আগামীকাল রাতে আঘাত হানতে পারে
দক্ষিণ-পূর্ব ও তত্সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় আম্পান ক্রমে শক্তিশালী হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এটি আরো শক্তি সঞ্চয় করে আগামীকাল দিবাগত রাতে উপকূলে আঘাত হানতে পারে এবং পরদিন ভোরে উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করতে পারে। এতে দেশের ২৫টি জেলায় ফসলের বিভিন্ন মাত্রায় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য আঘাত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে ১১টি বিশেষ কৃষি আবহাওয়াবিষয়ক পরামর্শ দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই), যেখানে পরিপক্ব বোরো ধান, সবজি ও ফল দ্রুত ঘরে তুলতে বলা হয়েছে।
ডিএইর বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, যদি ঘূর্ণিঝড় আম্পান তার গতি ও দিক পরিবর্তন না করে, তাহলে ২০ মে ভোরে উপকূল এলাকা অতিক্রম করতে পারে। এ সময় ২৫টি জেলার ফল ও ফসলের মাঠ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। জেলাগুলো হচ্ছে বাগেরহাট, বান্দরবান, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, ফেনী, গোপালগঞ্জ, যশোর, ঝালকাঠি, খাগড়াছড়ি, খুলনা, লক্ষ্মীপুর, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নড়াইল, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, রাঙ্গামাটি, সাতক্ষীরা ও শরীয়তপুর। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এ ২৫টি জেলায় ১৯ থেকে ২১ মে পর্যন্ত ঝড়ো হাওয়া এবং হালকা থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। দণ্ডায়মান ফসলের ওপর ঝড়ের হাওয়া এবং ভারি বৃষ্টিপাত প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে ফল ও ফসল রক্ষায় ডিএই যে ১১টি নির্দেশনা দিয়েছে সেগুলো হচ্ছে বোরো ধান ৮০ ভাগ পরিপক্ব হয়ে গেলে দ্রুত সংগ্রহ করে ফেলতে হবে, সংগ্রহ করা ফসল পরিবহন করা না গেলে গাদা করে পলিথিন শিট দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে, যেন ঝড়ো হাওয়া ও ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, দ্রুত পরিপক্ব সবজি ও ফল সংগ্রহ করে ফেলতে হবে, বালাইনাশক প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে হবে।
এছাড়া পানির স্রোত থেকে রক্ষার জন্য বোরো ধানের জমির আইল উঁচু করে দিতে হবে, নিষ্কাশন নালা পরিষ্কার রাখতে হবে, যেন জমিতে পানি জমে থাকতে না পারে। খামারজাত সব পণ্য নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে। আখের ঝাড় বেঁধে দিতে হবে। পাশাপাশি কলা ও অন্যান্য উদ্যানতাত্ত্বিক ফসল এবং সবজির জন্য খুঁটির ব্যবস্থা করতে হবে। পুকুরের চারপাশে জাল দিয়ে ঘিরে দিতে হবে, যাতে ভারি বৃষ্টিপাতে পানিতে মাছ ভেসে না যায়। গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি শুকনো ও নিরাপদ জায়গায় রাখতে হবে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্র গমন থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এদিকে আগামীকাল দিবাগত রাতে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানতে পারে জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যালোচনা অনুযায়ী যদি ঘূর্ণিঝড় আম্পান তার গতি ও দিক পরিবর্তন না করে, তাহলে ১৯ মে দিবাগত রাতে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোয় আঘাত হানতে পারে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় যেন মানুষজনকে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা যায়, সে লক্ষ্যে এবার আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপকূলীয় জেলার জেলা প্রশাসকদের এরই মধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস