মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের যে সব সদস্য গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছেন তাদের বীরশ্রেষ্ঠ, বীরবিক্রম ও বীরউত্তমের মতো রাষ্ট্রীয় খেতাব প্রদানের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করা হবে। মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমন মন্তব্য করেছেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দ্বিগুণেরও বেশি হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনে রবিবার দুপুরেমুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘রাজারবাগ যখন আক্রান্ত হয়, তখন প্রথম যারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন এবং শহীদ হয়েছিলেন তাদের মধ্যে বীরশ্রেষ্ঠ হওয়ার মতো অনেকে ছিলেন। তারা নিশ্চয়ই বীরউত্তম ও বীরবিক্রম খেতাবে ভূষিত হওয়ার মতো ভূমিকা রেখেছিলেন। কিন্তু আমরা বিভিন্ন কারণে তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে পারিনি। তবে আমরা চেষ্টা করব, মুক্তিযুদ্ধে যাদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ছিল, তারা যেন স্বীকৃতি পান। তা না হলে মনে হবে একপেশে অবস্থান নেওয়া হয়েছে। মনে হয়, সামরিক যুদ্ধ হয়েছিল। এ সমস্ত খেতাব দেখলে মনে হয় না, এটা একটা জনযুদ্ধ ছিল।’
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে যাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, তাদের আবেদন করতে বলা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কমিটি ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা সিভিলিয়ানরা এতে গুরুত্ব দেয়নি। আবেদনও করেনি। সে কারণে খেতাবও পাননি। পুলিশের সদস্যরাও এভাবে আবেদন করেরনি, তারাও পাননি। তবে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তথ্য-সম্বলিত আবেদন করেছিলেন। এ কারণে তারা খেতাবে ভূষিত হয়েছেন।’
‘কমিটি ইচ্ছা করে বৈষম্য করেনি। আমি সব নথি দেখেছি’ যোগ করেন মন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ‘খেতাব প্রদানের বিষয়ে আরও একবার সুযোগ দেওয়া যায় কিনা— এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই আরেকবার ভেবে দেখবেন। অনেকে স্বীকৃতি পাননি। তাদের পাওয়ার ব্যাপারে পুনর্বিবেচনা করব।’
মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীর যে সব সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন না তাদের জন্য ফরম পাঠিয়ে দেব। আবেদনে ত্রুটি থাকায় অনেকে ভাতা পাচ্ছেন না। যারা বঞ্চিত হয়েছেন, তারা যেন ভাতা পান সে ব্যবস্থা করা হবে।’
‘শহীদ পরিবারও ভাতা পাবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ফাইলে অনুমোদন দিয়েছেন। খুব তাড়াতাড়ি তা গেজেট আকারে প্রকাশ হবে’ যোগ করেন মোজাম্মেল হক।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বর্তমানে যে পরিমাণ ভাতা দেওয়া হচ্ছে তা দ্বিগুণের বেশি করতে যাচ্ছি। দু-চার দিনের মধ্যে ফাইল অনুমোদন হয়ে যাবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে এবং সেটি বুকে ধারণ করে রাজারবাগের পুলিশ সদস্যরা সশস্ত্র প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। এদিন অনেক পুলিশ সদস্য মারা যান। আমরা কোনো দিন তাদের ভুলব না।’
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের আঁধারে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আক্রমণ চালায়। তৎকালীন পুলিশ সদস্যরা প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এদিন দেড় শতাধিক পুলিশ সদস্য মৃত্যুবরণ করেন। এ ছাড়া অসংখ্য পুলিশ সদস্য অমানসিক নির্যাতনের শিকার হন। সে সব পুলিশ সদস্য ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সম্মানে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ২৫ মার্চ রাতে শহীদ ও আহত ৪৩ পরিবারকে সম্মাননা চেক ও সনদ বিতরণ করা হয়। তাদের মধ্যে যারা ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন এমন ১২ পরিবারকে পাঁচ লাখ এবং যুদ্ধ-পরবর্তী মারা যান এমন আট পরিবারকে চার লাখ টাকার চেক বিতরণ করা হয়।
এ ছাড়া জীবিত ২৩ প্রথম প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সম্মাননা সনদ ও উত্তরীয় প্রদান করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন— বাংলাদেশ পুলিশের প্রধান আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোখলেছুর রহমান, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান, ১৯৭১ সালেপুলিশ কন্ট্রোল রুমের অপারেটর শাহাজান মিয়া, নাট্যব্যক্তিত্ব হাসান ইমাম, দেশের প্রথম স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইজিপি আবদুল খালেকের স্ত্রী সেলিনা খালেক।