গণতন্ত্রের জন্য ক্ষমতা ছেড়েছিলাম, আজ তা কোথায়? প্রশ্ন এরশাদের
প্রকাশ: ২০১৫-১২-০৬ ১৯:০০:১৮
গণতন্ত্রের জন্য ক্ষমতা ছেড়েছিলাম। আজ গণতন্ত্র কোথায়— এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয় পার্টির আয়োজিত ‘সংবিধান সংরক্ষণ দিবস’ উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রবিবার দুপুরে এ কথা বলেন। সামরিক স্বৈরাচার এরশাদের পতনের দিন ৬ ডিসেম্বরকে স্বৈরাচার পতন দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘আজ আমার হৃদয় আনন্দে ভরপুর। আজকের দিনটি জাতীয় পার্টির জন্য একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ দিন। কারণ এই দিনে এক নব দিগন্তের সূচনা হয়েছিল। এই দিনে আমি সংবিধান সংরক্ষণের জন্য ক্ষমতা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু সেই গণতন্ত্র এখন নেই।’
‘আমি অতীতের কথা ভুলতে চাই। সামনে এগিয়ে যেতে চাই। কিন্তু ভুলতে পারি না। যে অন্যায় অবিচার আমার সঙ্গে, জাতীয় পার্টির সঙ্গে হয়েছে তা ভুলা যায় না।’ যোগ করেন তিনি।
অন্যায়-অবিচারের বিবরণ তুলে ধরে এরশাদ বলেন, ‘আমি ক্ষমতা ছেড়েছিলাম বিচারপতি শাহাবুদ্দিনে কাছে। এই শাহাবুদ্দিন, যার কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি ছিল না। যে আমার কাছে শপথ নিয়েছিলেন, তিনি আমার বিচার করলেন, জেলে দিলেন। কাজটা তিনি ঠিক করেননি। আমাকে জেলে পাঠানো হল। আমি ছিলাম স্বর্গে। একজন মুক্ত মানুষ হিসেবে। পড়লাম নরকে। কথা বলার লোক নেই, বই নেই, কিচ্ছু নেই। চুপচাপ বসে থাকতাম। সেই অবস্থায় নির্বাচন করলাম। আমার তখন টাকা নেই, দলের নেতা কর্মীরা সব জেলে, সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও ৫টি আসনে নির্বাচিত হয়েছিলাম।’
বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসেই আমার বিরুদ্ধে ৪২টি মামলা দিয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল আমাকে ধ্বংস করা। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে আজ তাদের নিজেদের দশাও আজ সে রকম।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি ৩৩টি আসন পেয়েছিল। খালেদা জিয়া রাতের অন্ধকারে আমার কাছে লোক পাঠিয়েছিলেন, যেন আমি তাদের সমর্থন দেই। তিনি বলেছিলেন, আমি যা চাই আমাকে তা-ই দেওয়া হবে। কিন্তু আমি তাদের সমর্থন দিইনি। দিয়েছিলাম আওয়ামী লীগকে।’
এরশাদ আক্ষেপ করে বলেন, ‘সেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই আমাকে ৬ মাসের জন্য জেলে পাঠাল। আমার বিরুদ্ধে দু’টি মামলা এখনো চলছে। ১৯৯৫ সালে খালেদা জিয়া মঞ্জুর হত্যা মামলা করেছিলেন। সেই মামলা এখনো শেষ হয়নি। কোনো দিনও শেষ হবে না। কবরে গেলেও সমন যাবে। অবিচারের শেষ নেই।’
বক্তৃতার এই পর্যায়ে সভায় উপস্থিত কর্মীদের মধ্যে হাস্যরস দেখা দিলে এরশাদ বলেন, ‘আমি আমার দুঃখের কথা বলছি, আর তোমরা হাসছ?’
তিনি বলেন, ‘বলা হয় আমি দেলোয়ারকে মেরেছি। গাড়ি কি আমি চালাচ্ছিলাম। ওটা ছিল একটা দুর্ঘটনা। পুলিশের গাড়ি ব্রেক ফেল করেছিল। নূর হোসেন মারা গিয়েছিল। আমি জেল থেকে বের হওয়ার পর তার বাবার সঙ্গে দেখা করেছিলাম। প্রতি মাসে তার বাবাকে আমি ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। তার জন্য জিরো পয়েন্টে মনুমেন্ট করেছি। সেই মনুমেন্টে এখন আপনারা ফুল দেন, শ্রদ্ধা জানান।’
দলের কর্মীদের উদ্দেশে এরশাদ বলেন, ‘দেশে হিংসার রাজনীতি চলছে। একদল ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে বসে আছে, অন্যদল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মানুষ পুড়িয়ে মারছে। সাধারণ মানুষের কথা কেউ ভাবছে না। আমাদের মূল্যবোধ, বিবেক হারিয়ে গেছে। এই দোষ সাধারণ মানুষের নয়, যারা দেশ পরিচালনা করে তাদের। এর পরিবর্তন হতে হবে। এভাবে কোনো দেশ, জাতি চলতে পারে না।’
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন— পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এস এম ফয়সল চিশতী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, তাজ রহমান, সুনীল শুভরায়, যুগ্ম-মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, নুরুল ইসলাম নুরু, জহিরুল ইসলাম জহির প্রমুখ।