মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত চাঁদপুরে করোনা সংক্রমণ ও করোনার উপসর্গ নিয়ে এই পর্যন্ত মারা গেছেন অন্তত ৮০ জন। আর আক্রান্তের সংখ্যাও পেরিয়েছে চার শতাধি। তবে আক্রান্তের চেয়ে মৃত্যুহার বেশি হওয়ায় জেলার সর্বত্র আতঙ্ক ও অস্বস্তি বিরাজ করছে। ভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে চাঁদপুর সদর হাসপাতারের চিকিৎসকরা দিনরাত পরিশ্রম করছে জীবনের ঝুকি নিয়ে। কিন্তু হাসপাতালে রোগিদের সেবা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহের ঘাটতি ছিল।
এমন পরিস্থিতিতে চাঁদপুরে করোনা আক্রান্তদের রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন চাঁদপুরের মানুষের প্রিয় আপা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। করোনা রোগীদের সুচিকিৎসা দিতে নিজস্ব অর্থায়নে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের প্রতিশ্রতি দিয়েছেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ এই চিকিৎসা সরঞ্জাম স্থাপন করা হবে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে।
গতকাল শনিবার (১৩ জুন) সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল সভায় এমন সুসংবাদ জানান শিক্ষামন্ত্রী। এর দ্বারা হাই ফ্লু অক্সিজেন দেওয়ার কাজ চলবে বলে জানা গেছে।
সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টটি আপাতত এখন হাসপাতালের ৩০ শয্যায় রোগীদের সেবা দিতে সক্ষম হবে। পরে এটির কলেবর আরো বাড়ানো হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, 'চাঁদপুরের জন্য একটি সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট আমি নিজেই দিবো। তবে এটি বিদেশ থেকে আসতে মাসখানেক সময় লাগবে হয়তো।' তিনি বলেন, 'করোনা চলে গেলেও এই সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টটি সব সময়ের জন্যেই প্রয়োজন হবে। বিশেষ করে আইসিইউর জন্য তো অবশ্যই।' তিনি এবং তাঁর বড় ভাই চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ডা জে আর ওয়াদুদ এর সহযোগিতায় এবং তত্ত্বাবধানে সদর হাসপাতালে এটি স্থাপন করবেন।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে চঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়। এখানে প্রতিদিনই করোনা আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে রোগী ভর্তি হচ্ছে। অনেক সময় মুমূর্ষু রোগী আসছে। যাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা। তখন তাদের সিলিন্ডার অক্সিজেনে কাজ হচ্ছে না। এতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকসহ সুশীল সমাজের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনে এগিয়ে এলেন। যা চাঁদপুরের মানুষকে আশার আলো দেখিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে ওই ভার্চুয়াল সভায় আরো যোগ দেন জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মো. শাহ কামাল, পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান, সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ প্রমুখ।
গতকাল রাতেই বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ খবরটি ছড়িয়ে পড়লে চাঁদপুরের মানুষের মাঝে কিছুটা স্বস্তি নেমে আসে এই বলে যে হাসপাতালে গেলে অন্তত অক্সিজেন নিশ্চিত পাওয়া যাবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পেশার মানুষ ডা দীপু মনির এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে মন্তব্য করেন। এবং তাদের প্রাণের নেত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানান।
শিক্ষামন্ত্রীর এমন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই জেলার মুমূর্ষু রোগীর জন্য আশার আলো তৈরি হলো। এখন পর্যন্ত ৩০১ জন করোনা পজিটিভ রোগী চাঁদপুরে অবস্থান করছেন। তাদের চিহ্নিত করে আজকের মধ্যে আক্রান্ত রোগীদের বাসাবাড়ি ম্যাপিং করে কঠোর লকডাউন নিশ্চিত করা হবে বলে জানান।
লেখকঃ রতন কুমার মজুমদার
প্রিন্সিপাল, পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজ, চাঁদপর।