করোনাভাইরাসের কারণে বিনা শর্তে প্রণোদনা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রবাসী-আয় প্রেরণের সীমা বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে প্রতিবারে ৫ হাজার ডলার অথবা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের কাগজপত্র লাগবে না। সেই সঙ্গে ৫ লাখ টাকার ওপরে রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিলের সময়সীমাও দেড় মাস বাড়ানো হয়েছে। ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে প্রেরিত রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে এই সুবিধা প্রযোজ্য হবে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সুবিধা বলবৎ থাকবে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
জানা গেছে, মহামারি ভাইরাসের কারণে গত ফেব্রুয়ারি থেকে দেশের রেমিটেন্স আসা কমে গেছে। সেই সঙ্গে চলমান পরিস্থিতিতে সাধারণ ছুটিতে ব্যাংকের কার্যক্রম সীমিত পরিসরে চালু থাকায় বিভিন্ন দেশ থেকে আগের আসা বড় অঙ্কের রেমিটেন্স প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল সাপেক্ষে তোলার ক্ষেত্রেও জটিলতা তৈরি হয়েছে। সবকিছু বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণ উৎসাহিত করতে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের থেকে রেমিট্যান্স দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। প্রবাসীরা বৈধ পথে ১০০ টাকা দেশে পাঠালে ১০০ টাকার সঙ্গে ২ টাকা যোগ করে ১০২ টাকা তুলতে পারছেন। প্রণোদনার অর্থ পরিশোধে এজন্য চলতি অর্থবছরের বাজেটে তিন হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, এতোদিন দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত পাঠানো অর্থের বিপরীতে রেমিট্যান্সের নগদ প্রণোদনা পাওয়ার জন্য কোনো কাগজপত্র লাগতো না। তবে দেড় লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্সের নগদ প্রণোদনা পাওয়ার জন্য রেমিট্যান্স প্রেরকের পাসপোর্টের কপিসহ বিভিন্ন কাগজপত্র দাখিল করতে হতো। এতোদিন প্রণোদনা পেতে হলে রেমিট্যান্স প্রেরণকারিকে রেমিট্যান্স প্রেরণের বিপরীতে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিস্ট ব্যাংকের শাখায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হতো। এখন সেই সময় বাড়িয়ে ২ মাস করা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত নতুন সার্কুলারে বলা হয়েছে, বর্তমানে সার্বিক অবস্থায় গ্রাহকের সুবিধা বিবেচনা করে রেমিট্যান্সের উপর প্রতিবারে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার ডলার বা পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ প্রেরণের জন্য কাগজপত্র ছাড়াই প্রণোদনা সুবিধা পাবে। এ সুবিধা ২০১৯ সালের ১ জুলাই হতে কার্যকর হবে।
সার্কুলারের আরো বলা হয়েছে, পাঁচ লাখ টাকার অধিক রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে প্রাপক কর্তৃক ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি দাখিলের সময়সীমা দুই মাস পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো। আগামী ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সুবিধা বহাল থাকবে। এছাড়া আগের সার্কুলারের অন্যান্য নির্দেশনা অপরিবর্তিত থাকবে বলে নতুন সার্কুলারে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে যেসব দেশ থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসে, তার সবগুলোতোই ছড়িয়েছে করোনা ভাইরাস। করবোনার কারণ অনেক প্রবাসীই ঘরে আটকে থাকায় কাজ করতে পারছেন না বলে তাদের আয়ের রাস্তাওও বন্ধ। অনেকে কাজ না করে বেতন পেলেও তা দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারছেন না। ফলে দীর্ঘদিন ইতিবাচক ধারায় থাকা এই সূচকটিও এখন পতনের ধারায় রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি, মার্চ এবং সর্বশেষ এপ্রিলে টানা কমেছে রেমিট্যান্স। তারপরও জুলাই থেকে এপ্রিল অর্থবছরের এই ১০ মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিটেন্সে ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রয়েছে। যদিও ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে রেমিট্যান্সে এ প্রবৃদ্ধি ছিল ২০ শতাংশের বেশি। আর মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে ছিল ১৬ শতাংশ। তবে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সে সূচকেও পতন শুরু হয়েছে।
সানবিডি/এসকেএস