১৮মার্চ ২০২০ থেকে করোনা সংকটের জন্য দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ বৈশ্বিক মহামারি থেকে আমাদের শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দেবার জন্যই সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কবে স্বাভাবকি অবস্থা ফিরে আসবে সেটা অনিশ্চিত। এতে করে আমাদের শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে অনেকটা সময় পার হয়ে যাচ্ছে। সেটা বিবেচনা করেই মাননীয় শিক্ষামন্ত্রনালয় কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যেমন প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত সংসদ টিভির মাধ্যমে ক্লাশ পরিচালনা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত কলেজগুলো এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কলেজগুলেকেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং মা উ শি নির্দেশনা দিয়েছে অনলাইনে ক্লাশ চালিয়ে যাবার জন্য।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন “আমাদের এসডিজি ৪ বাস্তবায়ন এবং ডেমোগ্রাফিক ডেভিডেন্ট নিশ্চিত করার জন্য একটা সময়ে আমাদেরকে এটি করতে হতো। করোনার এ সংকট সেটা আমাদের অগ্রীম করার সুযোগ করে দিয়েছে”। এটি অবশ্যই প্রশংসনীয় কাজ। এ কাজটি ইতিমধ্যে দেশের বড় বড় কলেজগুলো শুরু করে দিয়েছে। এছাড়া কিছু উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কলেজও শরু করেছে। যদিও এ কাজের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। একাজটি করতে গিয়ে আমাদের কিছু সমস্যার সন্মুখীন হতে হয়।
১। আমাদের শতভাগ ছাত্র ছাত্রীদের হাতে এনরয়েড ফোন বা ল্যাপটপ নেই। যে ডিভাইসটি দিয়ে ছাত্র ছাত্রীরা এ প্রক্রিয়ার সাথে সংযুক্ত হতে পারে।
২। গ্রাম অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ দুর্বল থাকার কারণে অনেক ছাত্র ছাত্রী সুংযুক্তি নিতে পারছে না। এছাড়া কিছু সংখ্যক দরিদ্র ছা্ত্র ছাত্রীর পক্ষে নেট সংযোগ নেয়া কষ্টকর।
নানারকম সীমাবদ্ধতা সত্বেও জাতীয় স্বার্থে এবং ছাত্র ছাত্রীদের সুবিধার্থে এ সংকটকালীন সময়ে এ পদ্ধতিটি চালিয়ে নেবার কোন বিকল্প নেই। সকল প্রতিবন্ধকতা দুর করে অনলাইনে ক্লাশ প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সংযুক্ত করার জন্য কিছু প্রস্তাবনা করছি।
১। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে। সেই ল্যাবকে ব্যবহার করে একটি স্টুডিও করে ফেলা। প্রয়োজন হবে একটি স্মার্টফোন , একটি মাইক্রোফোন এবং একটি স্ট্যান্ড। যা যেকোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে করা সম্ভব।
২। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের একটি প্রাতিষ্ঠানিক ফেসবুক পেজ বা গ্রুপ থাকবে। সেখানে শুধুমাত্র শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা সংযুক্ত থাকবে। অনার্স কলেজগুলো সেটা বিভাগ ভিত্তিকও করতে পারে। ইচ্ছে করলে কেউ ইউ টিউবও ব্যবহার করতে পারে।
৩। পেজ বা গ্রুপ করে সকল শিক্ষার্থীকে সেই পেজ বা গ্রুপে সংযুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। যে কাজটি করবেন গ্রুপ ভিত্তিক শিক্ষকরা। এখন প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর ফোন নাম্বার সংরক্ষিত রয়েছে। শিক্ষকরা ( কাউন্সিলরা) গ্রুপ ভিত্তিক ছাত্রদের সেই পেজ বা গ্রুপে সংযুক্তি নিশ্চিত করবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সেই গ্রুপের বা পেজের প্রতি নজর রাখার নির্দেশ দিতে হবে।
৪। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ প্রতিদিনের ক্লাশের একটি রুটিন করে দেবেন এবং শিক্ষার্থীদের পূর্বেই জানিয়ে দেবেন। রুটিন মোতাবেক শিক্ষক ৩০-৪০ মিনিটের ক্লাশ লাইভে অংশ নিবেন। শিক্ষার্থীরা সেই ক্লাশে অংশ নিবে এবং লাইভে প্রশ্নও করতে পারবে। শিক্ষাক তার উত্তর দিবেন।
৫। এ সংকটকালে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই মানবিক হওয়া উচিত। আমাদের যে মোবাইল কোম্পানীগুলো আছে তারা আমাদের শিক্ষার্থীদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারে। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে যদি তারা মাসে বিনা খরচে ডাটা সংযোগ দিয়ে দেন ( শুধুমাত্র ফেসবু অনলাইন লাইভের জন্য ) তা হলে শিক্ষার্থীরা আগ্রহী হবে এবং অংশগ্রহণকারী বেরে যাবে।
৬। স্বাভাকি অবস্থায়ও ৫০%-৬০% শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকে। এ প্রক্রিয়ায় আমার ধারণা ৭০%-৮০% শিক্ষার্থী অংশ নিবে। আর কোন সমস্যার কারণে যারা লাইভে অংশ নিতে না পারবে তারা পরবর্তীতে ক্লাশটা পেজে বা গ্রুপে গিয়ে দেখে নিবে।
৭। যেহেতু এখন কোন অভ্যন্তরীন বা টিউটরিয়াল পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না সেহেতু প্রতি সপ্তাহে শিক্ষার্থীকে প্রতি বিষয়ে কিছু এসাইনমেন্ট দিয়ে দেয়া যেতে পারে। যেটা তার বাড়ীর কাজ হিসেব পরে শিক্ষকের কাছে জমা দিবে।
৮। শিক্ষকদের সমন্বয়ে শিক্ষার্থীদের গ্রুপ করে প্রতিটি গ্রুপের একজন শিক্ষককে কাউন্সিলর নিয়োগ দিতে পারেন অধ্যক্ষ মহোদয়। গ্রুপের কাউন্সিলরাই শিক্ষার্থীদের খোজখবর রাখবেন এবং ক্লাশে উপস্থিতি নিশ্চিত করবেন।
এছাড়া ক্লাশ নেয়ার ক্ষেত্রে আরো কিছু নতুন পদ্ধতি আছে যেগুরো ল্যাপটপের মাধ্যমে সফটওয়ার ব্যবহার করে করা যায়। সেগুলোও করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস এতে ভাল ফল পাওয়া যাবে। শিক্ষার্থীদেরও আগ্রহ বাড়বে। শুধু চাই শিক্ষক এবং সংশিষ্টদের আন্তরিকতা।
লেখকঃ রতন কুমার মজুমদার
অধ্যক্ষ,পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজ, চাঁঁদপুর।