ফেসবুক-ইউটিউবকে নিয়ম-নীতির মধ্যে আনা প্রয়োজন : তথ্যমন্ত্রী

সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০৭-২০ ২৩:৫৬:৫৫


ফেসবুক-ইউটিউবসহ ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে নিয়মনীতির মধ্যে আনা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। রোববার (৫ জুলাই) সচিবালয়ে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোকে নিয়মনীতির মধ্যে আনা সংক্রান্ত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার শুরুতে তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবে রূপায়িত হওয়ার পাশাপাশি আমরা দেখেছি আমাদের দেশে এমনকি পৃথিবীতে একটি বাস্তবতা, নানা বিষয়গুলো দাঁড়িয়েছে। যেগুলো আমাদের এখন আইনগতভাবে একই সঙ্গে নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আগে যে বিষয়গুলোর সঙ্গে আমরা সম্পৃক্ত ছিলাম না, যে বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতাম না, সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে।’

‘বাংলাদেশের বাস্তবতায় আমরা যেটি দেখতে পাচ্ছি সেটি হচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বর্তমান যুগের একটি বাস্তবতা, এ প্লাটফর্ম ব্যবহার করে সেখানে বিনোদন থেকে শুরু করে নানা কিছু স্ট্রিমিং হচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখতে পেয়েছি এ নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকার সঠিকভাবে ট্যাক্স পাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, যারা সার্ভিস প্রোভাইডার তারা বিটিআরসির কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়েছে একটি, কিন্তু তারা অন্য ব্যবসাও করছে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এ নিয়ে ইতোমধ্যে গ্রামীণ ও রবির কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিলাম, কোন লাইসেন্সের বলে তারা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে অন্যদের কাছ থেকে কনটেন্ট নিয়ে লাইভ স্ট্রিমিং করছে। তারা কোন ধরনের অনুমতি নিয়ে এটা করছে?’

‘গ্রামীণফোন আমাদের একটি উত্তর দিয়েছে, সেখানে সেই ব্যাখ্যা সঠিকভাবে নেই। এই বিষয়গুলোকে ট্যাক্সেশনের আওতায় আনা দরকার।’

একই সঙ্গে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের নানা কনটেন্ট নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, এগুলো আনসেন্সরডভাবে সেখানে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, সেজন্য আজকে আমরা একটি সমন্বিত সভা করে এগুলোকে একটি নিয়মনীতির মধ্যে আনার লক্ষ্যে আমরা এ সভা আহ্বান করেছি।

‘এটি একটা ক্রমবর্ধমান ক্ষেত্র, এখানে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে। ওটিটি প্লাটফর্মে ২ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু সরকার সেখান থেকে কোনো ট্যাক্স পাচ্ছে না।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্যগুলো ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা কোম্পানি যারা সার্ভিস প্রোভাইডার তাদের কাছে চলে যাচ্ছে। নেটফ্লিক্সের কাছে যাচ্ছে, ইউটিউবের কাছে যাচ্ছে এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলে যাচ্ছে। এখান থেকে যেভাবে ট্যাক্স পাওয়ার কথা আমরা সেভাবে পাচ্ছি না।’

‘শুরুতে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এরকমই ছিল, অনেক দেশেই নিয়মনীতি প্রবর্তন করা হয়েছে।’

ভারতে ফেসবুক কোম্পানি হিসেবে রেজিস্টার্ড হয়েছে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, যদিও বাংলাদেশে এখনো হয়নি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ক্রমাগত প্রচেষ্টার প্রেক্ষিতে তারা এখানে একটি অফিস খোলা ও এজেন্ট নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু তারা এখনও কোম্পানি করেনি।

তিনি বলেন, ‘এ সব বিষয় একটি নিয়মনীতির মধ্যে আনা প্রয়োজন। এটি এমন একটি মাধ্যম যে মাধ্যমকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রত্যেকটি মানুষের কাছে চলে যাচ্ছে। মানুষ এ মাধ্যমটি এখন বেশি ব্যবহার করছে।’

‘এই মাধ্যমটি ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজ বিনির্মাণের যেমন সুযোগ আছে, সমাজকে অস্থিতিশীল করারও সুযোগ আছে।’

তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যারা নিয়মনীতি না মেনে, সরকারের কোনো বৈধ অনুমতি না নিয়ে, এখানে ব্যবসা করছে তাদের ট্যাক্সের আওতায় আনা প্রয়োজন। কেউ যদি অনুমতি না নিয়ে এতদিন ধরে ব্যবসা করে থাকে, সেজন্য তাদের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে সেগুলো আজকে আমরা আলোচনা করব।’

সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান যুক্ত ছিলেন।

এছাড়া সভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব নূর-উর-রহমান, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক, বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস