সৌদি আরব থেকে ফাইনাল এক্সিট নিয়ে (চূড়ান্তভাবে) ফিরতে শুরু করেছেন বাংলাদেশীরা। সেই সঙ্গে ভ্রমণ ভিসায় গিয়ে নভেল করোনাভাইরাসের কারণে আটকে পড়া ও গুরুতর অসুস্থ বাংলাদেশীরাও ফিরছেন।রবিবার ফিরেছেন ৩৮৮ জন।
এ ব্যাপারে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সৌদি আরবে আটকে পড়া ৩৮৮ জন যাত্রী বিমান বাংলাদেশের বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন। গতকাল বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে রিয়াদের কিং খালিদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের একটি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ এসব যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে।
ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত মার্চ থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকায় বাংলাদেশীরা দেশে ফিরতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় সৌদি আরবের রিয়াদ ও জেদ্দা থেকে দুটি বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হয়। রিয়াদ থেকে ছেড়ে আসা বিশেষ ফ্লাইটটি গতকাল ঢাকায় অবতরণ করে। আর জেদ্দা থেকে বিমানের আরেকটি বিশেষ ফ্লাইট আগামী ১ জুলাই ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসবে।
রিয়াদের ফ্লাইটে দূতাবাসের পক্ষ থেকে ৪০০ জন যাত্রীর নিবন্ধন আশা করা হয়েছিল। বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ রিয়াদ-ঢাকা একমুখী যাত্রার টিকিটের মূল্য ইকোনমি ক্লাস ২ হাজার ৮০০ সৌদি রিয়াল ও বিজনেস ক্লাস ৩ হাজার ৮০০ সৌদি রিয়াল নির্ধারণ করেছিল। এদিকে জেদ্দা থেকেও ৪০০ জন বাংলাদেশীর নিবন্ধন আশা করছে বাংলাদেশ দূতাবাস। জেদ্দা-ঢাকা বিমানের একমুখী যাত্রার টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছে ইকোনমি ক্লাসের জন্য ৩ হাজার ৩০ সৌদি রিয়াল ও বিজনেস ক্লাস ৪ হাজার ৩০ সৌদি রিয়াল। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হবে। প্রবাসীকে টিকিট ক্রয়ের জন্য নির্দিষ্ট সময় জানিয়ে দেয়া হবে। পরবর্তী সময়ে আসন ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে অন্যদের ক্রমানুসারে ফোন করা হবে।
এর আগে গত ১১ মার্চ সৌদি আরবে বসবাসরত বাংলাদেশীদের মধ্যে যারা দেশে ফিরতে ইচ্ছুক তাদের ফেরানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে দূতাবাস। দূতাবাসের ওয়েবসাইটে দেশে ফিরতে ইচ্ছুক বাংলাদেশীরা আবেদন করলে তাদের মধ্য থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। তালিকায় গুরুতর অসুস্থ, ভিজিট ভিসায় এসে আটকে পড়া ও যারা চূড়ান্তভাবে দেশে ফিরে যেতে চায়, তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার ৫০০ বাংলাদেশী প্রবাসী দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।
উল্লেখ্য, গত এপ্রিল মাসের শেষে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয় যে আগামী ৩ থেকে ৫ বছরে ৫ থেকে ১০ লাখ বাংলাদেশীকে পাঠিয়ে দেবে দেশটির সরকার।
এক বিজ্ঞপ্তিতে সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বলেন, সৌদি আরবে প্রায় ২১ লাখ বাংলাদেশী বসবাস করেন, অনেকেই জরুরি পারিবারিক প্রয়োজনে দেশে ফিরতে চান, অনেক অসুস্থ প্রবাসী রয়েছেন, অনেকে ভিজিট ভিসায় এসে দেশে ফিরে যেতে পারছেন না। আমরা সবার কথা ভেবে এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের এ সময়ে আমরা অভিবাসী বাংলাদেশীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি।
এর আগে দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, করোনায় আক্রান্ত নন বা কোনো উপসর্গ নেই—এ মর্মে সৌদি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যুকৃত সার্টিফিকেট বিমানে প্রবেশের আগে প্রত্যেক যাত্রীকে অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে। ঢাকায় অবতরণের পর বিমানবন্দরে তা জমা দিতে হবে এবং বাংলাদেশ সরকার নির্ধারিত সংগনিরোধ সম্পর্কিত সব সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। প্রত্যেক যাত্রীকে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস পরিধান ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে