দেশে ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে মারণঘাতি নভেল করোনাভাইরাস।ভয়ঙ্কর এই ভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশের ১৭টি হাসপাতালের আইসোলেশন ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) স্থাপন ও পরীক্ষাগারের উন্নয়নে অর্থায়ন করছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক জনস্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তা মোকাবেলায় সরকারকে সহায়তা করার জন্য ১০ কোটি ডলারের বা প্রায় ৮৫০ কোটি টাকার ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে।
বুধবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন পারকাশ বাংলাদেশ ও এডিবির পক্ষে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেন। এডিবির পরিচালনা পর্ষদ গত ৩০ এপ্রিল এ সহায়তা অনুমোদন করে।
জানা গেছে, এ প্রকল্পের মাধ্যমে ১৭টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসোলেশন ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট স্থাপনের জন্য যন্ত্রপাতি ও উপকরণের সহযোগিতা করবে। কমপক্ষে ১৯টি পরীক্ষাগারের সক্ষমতা এবং গুণগত মান কভিড-১৯ মোকাবেলায় মাইক্রোবায়োলজিক্যাল ডায়াগনস্টিক সুবিধা দিয়ে আপগ্রেড করা হবে। স্বাস্থ্য খাতের কমপক্ষে ৩ হাজার ৫০০ জন কর্মী, যার প্রায় ৫০ শতাংশ নারী, তারা আধুনিক দক্ষতা এবং জ্ঞানের প্রশিক্ষণ পাবেন।
এ ব্যাপারে মনমোহন পারকাশ বলেন, বাংলাদেশের একজন বিশ্বস্ত উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে এ মহামারীর সময় পাশে থাকতে পেরে আমরা সন্তুষ্ট। প্রাদুর্ভাব পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে এবং এই সহায়তা স্বল্প ও মাঝারি ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাতের চ্যালেঞ্জ হ্রাসে সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে। বাস্তববাদী নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং স্বাস্থ্য খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সংস্কারের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে মোকাবেলা করা হবে বলে আমি আত্মবিশ্বাসী।
কভিড-১৯ মহামারী আর্থসামাজিক উন্নয়নে দেশের সাম্প্রতিক সাফল্যকে চ্যালেঞ্জ করেছে। এ অর্থায়নের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সরঞ্জাম, চিকিৎসা সরবরাহ, ডায়াগনস্টিক সিস্টেম সরবরাহ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের দক্ষতা উন্নীতকরণে সহযোগিতা করবে। যার মাধ্যমে কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় স্বাস্থ্যকর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। কভিড-১৯ মোকাবেলা করার জন্য এ অর্থায়নের মাধ্যমে জরুরি সহায়তা প্রকল্প হিসেবে পরীক্ষার জন্য সরঞ্জাম এবং সরবরাহগুলোর তাত্ক্ষণিক ক্রয় করা সম্ভব হবে। চিকিৎসা অবকাঠামোগত উন্নতি এবং সেগুলোর নজরদারির মাধ্যমে কভিড প্রতিরোধ করতে সহায়তা করবে।
কভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় দ্রুত সাড়া দেয়ার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে এডিবি চিকিৎসা সরবরাহ ও সরঞ্জাম সংগ্রহের জন্য সাড়ে ৩ লাখ ডলারের একটি জরুরি অনুদান অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া বিদ্যমান একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ২২ হাজার ৬১৯ প্রশিক্ষণার্থীকে তাদের একযোগে নগদ সহায়তা প্রদানের জন্য ১৩ লাখ ডলারের অনুমোদন দিয়েছে। একই সঙ্গে জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরবরাহ ক্রয়কে বেগবান করার জন্য অতিরিক্ত অনুদান সহায়তাও অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১৩ এপ্রিল কভিড-১৯-এর প্রাথমিক ফান্ডের আকার তিন গুণ বাড়িয়ে ২০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করে এডিবি। এডিবির বিকাশমান সদস্য দেশগুলো দ্বারা সৃষ্ট মারাত্মক সামষ্টিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলায় সহায়তা করার জন্য সহায়তার দ্রুত এবং আরো নমনীয়ভাবে অর্থ সরবরাহের জন্য কার্যকর পদক্ষেপগুলো অনুমোদন দিয়েছে। বার্ষিক ১ শতাংশ হারে সুদের চার্জ এডিবির সাধারণ মূলধন সংস্থান থেকে সংগ্রহ করা হবে। যার মেয়াদ হবে ৪০ বছরের, যেখানে ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ড থাকবে। রিপেইমেন্টের ক্ষেত্রে গ্রেস পিরিয়ডের পর প্রথম ১০ বছরের জন্য সুদের হার ২ শতাংশ এবং পরের প্রতি বছরের জন্য ৪ শতাংশ সুদ ধার্য করা হয়েছে।