করোনাভাইরাসে মৃত ব্যক্তির আপনজন যেখানে লাশ ফেলে পালিয়ে যাচ্ছে সেখানে দাফন কাজে সহায়তা করছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের একটি স্বেচ্ছাসেবক টিম। এমন দুর্যোগে স্বজনরা দূরে সরে গেলেও স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। ইতোমধ্যে দুই শতাধিক মৃতদেহ দাফন ও সৎকার করেছেন তারা। মৃতদের দাফনে সারাদেশে প্রায় তিনশ’ স্বেচ্ছাসেবি এভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের দাফন কার্যক্রমের সমন্বয়ক সালেহ আহমেদ জানান, করোনায় নিহতদের লাশ ফেলে স্বজনদের পালিয়ে যাওয়ার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সংগঠনের পক্ষ থেকে ওই সব মৃতদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। করোনা পজিটিভ ও করোনা সাসপেক্টেট মরদেহ সৎকারে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করা হয়। গত ৭ এপ্রিল থেকে ওই স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ শুরু করেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিধি মেনে হাসপাতাল বা বাসায় গিয়ে মৃতদেহ গোসল করানো, কাফনের কাপড় পরানোসহ পুরো দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন স্বেচ্ছাবেসকরা।
সালেহ আহমেদ আরো জানান, কোয়ান্টামের পক্ষ থেকে শুধু মুসলিম নয়, হিন্দু ধর্মের মৃতদেহ সৎকারের জন্যেও আলাদা টিম কাজ করছে। মহিলা মৃতদেহের জন্যে কোয়ান্টামের মহিলা স্বেচ্ছাসেবী দল রয়েছে। এ পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় ১৩০ জন এবং ঢাকার বাইরে ২০ জন মৃতদেহের দাফন ও সৎকার করা হয়েছে। এ জন্য ঢাকার ভেতরে ১০২ জন কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাসেবক এবং ঢাকার বাইরে ১৮০ জন কাজ করছে।
তিনি বলেন, বিধি মেনে হাসপাতাল বা বাসায় গিয়ে মৃতদের ধোয়ানো, ওযু করানো, কাফনের কাপড় পরানো সম্পন্ন করি আমরা। এর পর ডব্লিউএইচও-র নির্ধারিত বিশেষ ব্যাগে লাশ প্যাকেট করে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় সরকার নির্ধারিত কবরস্থানে। এরপর জানাজা পড়ানো হয় সাধারণ লাশের মতোই। কবরস্থ করার পর মৃতের জন্যে আমরা আন্তরিক দোয়া করি।
সালেহ আহমেদ জানান, কবরস্থানে মৃতের পরিবারের হাতেগোনা কয়েকজন থাকেন। কখনো কখনো কেউই থাকেন না। তবে পুরো প্রক্রিয়ায় স্বজনদের কাছে না পেলে খুব কষ্ট লাগে। পরিবারের যে মানুষটা এতোটা বছর একসঙ্গে ছিলেন সেই মানুষটার শেষযাত্রায় স্বজনদের অনুপস্থিতি সত্যিই কষ্টদায়ক বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কোয়ান্টাম দাফন কার্যক্রমের সৎকার কাজের পুরো প্রক্রিয়ার ব্যবহৃত পিপিই, মাস্ক, সেফটি গ্লাস, ফেস শিল্ড, সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভস, হেভি গ্লাভস, নেক কভার ও মরদেহের কাফনের কাপড় সবকিছুই কোয়ান্টামের নিজস্ব অর্থায়নে সংগ্রহ করা হয়। মরদেহ বহনের জন্য বিশেষ বডি ব্যাগসহ সুরক্ষার জন্যে তিন ধরনের জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি মরদেহ সৎকারের পর সুরক্ষার জন্য পিপিইসহ পরিধেয় অন্যান্য সামগ্রী কবরস্থানেই পুড়িয়ে ফেলা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্বেচ্ছাসেবক জানান, পুরো প্রক্রিয়ায় আমরা যখন স্বজনদের ঠিক সেভাবে কাছে পাই না তখন খুব কষ্ট লাগে। পরিবারের যে মানুষটা এতোটা বছর একসাথে ছিলেন সেই মানুষটার শেষযাত্রায় স্বজনদের অনুপস্থিতি সত্যিই কষ্টদায়ক। আমরা ধর্মীয় রীতি মেনে যতটা সম্ভব মমতার সাথে কাজগুলো করার চেষ্টা করি। কিন্তু স্বজনহীন মানুষটি মৃত্যুর পরেও যখন এতোটা অসহায়, তখন মনে হয় আমরাই তার পরিবারের লোকজন। শেষবারের যাত্রায় আমরা তাকে সেভাবই সম্মানের সাথে বিদায় জানাই।
সানবিডি/এসকেএস