এক মাসের ব্যবধানে পোশাক শ্রমিকদের বেতন-ভাতা প্রদান প্রক্রিয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। নগদ টাকার বদলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বেতন প্রদানের পরিমান বেড়েছে ৫৪ শতাংশ। ১৬ মে পর্যন্ত ৮২ শতাংশ শ্রমিক মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবের মাধ্যমে বেতন-ভাতা পেয়েছেন। এপ্রিল মাসে ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমে বেতন প্রদান হয়েছিল মাত্র ২৮ শতাংশ। নারী এবং পুরুষের মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বেতন প্রদানের হার যথাক্রমে ৮২ ও ৮৪ শতাংশ।
দেশের তৈরি পোশাকে খাতে শ্রমিকদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বেতন-ভাতা প্রদানে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওর্য়াক অন ইকোনোমিক মডেলিং (সানেম) ও মাইক্রো ফাইন্যান্স অপারচুনিটিস (এমএফও) গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
চলতি বছরের ১৫ ও ১৬ মে টেলিফোনে দেশের পাঁচটি বৃহৎ শিল্প এলাকা ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও সাভারের ১৩৮৪ জন পোশাক শ্রমিকের মতামতের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে সানেম। মতামত প্রদানকারী শ্রমিকদের এক তৃতীয়াংশই নারী। গবেষণায় নারী শ্রমিকদের মতামত বেশি উপস্থাপন করা হয়েছে। কারণ পোশাক খাতের অধিকাংশ শ্রমিক নারী।
এর আগে গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ডায়েরি নামে একটি গবেষণা প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সাল থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩০০ শ্রমিকের তথ্য সংগ্রহ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
চলতি বছরের ১৬ মে পর্যন্ত ৬৭ শতাংশ পোশাক শ্রমিক বেতন-ভাতা পেয়েছেন। বেতন প্রদানে নারী ও পুরুষের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। নারী শ্রমিকদের বেতন কম দেওয়া হয়েছে। ৬৪ শতাংশ নারী শ্রমিক এবং ৭৪ শতাংশ পুরুষ শ্রমিক বেতন-ভাতা পেয়েছেন।
মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে বেশি সময় টাকা জমা রেখেছেন নারী শ্রমিকরা। ৮৪ শতাংশ নারী ৯৩ শতাংশ পুরুষের তুলনায় বেতনের টাকা বেশি সময় অ্যাকাউন্টে জমা রেখেছেন।
ডিজিটাল পদ্ধতিতে বেতন প্রদানের পুরো প্রক্রিয়াটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বেতন পাওয়া শ্রমিকদের ৯৫ শতাংশই প্রথমবারেই এজেন্ট ও এটিএম মেশিন থেকে টাকা তুলতে পেরেছেন। ৭৮ শতাংশ শ্রমিককে টাকা তোলার জন্য ১০ মিনিটেরও কম সময় লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা পরিশোধে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ন্যূনতম ৮০ শতাংশ পণ্য রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য ২ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ দিয়ে ঋণ নিতে পারবে। তবে বেতনের টাকা সরাসরি শ্রমিকের ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে দিতে হবে। নগদ টাকা দেওয়া যাবে না বলে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ এপ্রিল এ ঋণ সুবিধা নিতে চায় এমন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ২০ এপ্রিলের মধ্যে মোবাইল অ্যাকাউন্ট খোলার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে শ্রমিকরা ঘরে বসেই মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে বেতন-ভাতা পেয়েছেন।
বিজিএমইএর সবশেষ তথ্য বলছে, প্রণোদনার অর্থ পেতে এখন পর্যন্ত মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ২০ লাখ ৩০ হাজার অ্যাকাউন্ট খুলেছেন পোশাক শ্রমিকরা। এরমধ্যে বিকাশে ১০ লাখ ৭০ হাজার হিসাব, রকেটে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার এবং ডাক বিভাগের 'নগদ' এ অ্যাকাউন্ট খুলেছেন চার লাখ শ্রমিক।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস