পাঁচ বছরে জিডিপিতে ২ শতাংশ অবদান রাখবে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২০-০৬-২২ ০৯:১৭:৫৩
* এখাত বিকাশে সব ধরনের সহায়তা দেবে সরকার, দুইমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি
আগামী ৫ বছরে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ২ শতাংশ অবদান রাখবে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল। আর এক্ষেত্রে সরকার কার্যকর সহযোগিতা জরুরি। রোববার এক অনলাইনে আলোচনায় এখাতের উদ্যোক্তারা এসব কথা জানান। তবে আলোচনা অংশ নেয়া পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সরকার এখাতের বিকাশের বিষয়টি ভাবছে। তাই নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে যে কোনো ধরনের সহায়তা দেয়া হবে। এখাতের সংগঠন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইক্যুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভিসিপিয়াব) এবং ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিষ্টস ফোরাম যৌথভাবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
বৈঠকের সভাপতিত্ব ও মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভিসিপিয়াব চেয়ারম্যান শামীম আহসান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, ভিসিপিয়াবের মহাসচিব শওকত হোসেন, বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর, মসলিন ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়ালি-উল-মারুফ মতিন, সিএমজেএফ’র নির্বাহী সদস্য সুজয় মহাজন, ইনফ্লেকশন ভেঞ্চারের অংশীদার তানভীর আলী, পাঠাওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হুসেইন এম ইলিয়াস এবং স্টার্টআপ ঢাকার সহ-প্রতিষ্ঠাতা সামাদ মিরালি।
উল্লেখ্য যখন একটি কোম্পানি বাজারে নতুন এবং মৌলিক কোনো সেবা বা পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করে, তাকে স্টার্টআপ বলা হয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, মৌলিক একটি উদ্যোগকে ছোট থেকে আস্তে আস্তে বড় করে বিকশিত করা। বাংলাদেশে স্টার্টআপ বীজনেসের মধ্যে উবার বা পাঠাও অন্যতম। এই স্টার্টআপ বীজনেসে পুঁিজর যোগান দেয় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণ তরুন উদ্যোক্তা রয়েছে। এখাতের সহায়তা দিলে তারা কর্মসংস্থান তৈরি ভুমিকা রাখতে পারে। তাই বাজেটে খাতকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আগামীতেও এখাতের বিকাশে সরকার সহায়তা দেবে। বিশেষ অতিথি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সরকার দীর্ঘদিন ধরেই উদ্ভাবন এবং স্টার্টআপে নজর দিয়ে আসছে। কারণ সেটি আমাদের ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার অন্যতম পন্থা। আমরা আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে ছোট-বড় সব ধরণের ব্যবসায়ের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করেছি। স্টার্টআপকে সহায়তার জন্য নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, রাইড শেয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে উৎস ভ্যাট কর্তন রহিত করা হয়েছে। স্টার্টআপ বাংলাদেশ তার অ্যাক্সেলারেটর প্রোগ্রাম এবং স্টার্টআপ ফান্ডের মাধ্যমে দেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমকে সহায়তা করছে। আমরা আগামীতেও যাতে স্টার্টআপগুলো বেড়ে উঠতে পারে তার জন্য নীতিগত ও আর্থিক সহায়তা অব্যহত রাখবো।
বক্তারা বলেন, বর্তমানে এখাতে প্রায় ৭ লাখ লোকের কর্মসংস্থান। ফলে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশি স্টার্টআপকে প্রণোদনা ও নীতিগত সহায়তা দেয়া জরুরি। শামীম আহসান বলেন, করোনার কারণে আমাদের ব্যবসায় এবং অর্থনীতি উভয়ই অভূতপূর্ব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। ভেঞ্চার ক্যাপিটালের সহায়তায় পরিচালিত আমাদের দেশের স্টার্টআপগুলো সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি টিকে থাকার লড়াই করছে। ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর, জাপান এবং মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অগ্রণী ভুমিকা রাখছে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এবং স্টার্টআপ প্রয়োজনীয় আর্থিক ও নীতিগত সহায়তা দেয়া হয়। এতে কোম্পানিগুলোকে টিকে থাকতে সহায়ক হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে বাংলাদেশি স্টার্টআপগুলোকেও ট্যাক্স অব্যাহতি, অনুদান, সহজ শর্তে ঋণ এবং ইক্যুইটি বিনিয়োগের মাধ্যমে একই ধরণের নীতিগত ও আর্থিক সহায়তা দেয়া জরুরি। এই ব্যবসাগুলো টিকে থাকলে ৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান রক্ষা পাবে বলে শামীম আহসান।
বিএসইসির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল- ইসলাম বলেন, ২০১৫ সালে বিএসইসি অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট রুলস অনুমোদন দেয়। এই রুলসের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই অনেক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও প্রাইভেট ইক্যুইটি কোম্পানি গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি অনেকগুলো বিদেশি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি বাংলাদেশে কাজ করছে। তাদের জন্য ভেঞ্চার ক্যাপিটাল গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী শেয়ার বাজারগুলো আইপিওর মাধ্যমে স্টার্টআপের নির্গমন (এক্সিট) সম্ভাবনা বাস্তবায়ন এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিনিয়োগকারী পেতে সহায়তা করে। আমরা আমাদের স্টার্টআপগুলোর আইপিও প্রক্রিয়া সহজ করতে প্রয়োজনীয় সহায়তা সিস্টেম তৈরিতে অবশ্যই কাজ করবো।
বিশেষ অতিথি এফবিসিসিআই’র সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, ভিসিপিয়াবের মহাসচিব শওকত হোসেন বলেন, নিবন্ধিত অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার জন্য সরকার কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংক একটি ফান্ড তৈরি করতে পারে। প্রাইভেট এবং অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের সম্মিলিত বিনিয়োগে অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড খুবই কার্যকরী এবং সফল হবে। এছাড়া ১০ বছরের জন্য অল্টারনেটিভ ফান্ড ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে আয়কর থেকে অব্যহতি দেয়া যেতে পারে।
ভিসিপিই ফার্মকে তাদের কোর ব্যবসায় থেকে আয় করতে কমপক্ষে ১০ বছর সময় লেগে যায়। এর আগে আয় খুবই সীমিত হয় এবং সেটি দিয়ে শুধু কোম্পানিকে কোনোভাবে চালিয়ে নেয়া যায়। এই ছোট্ট আয়ের উপর ট্যাক্স এআইএফএম খাতের জন্য খুবই প্রতিবন্ধকতামূলক হবে। অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্টের ফান্ড ম্যানেজার এখনও নাজুক অবস্থায় আছে। এছাড়া এআইএফএম ডিল অধিক ঝুঁকিপূর্ণ।
ভার্চুয়াল বৈঠকটিতে আরও উপস্থিত ছিলেন, স্টার্টআপ বাংলাদেশের বিনিয়োগ উপদেষ্টা টিনা জাবিন, এফএনএস মিডিয়ার চেয়ারম্যান ফেরদৌস আহমেদ, বিডিওএসএনের সাধারন সম্পাদক মুনীর হাসান, ভিসিপিয়াবের ভাইস চেয়ারম্যান জিয়া ইউ আহমেদ, বিল্ড বাংলাদেশের উপদেষ্টা আরস্তু খান, সিএমজেএফের সভাপতি হাসান ইমাম রুবেল এবং সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন, ইনফ্লেকশন ভেঞ্চারের অংশীদার তানভীর আলী, পাঠাওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হুসেইন এম ইলিয়াস, স্টার্টআপ ঢাকার সহ-প্রতিষ্ঠাতা সামাদ মিরালি এবং বাংলাদেশ এঞ্জেলসের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মিনহাজ আনোয়ার।