চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে থাকা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পণ্যভর্তি কন্টেইনার ছাড় না নিলে আগামীকাল রবিবার থেকে চারগুণ হারে জরিমানা আরোপ করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সাধারণ ছুটির শুরুর পর গত ২৬ মার্চ থেকে আজ ১৬ মে পর্যন্ত ৬০ দিন বিনা মাশুলে পণ্যভর্তি কন্টেইনার ছাড়ের সুযোগ পেয়েছিল দেশের সব আমদানিকারকরা। দীর্ঘ ৬০ দিনে যে পরিমাণ কন্টেইনার ছাড় হওয়ার আশা করেছিল তার সামান্যই পূরণ হয়েছে। এই অবস্থায় কন্টেইনার জট স্বাভাবিক করতে বাধ্য হয়ে নির্ধারিত হারের চারগুণ জরিমানা আরোপ করতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বন্দরে শীতাতাপনিয়ন্ত্রিত কন্টেইনার রাখার স্থান সংকুলান না হওয়ায় বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজ ভিড়ানোর নতুন কৌশল নিয়েছে। সেটি হচ্ছে, বহির্নোঙরে যে জাহাজে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কন্টেইনার বেশি আছে সেই জাহাজকে দেরিতে বন্দর জেটিতে ভিড়তে বা বার্থিং দিচ্ছে। এতে বহির্নোঙরে পণ্যবাহী কন্টেইনার জাহাজের শৃঙ্খলা ভাঙছে। বার্থিং পিছিয়ে দিচ্ছে ফলে কোনো জাহাজ ১৪ দিন অপেক্ষার পর জেটিতে ভিড়ার অনুমতি পাচ্ছে না আবার কোনো জাহাজ ৪ দিন সময় নিয়েই জেটিতে ঢুকে পড়ছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, বন্দরে অন্য আমদানি পণ্য যথেষ্ট ছাড় নিলেও শীতাতপনিয়ন্ত্রিত রেফার কন্টেইনার ছাড় নেওয়ার হার খুবই কম। এসব কন্টেইনারে নিরবচ্ছিন্ন শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা সচল রাখতে বিদ্যুত সংযোগ ১৬ শ থেকে বাড়িয়ে ২৬ শ'তে উন্নীত করেছি। এরপরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি; এখনও ধারণক্ষমতার বেশি রেফার কন্টেইনার রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমদানি ফল, আদা-রসুন-পেঁয়াজ এবং মাছভর্তি এসব কন্টেইনার সঠিক সময়ে ছাড় না নেওয়ায় আমরা জাহাজ থেকে নতুন করে কন্টেইনার নামাতে পারছি না। ফলে বন্দরে আসা জাহাজগুলোর বাড়তি সময় লাগছে; বহির্নোঙরে থাকা জাহাজগুলোর অপেক্ষমাণ সময় বেড়ে যাচ্ছে। এই কারণে আজ ১৬ মে'র মধ্যে কন্টেইনার ছাড় না নিলে আগামীকাল থেকে চারগুণ হারে জরিমানা আরোপ করা হবে।
জানা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটির ঘোষণার পর থেকেই চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ছড় কমতে থাকে। বন্দর কর্তৃপক্ষ পুরোদমে সচল রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও আমদানিকারকরা ছাড় না নেওয়ায় কন্টেইনার জমতে থাকে। একপর্যায়ে তা ধারণক্ষমতার বেশি হয়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে হস্তক্ষেপ করা হয়। এরপর কাস্টমস সচল করা হয় পুরোদমে, ব্যাংকিং কর্মঘণ্টা বাড়ানো হয়, বন্দর থেকে পণ্য ছাড়ে শতভাগ মাশুল মাফ করা হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া তিন দফা মাশুল ছাড়ের মেয়াদ আজ ১৬ মে শেষ হচ্ছে। পণ্যছাড়ে এতবড় সুবিধা দিলেও চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জটের খুব বেশি উন্নতি হয়নি। এই অবস্থায় নতুন করে শতভাগ মাশুল ছাড়ের মেয়াদ না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এখনও সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে চেষ্টা করে মেয়াদ আরো বাড়ানোর তদবির করছে।
বন্দরের হিসাবে, মোট কন্টেইনার রাখার ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার একক। এর বিপরীতে কন্টেইনার জমে আছে ৪৬ হাজার একক। আর গতকাল ১৫ মে কন্টেইনার ছাড় হয়েছে ৪ হাজার ১ শ একক।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস