১ দশমিক ২৫ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ পর্যন্ত মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে সে সকল ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে তাদের সামর্থ অনুসারে সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ শতাংশ নগদসহ মোট ১৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারবে।
সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক হতে ২০১৯ সালে মূলধন সংরক্ষণে যারা সুবিধা নিয়েছে তারা তা সমন্বয় করার পর যদি আপৎকালীন সুরক্ষা সঞ্চয়সহ (কনজারভেশন বাফার) ১১ দশমিক ২৫ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ পর্যন্ত মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়, তাহলে সেসব ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে তাদের সামর্থ অনুসারে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ নগদসহ মোট ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারবে। এছাড়া যাদের আপৎকালীন সুরক্ষা সঞ্চয়সহ ন্যূনতম মূলধন ১১ দশমিক ২৫ শতাংশের কম বা ন্যূনতম মূলধন ১০ শতাংশ হবে তারা সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ স্টক (বোনাস) ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারবে।
২০১৯ সালের সমাপ্ত বছরের ঘোষিত লভ্যাংশ ব্যাংকগুলো ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে বিতরণ করতে পারবে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে সার্কুলারে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ (২০১৮ পর্যন্ত সংশোধিত) এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জারি করা সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে, যেসব ব্যাংক ২০১৯ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীর ভিত্তিতে ইতিপূর্বে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে সে সব ব্যাংক ঘোষিত ডিভিডেন্ডের পরিমাণ সার্কুলের নির্দেশনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে তা স্থগিত করে যথাশীঘ্রই সংশোধন করতে হবে।
সানবিডি/এসকেএস