পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য রেমডেসিভির ইনজেকশন বাজারজাত শুরু করেছে ।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস দেশে প্রথম কোম্পানি হিসেবে রেমডেসিভির বাজারজাত শুরু করল। কোম্পানিটির উৎপাদিত রেমডেসিভিরের ব্র্যান্ড নাম বেমসিভির।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেকের উপস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আয়েজিত এক অনুষ্ঠানে অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগটির উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে নমুনা হিসেবে এক হাজার রেমডিসিভির ওষুধ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এন্টি-ভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির সম্প্রতি কভিড-১৯ চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারি সংস্থা (এফডিএ) এর জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে। বহুল প্রতীক্ষিত এই রেমডেসিভির সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের রেপ্লিকেশন বা বংশ-বৃদ্ধি রোধে প্রথম কার্যকরী ওষুধ হিসেবে প্রমানিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মোঃ আসাদুল ইসলাম; স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মোঃ আলী নূর; ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজিডিএ) মেজর জেনারেল মোঃ মাহবুবুর রহমান; প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ড. এ বি এম আবদুল্লাহ এবং কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: শহিদুল্লাহ।
বেক্সিমকো উৎপাদিত ওষুধ রেমডেসিভির করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের সুস্থ করে তুলবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘বিশ্বের কোথাও কোনো দেশে করোনা রোগীদের শতভাগ সুস্থ করে তোলার মতো ভ্যাকসিন বা ওষুধ উৎপাদন হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশে রেমডেসিভির ওষুধটি কার্যকর হচ্ছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। জরুরিভিত্তিতে চিকিৎসার জন্য এটির অনুমোদন দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। ওষুধ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে করোনাভাইরাস রোগীদের এই ওষুধে চিকিৎসা প্রদান করা হবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখন বাড়লেও তা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে না। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এখনও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে তুলনামূলকভাবে সফল হয়েছে।’
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারের আন্তরিকতার অভাব নেই। তাদের সুচিকিৎসার জন্য নমুনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরির সংখ্যা বৃদ্ধি, ডেডিকেটেড হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। (দৈনিক) নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ১০ হাজার অতিক্রম করেছে।
তিনি বলেন, এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে ঘরে বসে না থেকে নমুনা পরীক্ষা করতে হবে। হাসপাতালে যেসব রোগী মারা গেছে তাদের অনেকেই বিলম্বে হাসপাতালে এসেছেন। সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ঘরে অবস্থান করা, প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়া, বাইরে বের হলে মাস্ক পরিধান করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি সাবধানতা অবলম্বন করলে করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, ‘করোনার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও লোকজন রিকশা, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহন ও ফেরিতে ভিড় করে ঝুঁকি নিয়ে ঈদে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন। কিন্ত তাদের এভাবে ঝুঁকি নিয়ে যাওয়াটা ঈদের সব আনন্দকে নিরানন্দ করে দিতে পারে সেটা ভাবছেন না।’
ওষুধের প্রথম ব্যাচ হস্তান্তরের সময় বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান এমপি বলেন, ‘সব সরকারি হাসপাতালে রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসার জন্য দেওয়া হয়। একারনে, আমরা সরকারী হাসপাতালের গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য বিনামূল্যে বেমসিভির প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী, বেক্সিমকো ফার্মা শুধুমাত্র কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নির্ধারিত হাসপাতাল সমূহেই রেমডেসিভির (বেমসিভির) সরবরাহ করবে, কোন ফার্মেসিতে সরবারাহ করবে না। ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রাপ্তির প্রথম দিনেই বেক্সিমকো ফার্মা বিপুল পরিমানে রেমডেসিভির (বেনসিভির) কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য অনুদান হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করে।”
লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট মার্কেট’এর (এআইএম) তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো ফার্মা বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের আবেদন করে। পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা শেষে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার জরুরি ব্যবহারের জন্য বেমসিভির ব্র্যান্ড নামে বেক্সিমকো ফার্মার উৎপাদিত রেমডিসিভির ইঞ্জেকশনের চুড়ান্ত অনুমোদন দিল।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গিলিয়াড সাইন্সেস রেমডেসিভির এর উদ্ভাবক। প্রত্যক্ষ এন্টিভাইরাল হিসেবে রেমডেসিভির ভাইরাসের আরএনএ সংশ্লেষন প্রতিরোধে সরাসরি কাজ করে। রেমডেসিভির রক্তনালীতে ইঞ্জেকশন হিসেবে প্রয়োগ করা হয়। কভিড-১৯ এ গুরুতর অসুস্থ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর ক্ষেত্রে এটি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
সানবিডি/এসকেএস