দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্রবীমার কোন বিকল্প নেই। আমাদের দেশে বর্তমানে ক্ষুদ্রবীমা বড় সমস্যা। অথচ এই ক্ষুদ্রবীমাই হয়ে উঠতে পারে দারিদ্র বিমোচনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। তবে এর জন্য প্রয়োজন হবে সুনির্দিষ্ট আইন, সরকারের সহযোগিতা এবং কোম্পানিগুলোর আন্তরিকতা।
ক্ষুদ্রবীমাকে একটি কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে। কাঠামোটি এমন হতে পারে যে, গ্রাহক এ প্রকল্প হতে স্বাস্থ্য, সঞ্চয় ও ঝুঁকি এ তিনটি সেবাই পাবেন। এর জন্য বাস্তব সম্মত প্রিমিয়াম হার নির্ধারণ, ব্যয় হার, প্রিমিয়াম সংগ্রহ পদ্ধতি- একটি নীতিমালায় আনতে হবে। ক্ষুদ্রবীমাকে লোকসান প্রকল্প নয়, লাভজনক প্রকল্পে উন্নীত করতে হবে।
কিন্তু এসবের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হচ্ছে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব। ক্ষুদ্রবীমা গ্রাহকের সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণও এটি। ক্ষুদ্রবীমা সম্পর্কে সঠিক ধারণা না দিয়ে পলিসি করানো এবং গ্রাহকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী মুনাফা দিতে না পারায় বীমা গ্রাহকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। বীমা সম্পর্কে নেতিবাচক তথ্য প্রচার করছে ভুক্তভোগী এসব গ্রাহক।
এ জন্য দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল গড়ে তোলার ওপর সবাইকে গুরুত্ব দিতে হবে। কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে আরো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বীমাখাতে কাজ করতে আগ্রহী ও যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করতে হবে। যথাযথ মূল্য দিতে হবে তাদের পরিশ্রমের। পেশাগত মূল্য বাড়াতে হবে। দূর করতে হবে চাকরির অনিশ্চয়তা। তাহলে শুধু ব্যাংক নয়, বীমার দিকেও আগ্রহী হবে যোগ্যরা।
বর্তমানে বীমা কোম্পানিগুলো ক্ষুদ্রবীমাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে। ক্ষুদ্রবীমায় ভর করে যারা অনেক দূর এগিয়েছে, তারাও এখন ক্ষুদ্রবীমাকে বাদ দিচ্ছে। নতুন কোম্পানিগুলোর তো অনুমোদনই নেই। অথচ লাইফ বীমা ব্যবসার ১২ শতাংশ পর্যন্ত সামাজিক খাতে পরিচালনার নির্দেশনা রয়েছে। যারা ক্ষুদ্রবীমা ব্যবসা করে আসছে তারা বলছে, এতে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। কিন্তু আসলে সমস্যা আমাদের পদ্ধতিগত।
প্রিমিয়াম জমা দেয়া বা সংগ্রহে সহজ মাধ্যম ব্যবহার করতে হবে। যাতে ঘরে বসেই গ্রাহক তার প্রিমিয়াম জমা দিতে পারে। নিশ্চিত হতে পারে তার পলিসির সম্পর্কে। এতে ব্যবসা সংগ্রহের খরচ কমে আসবে, জনবল কম লাগবে। তবে যারা কাজ করবে তাদেরকে অবশ্যই দক্ষ ও প্রশিক্ষিত হতে হবে। লেনদেন হতে হবে নিরাপদ মাধ্যমে। এর জন্য প্রয়োজন কঠোর নীতিমালা। পাশাপাশি ক্ষুদ্রবীমার প্রিমিয়ামের সর্বনিম্ন পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে। কারণ, মানুষের সক্ষমতা এখন বেড়েছে।
অন্যান্য দেশে নানাভাবে তাদের জনগণকে বীমার আওতায় আনার চেষ্টা করছে। স্বাস্থ্যসেবা দিতে বীমাকেই তারা প্রাধান্য দিচ্ছে। আমাদের দেশেও দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে বীমার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্রবীমা হতে পারে শক্তিশালী মাধ্যম। সরকার প্রয়োজনে প্রিমিয়ামের একটি অংশ বহন করতে পারে। এতে দরিদ্র জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনি তাদের আর্থিক চাপও লাঘব হবে।
জেনিথ ইসলামী লাইফে ক্ষুদ্রবীমাকেও আমরা একই সমান গুরুত্ব দেই। একই ধরণের সুযোগ সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করি ক্ষুদ্রবীমার ক্ষেত্রে। জেনিথ লাইফে মাসিক ৩শ' টাকা দিয়ে ৩০ হাজার টাকার ঝুঁকি নেয়া যায়। এখানে এসবি সুবিধাও রয়েছে।গ্রাহক নিয়মিত এসএমএস পেয়ে থাকেন, অনলাইনে দেখতে পান।এসএমএস তথ্য জানা যায়। আমরা চেষ্টা করছি ক্ষুদ্রবীমা গ্রাহকদের আরো সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর।
জেনিথ লাইফ এটা নতুন প্রতিষ্ঠান, আকারেও ছোট। তাই দেশের বাইরে বীমা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আইডিয়া আদান-প্রদান হয়ে ওঠেনি। তবে আমরা বীমা ব্যবসায় আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার চেষ্টা করছি। এজন্য বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকাণ্ড ও অভিজ্ঞতা আমরা নানাভাবে অনুসরণের চেষ্টা করি।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও সম্মেলনে অংশ নেয়ার চেষ্টা করি। এখন পর্যন্ত ভারত, নেপাল, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, সৌদি আরবসহ মোট ৬টি দেশের অনুষ্ঠানে যোগদান করতে পেরেছি। তবে এগুলো ছিল তাকাফুল বিষয়ে ক্ষুদ্রবীমার ওপর।তবে আগের প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্ষুদ্রবীমা ব্যবসা থাকায় এ বিষয়ে কাজের সুযোগ হয়েছে। অভিজ্ঞতা হয়েছে কাজের মাধ্যমে।অতিমাহারী অবস্থা পর এই বীমা জনপ্রিয় হবে আমরা বিশ্বাস করি ও বেকারত্ব বিমোচন করা যাবে সবচেয়ে বেশী।সরকারের দারিদ্র বিমোচন সহজ হবে।
সিইও
জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।
zaman15april@gmail.com