এছাড়া বাজেট তৈরিতে যে তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি ছিল, সেটি অর্থমন্ত্রীও স্বীকার করেছেন। কিন্তু সেই ঘাটতি স্বীকার করেও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে কোনো সংযম প্রদর্শন করলেন না।

বাজেটের সব প্রাক্কলন সাধারণত সংশোধিত বাজেটের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে করা হয়। ফলে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অতিরঞ্জিত। উদাহরণস্বরূপ, রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা বাস্তব নয়।

কারণ আমরা জানি, রাজস্ব ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থাকবে। এর মানে হল- সরকার এবার যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে, তাতে দেড়গুণ বেশি রাজস্ব আদায় করতে হবে। এই হারে রাজস্ব আদায়, দেশের ইতিহাসে উদাহরণ নেই।

ফলে এই লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নযোগ্য নয়। এর মানে হল, সরকার যদি তার ব্যয় কাঠামো ঠিক রাখে, তাহলে ঘাটতি আরও বাড়বে। অন্যদিকে বাজেট ঘাটতি মেটাতে ৪৫ শতাংশ অর্থই সরকার ব্যাংক থেকে নিচ্ছে।

কুঋণের ভারে জর্জরিত ভঙ্গুর একটি ব্যাংকিং খাত থেকে এই পরিমাণ অর্থ নেয়া হলে ব্যক্তি খাতের ঋণের প্রতিশ্রুতি রাখা সম্ভব হবে না। আর বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রাও আলোচনা সাপেক্ষে।

গত বছর ছিল সপ্তম বার্ষিকের শেষ বছর। তাই বাজেটকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকের শেষ বছরের অর্জন এবং আগামী তিন বছরের মধ্যমেয়াদি কাঠামোর আলোকে বিবেচনা করতে হবে।

কিন্তু রাজস্বের ক্ষেত্রে আমরা দেখছি, আমাদের আয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১০ শতাংশের মধ্যে আটকে আছে। সরকারি ব্যয় মাত্র সামান্য বেড়েছে। আর চলতি অর্থবছরে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির মাত্র ১২ দশমিক ৭ শতাংশ হবে।

এটি অভাবনীয়, শঙ্কার বিষয়। অন্যদিকে এই বিনিয়োগ আগামী অর্থবছরে দ্বিগুণ হওয়ার কথা বলা হয়েছে। হয় এখানে বড় ধরনের কোনো ভুল আছে অথবা আমরা একটি বিনিয়োগ বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।

করোনা সংক্রান্ত যে পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, তা আগের কোনো প্রকল্পের সম্প্রসারণ অথবা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের অংশ। নতুনভাবে কোনো কর্মসূচি এখানে দেখছি না। এর মানে, করোনার ক্ষেত্রে আগের ঘোষণাগুলো লকইন করা হয়েছে।

অন্যদিকে বাজেটে বাস্তবায়নের অনেক দুর্বলতা রয়েছে, সেটি মোটামুটি সবাই জানেন। এবার সেটি আরও দুরূহ ব্যাপার হবে। সে কারণে বাজেটের সঙ্গে কোনো সংস্কার পদক্ষেপ না এলে, সেটি বাস্তবায়ন কঠিন।

যেমন কর কাঠামোর মধ্যে সংস্কার আনতে হবে। যারা কর না দিয়ে টাকা বিদেশে পাচার করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে প্রকৃত করদাতা নিরুৎসাহিত হবে। অন্যদিকে সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে নজরদারির ব্যবস্থা না থাকলে এই টাকা প্রকৃত জায়গায় পৌঁছবে না।

করোনা নিয়ে আমরা দেখেছি, দরিদ্র মানুষের সহায়তা এবং কেনাকাটার ক্ষেত্রে কী ধরনের অনিয়ম হয়েছে। গত এক দশকে সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধি নির্ভরশীল একটি উন্নয়নের আখ্যান দাঁড় করিয়েছে।

এর পাশাপাশি অর্থনীতিতে বৈষম্য বেড়েছে। এর মধ্যে আয়, ভোগ ও সম্পদ তিন খাতেই বৈষম্য বেড়েছে। আর ধনী-গরিবের পার্থক্য কমিয়ে আনার জন্য আমরা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখিনি।

আর করোনার কারণে সেই প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়েছে। ফলে বাজেট কীভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক করা যায়, সেদিকে আরও নজর প্রয়োজন ছিল। বিশেষ করে করোনার কারণে নতুন বেকার ও যুব কর্মসংস্থানের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ দরকার ছিল।